পুরাতন বছরের জরা দূর করে নতুনের কেতন উড়িয়ে আবার এলো পহেলা বৈশাখ। বিশ্বের সব প্রান্তের সকল বাঙালি নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নেবেন আজ; ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’ এমন কল্যাণ প্রার্থনা দিয়েই শুরু করবেন বাংলা নতুন বছরের প্রথম ভোর।
এবারই প্রথম সরকারিভাবে দেশে বাঙালি, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা এবং গারোসহ সবাইকে নিয়ে নববর্ষ উপলক্ষে অন্তর্ভুক্তিমূলক আনন্দ-উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। তাই এবারের বাংলা বর্ষবরণ দেশের সকল নাগরিক, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের কাছে অন্যরকম এক উৎসবের আবহ তৈরি করেছে।
পহেলা বৈশাখ উদযাপনে চট্টগ্রামে আয়োজনের কোন কমতি রাখা হয়নি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে।
আজ সোমবার সকাল ৯টার দিকে চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে বের হবে আনন্দ শোভাযাত্রা। চট্টেশ্বরী মোড়-আলমাস মোড়-কাজীর দেউড়ি মোড়-এস এস খালেদ রোড প্রেস ক্লাব হয়ে পুনরায় চারুকলা ইনস্টিটিউটে এই শোভাযাত্রা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
নগরীর সিআরবির শিরীষতলায় নববর্ষ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বর্ষবরণের বর্ণিল সব অনুষ্ঠান চলবে শতবছরের ঐতিহ্যবাহী এই শিরীষতলায়।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। পৃথক বাণীতে তারা দেশবাসীকে আনন্দের সাথে নববর্ষ উদযাপনের আহ্বান জানান এবং আন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
কৃষি উৎসব বা রাজস্ব আদায়ের দিন হিসেবে বৈশাখকে সামনে এনে বাংলা সন প্রবর্তনের পর বাংলার অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনকেও প্রভাবিত করে এটি। পাকিস্তান শাসনামলে বর্ষবরণ উৎসব হয়ে ওঠে বাঙালির আত্মপরিচয় টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার। তাই ১৪৩২ বঙ্গাব্দের প্রথমদিন উদযাপনে উৎসবের যে বাঁশি আজ দেশের নগর বা গ্রামীণ প্রান্তরে বাজবে- তার সুর নিঃসরিত হবে অমলিন বাঙালির প্রাণ থেকে। মিশে যাবে হাজার বছর ধরে এই বাংলায় আমাদের প্রপিতামহদের বাজানো বাঁশির সুরে।
বাঙালির জীবনে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ আসে রঙ আর আলোর উচ্ছ্বাস নিয়ে। এদিন বিগত বছরের গ্লানি, পুরাতন স্মৃতি, দুঃখ-বেদনা, অসুন্দর ও অশুভকে ভুলে গিয়ে নতুন প্রত্যয়ে, নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পায় বাঙালি জাতি।
কবিগুরুর ভাষায়, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো। তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে, বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি, অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক। মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’
পূর্বকোণ/জেইউ