চট্টগ্রাম রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫

সর্বশেষ:

পিচঢালার অস্তিত্ব নেই চট্টগ্রাম নগরীর চাঁন মিয়া সড়কে

নিজস্ব প্রতিবেদক

৭ এপ্রিল, ২০২৫ | ১২:০৫ অপরাহ্ণ

কোথাও কাদা মাটি, কোথাও ময়লার স্তূপ। এসব মাড়িয়ে একেকটি গাড়ি যাচ্ছে- পেছনে ধোঁয়ার মতো উড়ছে বালি। ধুলাবালি থেকে বাঁচতে পথচারীদের কেউ কাপড় দিয়ে নাক ঢাকছেন; বাসিন্দাদের কেউ বালতি-পাইপ দিয়ে পানি ছিটাচ্ছেন। নিস্তার পাচ্ছেন না গাড়িতে যারা চড়ছেন তারাও! সড়কজুড়ে থাকা খানাখন্দের ঝাঁকুনিতে হাড়গোড় এক হওয়ার অবস্থা তাদের।

 

বেহাল সড়কের এই বর্ণনা গ্রামীণ কোনো জনপদের নয়; নগরীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র বহদ্দারহাট থেকে অনন্যা আবাসিকের দিকে যাওয়া হাজি চাঁন মিয়া সড়কের। ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কে ৫ বছরের বেশি সময় ধরে কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। উল্টো সড়ক সংলগ্ন খালগুলোতে সিডিএ’র জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন কাজ চলায় পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হয়েছে।

 

সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি ৫ বছর:

 

চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশের কালারপুল, খতিবের হাট, হাদু মাঝির পাড়া, অদুর পাড়া, বানিয়ারপুল, হাজিরপুল, মাইজপাড়া থেকে অনন্যা পর্যন্ত কয়েক লাখ মানুষ যাতায়াত করেন চাঁন মিয়া সড়ক দিয়ে। এছাড়া চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগী, মেডিকেল ও নার্সিং কলেজ, দারুল মায়া’রিফ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন।

 

স্থানীয়রা জানান- আ জ ম নাছির উদ্দীন সিটি মেয়র থাকাকালীন সর্বশেষ চাঁন মিয়া সড়কের কিছু অংশে সংস্কার করা হয়। এরপর চট্টগ্রাম ওয়াসা পাইপলাইন বসানোর কাজ করতে সড়কটির একাধিক স্থানে কাটে। এরমধ্যেই সড়ক সংলগ্ন চাক্তাই খাল, মির্জা খাল, উত্তরা খাল ও ত্রিপুরা খালে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শুরু হলে পাকা সড়কটি মাটির সড়কে পরিণত হয়।

 

চাঁন মিয়া সড়কের খতিবের হাট এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন কফিল উদ্দিন। জানতে চাইলে তিনি পূর্বকোণকে বলেন, শহরের নাগরিক হিসেবে সিটি কর্পোরেশনকে সব ধরনের ট্যাক্স দিই। কিন্তু তারা আমাদের নাগরিক মনে করে না। শহরের ভেতর কয়েক লাখ লোক যাতায়াতের একটি সড়ক ৫ বছর ধরে সংস্কারহীন; ভাবা যায়! পুরো সড়কে দেখেন একটি ইটও নেই!

 

ভোগান্তি বেশি রোগী-শিশুদের:

 

নগরীর পাঁচটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের একটি শমসের পাড়ায়। মোহরা, কালুরঘাট, চান্দগাঁও, অক্সিজেন, পাঁচলাইশসহ শহরের এক প্রান্তের বৃহৎ জনগোষ্ঠী চিকিৎসার জন্য আসেন শমসের পাড়ার চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। চাঁন মিয়া সড়ক দিয়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে রোগী ও তাদের স্বজনদের অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

 

চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ডা. মো. মুসলিম উদ্দিন সবুজ পূর্বকোণকে বলেন, আমাদের আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে ৫০০-৭০০ এবং ইনডোরে ৩০০ রোগী থাকেন। প্রতিদিন ২০টিরও বেশি নবজাতকের জন্ম হয়। চাঁন মিয়া সড়ক দিয়ে হাসপাতালে আসতে এসব রোগী ও তাদের স্বজন যে পরিমাণ কষ্ট পান তা বলার মতো নয়।

 

বেহাল সড়কের ধুলাবালিতে শিশুরাও নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানালেন চাঁন মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার বাসিন্দা ডা. আরফাত হোসেন। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, উন্নয়নের ‘প্রসব বেদনায়’ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে এলাকার শিশুরা। বড়রা মুখে মাস্ক পরলেও শিশুদের পরানো যায় না। নাকে-চোখে বালি-জীবাণু ঢুকে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা।

 

দ্রুত সংস্কার চান এলাকার মানুষ:

 

চাঁন মিয়া সড়ক সংলগ্ন চাক্তাই খাল, মির্জা খাল, উত্তরা খাল ও ত্রিপুরা খালে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শুরু হয় চার বছর আগে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই সড়ক সংস্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে স্থানীয়রা বলছেন, যেসব এলাকায় খালের কাজ শেষ- সেখানে সড়ক সংস্কার এখনই শুরু করা সম্ভব। দেরিতে সড়ক সংস্কার কেবল ভোগান্তিই বাড়াবে।

 

হাজিরপুল এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের পূর্বকোণকে জানান, ভোগান্তি হলেও সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজটি হওয়ায় আমরা খুশি। অনন্যা থেকে হাজিরপুল পর্যন্ত খালের কাজ শেষ। বর্ষার আগেই এই জায়গায় সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। হাজিরপুল থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত কাজ শেষ হতে আরও সময় লাগবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা- কেবল ভোগান্তিই বাড়াবে।

 

দ্রুত সংস্কারের আশ্বাস মেয়রের:

 

চাঁন মিয়া সড়ক দ্রুত সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রাম শহরের ভেতরে কোনো সড়ক সংস্কারহীন থাকবে না। সিডিএর জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই চাঁন মিয়া সড়ক দ্রæত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে। এলাকাবাসীর দুর্ভোগ আর থাকবে না।

 

ডিসেম্বরেই মিলবে মুক্তি:

 

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফেরদৌস আহমেদ বলেন, প্রায় ৪ কিলোমিটারজুড়ে খালের পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল, ব্রিজ, কালভার্ট ও ড্রেনের কাজ চলছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। এরপর খাল সংলগ্ন সড়ক সংস্কার করা হবে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট