লোহাগাড়ায় গত বুধবার সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১১ জন। যা সারাদেশের মানুষের হৃদয় নাড়া দিয়েছে। পরিবারের সব সদস্যকে হারানো ছোট্ট শিশু আরাধ্যের ছবি দেখে অশ্রু ঝরেছে সাধারণ মানুষের। দুর্ঘটনার পর শিশু আরাধ্যকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানী ঢাকায়। সেখানে তার অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা রয়েছে।
এতো গেলো আরাধ্যের কথা। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অল্প সময়ের ব্যবধানে দুই-দুইবার বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে লাশের সারির কথা হয়তো ভোলার নয়। যা নাড়া দিয়েছিল গোটা দেশেই। অনেকেই মারা গেছেন শুধুমাত্র হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটে যাওয়ার সময়। অথচ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালেই আছে বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। আছেন দক্ষ চিকিৎসকও। কিন্তু যে পরিমাণ রোগী আর অবকাঠামোর সংকট, তাতে অনেকটাই যুদ্ধ করে রোগীদের সেবা দিতে হয় চিকিৎসকদের। পোড়া রোগী, সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু রোগীর মতো অন্যান্য রোগের চিকিৎসায় সাফল্য আছে চট্টগ্রামের চিকিৎসকদের। কিন্তু শুধুমাত্র বিশেষায়িত কেন্দ্র, অবকাঠামো আর আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবসহ নানা কারণে পিছিয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কখনও ভূমি জটিলতা, কখনও অর্থ সংকট, কখনও সিদ্ধান্তহীনতা কিংবা লালফিতার দৌরাত্ম্যসহ নানা কারণে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে গড়ে উঠছে না কোন বিশেষায়িত হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্র। অথচ রাজধানী ঢাকায় অন্তত ১৪টি বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে। এমন বাস্তবতায় বৃহত্তর চট্টগ্রামে পরিকল্পিতভাবে বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে তোলার দাবি সংশ্লিষ্টদের।
জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামে চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতার পাশাপাশি অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পুরো চট্টগ্রামের মানুষকে চমেক হাসপাতালের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এটি কোনভাবেই উচিত নয়। সত্যিকারভাবে চট্টগ্রামে কোন বিশেষায়িত হাসপাতাল নেই। সবকিছু ঢাকাতেই। চট্টগ্রামে বিশেষায়িত স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার।
ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান এই চট্টগ্রামের। এখানে দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পকারখানাগুলোর অবস্থান। আমদানি-রপ্তানির হাব এ চট্টগ্রাম। সুতরাং চট্টগ্রামকে কম গুরুত্ব দেয়া কোনভাবেই কাম্য নয়। সবকিছু এখনও ঢাকাকেন্দ্রিক। স্বাস্থ্যব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই সব বিষয় চিন্তা করে চট্টগ্রামে বিশেষায়িত স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলা সময়ের দাবি। কেননা চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যব্যবস্থা খুবই নাজুক।
পূর্বকোণ/ইব