
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়েও ‘চাঁদাবাজি’বন্ধ করেনি সাইফুল ইসলাম ওরফে বার্মা সাইফুল। তার বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে ২৭টি। প্রকাশ্যে ঘুরলেও রহস্যজনক কারণে তাকে গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ।
নগরীর বায়েজিদ থানায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে দুটি মামলার। কিন্ত থেমে নেই তার অপরাধ। এবার চাঁদা না পাওয়ায় এক ব্যবসায়ীর এস্কেভেটর নিয়ে যায় সাইফুল ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী খুলশী থানায় সাইফুল, তার দুই ভাই, প্রধান সহযোগী শামসুসহ সাত সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ পতেঙ্গা এলাকা থেকে এস্কেভেটরটি উদ্ধার করেছে। তবে মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পুলিশ জানিয়েছে, বার্মা সাইফুলসহ মামলার আসামিদের তারা খুঁজছে কিন্তু পায়নি। বার্মা সাইফুলকে পুলিশ না পাওয়ার কথা বললেও গত সোমবার অক্সিজেন এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সাইফুল ও তার সহযোগীদের কম্বল বিতরণ করতে দেখা যায়।
এদিকে থানায় মামলা দায়েরের পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ী মো. হাছান। তাকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়া হচ্ছে। মামলার আসামিরা হল- সাইফুল ইসলাম ওরফে বার্মা সাইফুল, তার ভাই ফাহিম ও শাহিন, সহযোগী ১২ মামলার আসামি মো. শামসু, মো. সেকান্দর, মাইকেল বাবু, মো. আরিফ, শাহাদাত, মো. বাপ্পী, ও মনা।
ব্যবসায়ী হাছান জানান, তার বাড়ি সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর আলী নগরে। দুই মাস আগে জনৈক টিপু কুমার নাথের কাছ থেকে নয় লাখ টাকায় একটি এস্কেভেটর কিনেন। কেনার পর গাড়িটি পলিটেকনিক্যাল এলাকার মোরশেদ আলমের গ্যারেজে রাখেন। এস্কেভেটর কেনার পর থেকে সাইফুল ও তার সহযোগীরা ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। তারা বলে- এলাকায় গাড়ি দিয়ে ব্যবসা করতে হলে তাদেরকে টাকা দিতে হবে। এর মধ্যে তাদেরকে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদাও দিয়েছি। বাকি টাকা তারা সাতদিনের মধ্যে দেয়ার জন্য চাপ দেয়।
হাছান জানান, গত ১৮ নভেম্বর বিকেল চারটার সময় বাসায় ফেরার পথে জঙ্গল সলিমপুর মসজিদের সামনে পৌঁছালে সাইফুল, তার সহযোগীরা এবার চারলাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। যদি চাঁদা না দিই তারা গাড়ি নিয়ে যাবার হুমকি দেয়। গত ১৯ নভেম্বর রাত একটার সময় গ্যারেজ মালিক মোরশেদ আলম ফোন করে জানান, বার্মা সাইফুল ও তার লোকজন গ্যারেজ থেকে এস্কেভেটরটি চট্টমেট্রো ১১-৪৬২৭ নম্বরের একটি লোভেটে (এস্কেভেটর বহন করার গাড়ি) করে নিয়ে গেছে। ঘটনার পর সাইফুলের সাথে যোগাযোগ করলে সে জানায়- দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দিলে এস্কেভেটর ফেরত দেবে না।
হাছান বলেন, এ ঘটনায় খুলশী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে তারা এস্কেভেটরটি উদ্ধার করেছে। তবে মামলার কোন আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। মামলা দায়েরের পর থেকে সাইফুল ও তার অনুসারীরা তাকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলশী থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) জাকির হোসেন জানান, মামলা দায়েরের পর পরই পতেঙ্গা এলাকা থেকে এস্কেভেটরটি উদ্ধার করা হয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, একের পর এক মামলায় আসামি হলেও সাইফুল ও তার সহযোগীরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডের কারণে সাইফুলকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করলেও দলের নাম ভাঙিয়ে সে এখনো নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। পুলিশ তাকে ধরতে তেমন আগ্রহী নয়।
গত বছরের ১২ অক্টোবর সাইফুল অনুসারীদের নিয়ে এক পুলিশ সদস্যকে আহত ও পুলিশের গাড়ি ভাংচুর করে। ওই ঘটনায় বায়েজিদ থানায় দায়ের হওয়া দ্রæত বিচার আইনে সাইফুল ও তার ভাই সবুজকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়। ওইদিন সাইফুল ও শান্তিনগর এলাকার ঝন্টু ও কাশেম গ্রæপের মধ্যে এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ হয়। পুলিশের উপর হামলা ও পুলিশের গাড়ি ভাংচুরের অপরাধে মামলাটি দায়ের করেন বায়েজিদ থানার এসআই নাছির উদ্দিন। সাইফুল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নগর শাখার সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক ও সবুজ পাঁচলাইশ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিল। সংঘর্ষের ঘটনার পরদিন দুই ভাইকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বড় ভাই সবুজ ও সাইফুলকে অনুসরণ করে পিছিয়ে নেই ছোট ভাই ফাহিম আর শাহিন। নগরীর বায়েজিদ ও পাঁচলাইশ থানায় সবুজের বিরুদ্ধে ৩৩টি, সাইফুলের বিরুদ্ধে ২৭টি ও ফাহিমের বিরুদ্ধে নয়টি মামলা রয়েছে।