চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

বেসরকারি ব্যাংকিং জগতের সফল প্রদর্শক আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু

ড. ফরাসউদ্দিন

৪ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:১৭ পূর্বাহ্ণ

সফল ব্যবসায়ী, সফল উদ্যোক্তা, সংগঠক, আদর্শ পিতা, বর্ষীয়ান এবং অনুকরণীয় রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিদীপ্ত চৌকস সাংসদ, দেশ্রপ্রেমিক, ভদ্র, বিনয়ী, সম্ভ্রান্ত এসব বিশ্লেষণের সমন্বয় হচ্ছেন আখতারুজ্জামান বাবু। তার জীবনী বিশ্লেষণ করলে হয়তো লেখাই শেষ করা যাবে না। তিনি একাধারে একজন রাজনীতিবিদ, সফল ব্যবসায়ী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। যার জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণাও হতে পারে।

একজন ক্ষণজš§া মহাপুরুষ আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। তিনি চট্টগ্রামের খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ। অসাধারণ এক ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন আখতারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি ছিলেন, জন্মগতভাবেই বনেদী পরিবারের সন্তান। কিন্তু কোন ধরনের লোভ-লালসা, সম্পদের মোহ কখনই তাকে আকৃষ্ট করেনি। সারাজীবন কাজ করেছেন দেশের জন্য, মানুষের কল্যাণে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির কল্যাণে অসামান্য অবদান রেখেছেন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে। দেশের বেসরকারি ব্যাংকিং জগতের সফল পথপ্রদর্শক।

আখতারুজ্জামান চৌধুরী কেবল রাজনীতিবিদই নয়, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্পায়নের মাধ্যমেও দেশের মাটি ও মানুষের জন্য কাজ করেছেন। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেশের বেকারত্ব হ্রাসে সহায়তা করেছেন। দেশের জাতীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন সফল এই ব্যবসায়ী। সাধারণ মানুষ, ব্যাংক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী সবার মাঝেই তিনি অত্যন্ত সজ্জন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রখর মেধাবী আর বুদ্ধিদীপ্ত একজন মানুষ ছিলেন আখতারুজ্জামান চৌধুরী ।

তিনি ছিলেন, ব্যবসায়ীদের জন্য অনুকরণীয় জীবন আদর্শ। আর ব্যক্তি আখতারুজ্জামান চৌধুরী ছিলেন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। নির্লোভ, তার মাঝে কখনই কোন অহংকারবোধ আমার চোখে পড়েনি। ব্যক্তি আখতারুজ্জামান রাজনীতির মাঠে আওয়ামীলীগ করলেও অন্য সব দলের শীর্ষ নেতাদেরও সঙ্গে ছিল তার অত্যন্ত হৃদ্যতা এবং সখ্যতা। শুধু তাই নয় ব্যবসায়ী সমাজের কাছে তিনি ছিলেন, একজন আদর্শ ব্যবসায়ী। ব্যাংক উদ্যোক্তাদের কাছে তিনি ছিলেন পথ প্রদর্শকের মতো।

১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন। এমন কি বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহেনার সাথেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যোগাযোগ রক্ষা করেন। পরবর্তীতে দল পুনর্গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যা দেশের আওয়ামীলীগের রাজনীতির ইতিহাসে চির অমর থাকবে।

আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি কারাবরণ করেন।

আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু একজন সফল ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তা ছিলেন। স্বাধীনতার পূর্বে তিনি বাটালি রোডে রয়েল ইন্ডাস্ট্রি নামে একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে তিনি আসিফ স্টিল মিল, জাভেদ স্টিল মিল, আসিফ সিনথেটিক, প্যান আম বনস্পতি, আফরোজা অয়েল মিল, বেঙ্গল সিনথেটিক প্রোডাক্ট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। ভ্যানগার্ড স্টিল মিল, সিনথেটিক রেজিন প্রোডাক্ট ক্রয় করে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের প্রথম দু’দশকে জামান শিল্পগোষ্ঠীর গোড়াপত্তন করেন। তিনি বিদেশি মালিকানাধীন আরামিট মিল ক্রয় করে সেটিকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করান। তিনি দু’দফায় চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৮৮ সালে তিনি দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠক এফবিসিসিআইর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ওআইসিভুক্ত দেশসমূহের চেম্বারের প্রেসিডেন্ট হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি ৭৭ জাতি গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি যিনি এই মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

সংসদ সদস্য হিসেবেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। নিজ এলাকা থেকে তিনি পাঁচ বার সাংসদ নির্বাচিত হন বিপুল ভোটে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এলাকার জনগণের কাছে ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় জননেতা। রাজনীতি করতেন মাটি আর মানুষের সঙ্গে। ফলে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে তার ছিল চমৎকার সেতুবন্ধন। সারাজীবন কাজ করেছেন জনকল্যাণে। দেশের কল্যাণে। আর ব্যবসা করেছেন দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে। অপরিসীম অবদান রেখে গেছে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে। ফলে তার প্রতিষ্ঠা করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান টিকে থাকবে আরো দীর্ঘদিন। যা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে চিরদিন।
আখতারুজ্জামান চৌধুরী ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ সব ধরনের সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তিনি। যার কারণে এ দেশের মানুষের কাছেও তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

ড. ফরাসউদ্দিন : সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট