(১৯১৫-১৯৯৭) : জন্ম ভবানীপুর, কলকাতা, ২২ আগস্ট ১৯১৫। অভিনেতা, নাট্যজন। পিতা শরৎকুমার বসু ও মাতা শতদলবাসিনী দেবী। শম্ভু মিত্রের পৈত্রিক নিবাস হুগলি জেলার কলাছাড়া গ্রামে।
বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলে শিক্ষা সমাপ্ত করে ভর্তি হন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। কলেজের পাঠ সমাপ্ত করেননি। ১৯৩৯-এ রংমহলে যোগদানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক নাট্যমঞ্চে তাঁর পদার্পণ। পরে যোগ দিয়েছিলেন মিনার্ভায়। নাট্যনিকেতনে কালিন্দী নাটকে অভিনয়সূত্রে সে যুগের কিংবদন্তি নাট্যব্যক্তিত্ব শিশিরকুমার ভাদুড়ীর সঙ্গে আলাপ হয়। পরবর্তীকালে শিশিরকুমার ভাদুড়ীর প্রযোজনায় আলমগীর নাটকে অভিনয়ও করেছিলেন। কিন্তু এই সময় থেকেই শিশিরকুমারের থেকে আলাদা সম্পূর্ণ নিজস্ব এক নাট্যঘরানা তৈরিতে উদ্যোগী হন শম্ভু মিত্র। ১৯৪২-এ ফ্যাসিবিরোধী সংঘের সঙ্গে পরিচিত হন শম্ভু মিত্র। ১৯৪৩-এ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক পি.সি যোশির অ নুপ্রেরণায় যোগ দেন ভারতীয় গণনাট্য সংঘে। ১৯৪৫-এর ১০ ডিসেম্বর গণনাট্য সংঘে কাজ করার সময়ই প্রখ্যাত মঞ্চাভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্রের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ। কন্যা শাঁওলী মিত্রও মঞ্চাভিনেত্রী। ১৯৪৮-এ মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গড়ে তোলেন নাট্যসংস্থা বহুরূপী।
১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বহুরূপীর প্রযোজনীয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সফোক্লিস, হেনরিক ইবসেন, তুলসী লাহিড়ী এবং অন্যান্য বিশিষ্ট নাট্যকারের রচনা তাঁর পরিচালনায় মঞ্চস্থ হয়।
শাঁওলি মিত্রের নাট্যসংস্থা পঞ্চম বৈদিকের সঙ্গে আমৃত্যু যুক্ত ছিলেন শম্ভু মিত্র। তাঁর পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য নাটকগুলি হল নবান্ন,দশচক্র, রক্তকবরী,রাজা অয়দিপাউস ইত্যাদি। রচিত নাটকের মধ্যে চাঁদ বণিকের পালা সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য। ১৯৭০-এ একটি আর্ট কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্দেশ্য গঠন করেন বঙ্গীয় নাট্যমঞ্চ সমিতি। ১৯৭৮ এর ১৬জুন অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে দশচক্র নাটকে অভিনয় করেন।
বহুরূপীর প্রযোজনায় এটিই তাঁর শেষ নাটক। ১৯৭৯ এ প্রায় দৃষ্টিহীন অবস্থায় নান্দীকার প্রযোজিত মুদ্রারাক্ষস নাটকে চণক্যের ভূমিকায় তাঁর অভিনয় বিশেষ সাড়া ফেলছিল। ১৯৮০-৮১-এ ফ্রিৎজ বেনেভিৎজের পরিচালনায় ক্যালকাটা রিপোর্টারির প্রযোজনায় গ্যালিলিওর জীবন নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৮৩-এ নিজের প ্রযোজনায় কন্যা শাঁওলী মিত্র পরিচালিত ‘নাথবতী অনাথবৎ’ নাটকে কন্যার সঙ্গে অভিনয় করেন শম্ভু মিত্র। শাঁওলী মিত্রের পরবর্তী নাটক ‘কথা অমৃতসমান’-এর সঙ্গেও যুক্তি ছিলেন শম্ভু মিত্র। ১৯৮৫-এর সেপ্টেম্বর মাসে রবীন্দ্রসদনে ‘পঞ্চম বৈদিকে’র প্রযোজনায় ও তাঁর পরিচালনায় দশচক্র নাটকটির পরপর ছয়টি অভিনয় পাঁচ দিনে মঞ্চস্থ হয়। অভিনেতারূপে এরপর আর মঞ্চে অবতীর্ণ হননি।
তিনি ১৯৭৬-এর ম্যাগসেসে পুরস্কার ও ভারত সরকারের পদ্মভূষণ সম্মান লাভ করেন। ১৯৭৭-এ এক বছরের জন্য বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং ফেলো। ১৯৮৩-এ বিশ্বভারতী তাঁকে দেশিকোত্তম উপাধিতে সম্মানিত করে। যাদবপুর ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি লিট উপাধিতে ভূষিত। মৃত্যু. কলকাতা, ১৯ মে ১৯৯৭।