চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫

তিন দশক পর নতুন এলপিজি প্ল্যান্ট নির্মাণ করছে বিপিসি

তিন দশক পর নতুন এলপিজি প্ল্যান্ট নির্মাণ করছে বিপিসি

মিজানুর রহমান

২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ

দেশে ক্রমবর্ধমান বোতলজাত এলপি গ্যাসের চাহিদা মেটাতে তিন দশক পর নতুন প্ল্যান্ট তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। নগরের দক্ষিণ কাট্টলী এলাকায় এই প্ল্যান্ট বানাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অব্যবহৃত ৫০ একর খালি জমি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সেই জমিতেই বার্ষিক ৪০ হাজার মেট্রিকটন ক্ষমতাসম্পন্ন আমদানি নির্ভর একটি এলপিজি প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হবে। দেশে এখন দুটি সরকারি এলপিজি স্টোরেজ ও বটলিং প্লান্ট রয়েছে।

 

এরমধ্যে নগরের উত্তর পতেঙ্গায় ‘চট্টগ্রাম এলপিজি স্টোরেজ ও বটলিং প্ল্যান্ট’ নির্মাণ করা হয় ১৯৭৭-৭৮ সালে। এরপর ১৯৯৫ সালে সিলেটের কৈলাশটিলায় আরো একটি এলপিজি স্টোরেজ, বটলিং ও ডিস্ট্রিবিউশন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। দাম কম হওয়ায় বাজারে সরকারি এলপিজির বিপুল চাহিদা থাকলেও এরপর আর কোনো এলপিজি প্ল্যান্ট নির্মিত হয়নি। বিপিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে বোতলজাত এলপি গ্যাসের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৭ লাখ মেট্রিকটন। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে এই চাহিদা ৩০ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

কারণ দেশে পাইপলাইনের মাধ্যমে আবাসিকে গ্যাসের সংযোগ বন্ধ থাকায় এলপিজির চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। পাশাপাশি শিল্প, বাণিজ্য এবং অটোমোবাইল খাতেও সংযোগ সীমিত থাকায় এলপিজির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু বিপুল এই চাহিদার বিপরীতে সরকারিভাবে এলপিজি সরবরাহের সক্ষমতার পরিমাণ মাত্র ৩৩ হাজার মেট্রিকটন। এরমধ্যে এলপি গ্যাস লিমিটেডের চট্টগ্রাম প্ল্যান্ট থেকে ২৫ হাজার এবং সিলেটের কৈলাশটিলা প্ল্যান্ট থেকে ৮ হাজার মেট্রিকটন এলপিজি সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে। চাহিদার বাকি প্রায় ৯৯ শতাংশ এলপিজি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরবরাহ করছে। ফলে এই খাতে সরকারি অংশীদারিত্ব নেই বললেই চলে।

 

এ প্রেক্ষাপটে দেশের অভ্যন্তরে চট্টগ্রাম নগরের দক্ষিণ কাট্টলী এলাকায় আমদানি নির্ভর এলপিজি প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বিপিসি। বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন প্ল্যান্ট নির্মাণ করা গেলে সরকারিভাবে এলপিজির অংশীদারিত্ব বাড়বে। বাজারে তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে এলপিজি সিলিন্ডার সরবরাহ করা সম্ভব হবে। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা আরো নিশ্চিত হবে। সূত্র জানায়- নতুন এলপিজি প্ল্যান্ট বানাতে জমি চেয়ে সম্প্রতি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয় সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

 

বিভাগের উপ-সচিব ড. শাহাদাৎ হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে ৫০ একর জমি বিপিসির অনুকূলে বাজার বা মৌজা মূল্যে বরাদ্দ প্রদানের জন্য পাউবোর অনাপত্তি প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়। চিঠিতে বলা হয়- চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানার দক্ষিণ কাট্টলী মৌজায় অধিগ্রহণমূলে পাউবোর মালিকানাধীন দুটি দাগে ২৫ একর ও ৩৩ দশমিক ৫১ একর ভূমি অব্যবহৃত রয়েছে। তবে পাউবো যে উদ্দেশ্যে ভূমি অধিগ্রহণ করেছিল-সে উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে না। কাজেই দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা, পরিবেশ বান্ধব সাশ্রয়ী জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য পাউবোর অধিগ্রহণকৃত এসব ভূমি থেকে ৫০ একর ভূমি বিপিসির অনুকূলে বরাদ্দ প্রদানের বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ করছি।

 

চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষা পাউবোর এই জমি বরাদ্দ চাওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়- দেশের বন্দর এলাকাসমূহে এলপিজি প্ল্যান্ট স্থাপন করা হলে অপেক্ষাকৃত স্বল্প পরিবহন খরচে রেফ্রিজারেটেড এলপিজি ও প্রেসারাইজড এলপিজি আমদানি করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে বিপিসির আমদানি নির্ভর এলপিজি স্টোরেজ ও বটলিং প্লান্ট নির্মাণপূর্বক বাজারজাত করার কার্যক্রম গ্রহণ করা সহজ হবে। তবে এলপিজি প্ল্যান্ট নির্মাণে জমি চেয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের দেওয়া চিঠির বিষয়ে পাউবো এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাদী। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। তারা যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, আমরা সেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এ বিষয়ে বিপিসির সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন