চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পৌরকর বাবদ ১০০ কোটি টাকা পাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। রবিবার (৬ এপ্রিল) নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের চবক শাখার উপ-সচিব নজরুল ইসলাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ থেকে এতথ্য জানা যায়। চট্টগ্রাম বন্দরের এ পৌরকর নগরীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় আর্থিকভাবে সহজ করবে বলে মনে করছেন মেয়র।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের চবক শাখার উপ সচিব নজরুল ইসলাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রস্থ পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবমতে পৌরকর বাবদ চাহিত ১১৫ কোটি টাকার মধ্যে জয়েন্ট সার্ভে কমিটির রিপোর্টের সুপারিশের ভিত্তিতে কম/বেশি সমন্বয়ের শর্তে আপাতত ১০০ কোটি টাকা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে প্রদান করা যেতে পারে।
চসিক সূত্রে জানা যায়, পৌরকর নির্ধারণে ২০১৭ সালে পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়ন করে চসিক। এতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) কাছে প্রস্তাবিত পৌরকর ছিল ১৬০ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা। একই বছরের ডিসেম্বর মাসে পঞ্চবার্ষিকী করপুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম স্থগিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। যা ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর প্রত্যাহার করা হয়। এরপর চবককে পুনর্মূল্যায়নের আলোকে পৌরকর পরিশোধ করতে বলে চসিক। কিন্তু আপত্তি জানায় সংস্থাটি।
পরবর্তীতে ২০২১ সালের ১৪ জুলাই চসিক ও বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে বিষয়টি সুরাহা করতে বৈঠক হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীও। ওই বৈঠকে ৫০ কোটি টাকা পৌরকর চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু বন্দর পরিশোধ করে ৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ শতাংশ সারচার্জ মওকুফের সুবিধা নিয়ে পরিশোধ করে মাত্র সাড়ে ৪০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের ২৮ মার্চ অনুষ্ঠিত চসিকের সাধারণ সভায় তা অনুমোদন দেন তৎকালীন মেয়র রেজাউল।
সর্বশেষ ডা. শাহাদাত হোসেন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর নগর উন্নয়ন কার্যক্রমে গতি বাড়াতে চলতি অর্থবছর (২০২৪-২০২৫) থেকে ১৬০ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা পৌরকর আদায়ের সিদ্ধান্ত নেন। যা গত বছরের (২০২৪) ১৫ ডিসেম্বর চবক চেয়ারম্যানকে দাপ্তরিক পত্র দিয়ে জানিয়ে দেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। এতে চলতি অর্থবছরে বন্দরের পরিশোধিত অংক বাদ দিয়ে বাকি ১১৫ কোটি ১৬ লাখ টাকাও পরিশোধ করতে বলা হয়। কিন্তু ওই চিঠি দেয়ার পরও চবক বকেয়া পরিশোধ না করায় চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয় চসিক। ওইদিন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় চসিক প্রধান নির্বাহীর। এছাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে নৌপরিবহন সচিবকেও দাপ্তরিরক পত্র দেয় চসিক। এতে চসিকের প্রস্তাবিত পৌরকর পরিশোধে চবককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করতে বলা হয়।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সার্ভিস চার্জ হিসেবে বন্দরের কাছে তাদের আয়ের ১ শতাংশ অর্থ চেয়েছিলাম। এটা তাদের আইনের কারণে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই ১৬০ কোটি টাকার যে পৌরকর আমরা পাব সেটাই চেয়েছি। কিন্ত এতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না থাকায় বন্দর এ পৌরকর আমাদের দিতে পারেনি। যা গতকাল মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়।
মেয়র আরো বলেন, নগরীর সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও সেবার পরিধি সম্প্রসারণে যে আর্থিক সক্ষমতা প্রয়োজন সেক্ষেত্রে যথেষ্ট অপ্রতুলতা রয়েছে চসিকের। তাই বন্দর থেকে ন্যায্য পৌরকর পেলে নগরীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা সহজ হবে।
পূর্বকোণ/ইব