
চট্টগ্রাম নগরীর ২০টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব স্থানে ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রোড ক্র্যাশে অন্তত ৬৬২ জন নিহত হয়েছেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) যৌথভাবে প্রকাশিত চট্টগ্রাম সিটি রোড সেফটি রিপোর্ট ২০২৫-এ এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার দামপাড়া পুলিশ লাইনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন) মো. হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় ।
প্রতিবেদনটিতে ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে চট্টগ্রাম শহরের বর্তমান ও অতীত সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। এতে দুর্ঘটনার ধরন, প্রবণতা এবং উচ্চঝুঁকিপূর্ণ স্থানের মানচিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে রোড ক্র্যাশে মৃত্যুর হার ২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রাণহানির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ার পর ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এটি প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে যা নগরীর সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে তোলে। চট্টগ্রাম নগরীর সড়কে ২০১৭-২০২৪ সময়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ছিলেন পথচারীরা। এই সময়ে পথচারী নিহত হয়েছেন ৩৬৩ জন, যা মোট নিহতের অর্ধেকেরও বেশি। আরও উদ্বেগজনক হলো এই সময়ে পথচারী মৃত্যুর সংখ্যা ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। পথচারীদের পর সবচেয়ে ঝুঁকিতে ছিলেন দুই ও তিন চাকার যানবাহনের যাত্রী ও চালকরা; নিহত হয়েছেন ১৯৫ জন।
রোড ক্র্যাশ প্রতিরোধে প্রতিবেদনটিতে ২০টি উচ্চঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বড়পোল মোড়, অলংকার মোড়, সিইপিজেড গেট, সিটি গেট, নিউমার্কেট বাসস্টপ, কালামিয়া বাজার বাসস্টপ এবং সাগরিকা গোলচত্বর। এসব স্থানগুলোতে দ্রুত বিজ্ঞানভিত্তিক যাচাইবাছাইয়ের মাধ্যমে ত্রুটি চিহ্নিত করে পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তথ্যভিত্তিক ও বিজ্ঞানসম্মত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে শহরের সড়কে প্রাণহানি প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিশেষ করে পথচারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফুটপাত প্রশস্তকরণ, উঁচু জেব্রা ক্রসিং নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন ফুটপাত নিশ্চিতকরণ, স্পিড হাম্প স্থাপন এবং পথচারী দ্বীপ নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনা কমাতে মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকা ২০২৪ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ওয়াহিদুল হক চৌধুরী এবং চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান সোহেল। এছাড়া প্রতিবেদনের মূল তথ্য উপস্থাপন করেন কাজী সাইফুন নেওয়াজ, বিআইজিআরএস এনফোর্সমেন্ট কোঅর্ডিনেটর কাজী হেলাল উদ্দিনসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, একাডেমিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
পূর্বকোণ/রাজীব/পারভেজ