নগরীর জিইসির মোড় সেন্ট্রাল প্লাজার ছাদ ও দেয়ালে বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সাতটি বিলবোর্ড বসিয়েছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু ও হেফাজত নেতা মুহাম্মদ হাফিজ উল্লাহ আমির তিমুর।
নগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এসব বিলবোর্ডের অনুমোদন দেন। ছাদে বসানো এলইডি সাইন বক্সের আলোর কারণে ফ্লাইওভারে চলাচলরত যানবাহন চালকদের বিপাকে পড়তে হয়। নগর ট্রাফিক বিভাগ এসব এলইডি সাইন বক্স সরাতে সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দিয়েছিল ২০২৩ সালে।
জানতে চাইলে নগর ট্রাফিকের উত্তর জোনের এডিশনাল ডিআইজি (সদ্য বদলি হওয়া) জয়নাল আবেদীন জানান, সেন্ট্রাল প্লাজার ছাদে ও দেয়ালে স্থাপিত ডিজিটাল সাইনগুলো রাতের বেলায় আলোর কারণে চালকদের গাড়ি চালাতে সমস্যা হয়। ওগুলো সরাতে ট্রাফিকের পক্ষ থেকে সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দিয়েছিলাম। সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়রকেও বিষয়টি বলেছিলাম। কর্পোরেশনের প্রকৌশলীকে এনে দেখানো হয়েছিল। ঝুঁকিপূর্ণ ডিজিটাল সাইন সরানোর সুপারিশ ছাড়াও জিইসির মোড়ে থাকা তিনকোণা আইল্যান্ডটি ছোট করে গোলাকৃতি করার অনুরোধে করা হয়েছিল। কিন্তু কোনটাই বাস্তবায়িত হয়নি।
আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর গত ৪ ফেব্রুয়ারি সেন্ট্রাল প্লাজায় স্থাপন করা এসব বিলবোর্ডের অনুমোদন বাতিল করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। সাত দিনের মধ্যে বিলবোর্ডগুলো অপসারণের নির্দেশ দিলেও দুইমাসেও কার্যকর হয়নি সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশ। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিলবোর্ড স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান এডফ্রেমের স্বত্বাধিকারী আরশেদুল আলম বাচ্চু ও হাফিজ উল্লা তিমুর আত্মগোপনে থাকলেও থেমে নেই বিজ্ঞাপনের ব্যবসা।
অভিযোগ রয়েছে, ৫ আগস্টের পর বাচ্চু ও হাফিজ উল্লা আত্মগোপনে যাওয়ার পর যুবদল নেতা মো. শাহেদ ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রায়হান আলম সম্পৃক্ত হন এসব বিলবোর্ডের সাথে। তারা নির্দিষ্ট একটি কমিশনের ভিত্তিতে এসব বিলবোর্ড দেখভাল করছেন, জোরালো এমন অভিযোগ থাকলেও যুবদল নেতা শাহেদ বলেন, জিইসির মোড়ের বিলবোর্ডের সাথে আমি জড়িত নই। আমার নিজস্ব ঠিকাদারি ব্যবসা রয়েছে। জিইসির মোড় ঘিরে অনেকে অনেক কিছু করছে। আমি না হয় নাই বললাম। আপনারা খোঁজ নিলে জানতে পারবেন।
জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রায়হান জানান, বিলবোর্ডের সাথে আমার সম্পর্ক নেই। এগুলো তিমুর সাহেবের বিলবোর্ড। সেন্ট্রাল প্লাজায় তিমুরের অফিসের পাশে আমরা একটি অফিস নিয়েছি।
পরক্ষণেই মুঠোফোনটি তার হাত থেকে নিয়ে লিপু নামের একজন বলেন, সেন্ট্রাল প্লাজায় আমার একটি অফিস ছিল। সেটি সাত বছর বেদখল ছিল। এখন অফিসটি আমরা দখলে নিয়েছি। রায়হান আমাদের ছোট ভাই। এখানে তার আসা যাওয়া রয়েছে।
চিঠিতে যা বলা হয়েছে: সেন্ট্রাল প্লাজার ছাদে ও দেয়ালে লাগানো এলইডি সাইনসহ বিভিন্ন বিজ্ঞাপন বোর্ড সরিয়ে নিতে এডফ্রেমের মালিক আরশেদুল আলম বাচ্চু ও মুহাম্মদ হাফিজ উল্লাহ আমির তিমুরকে চলতি বছরের গত ৪ ফেব্রুয়ারি একটি চিঠি দেয়া হয়।
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এস এম সরওয়ার কামাল স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনার প্রতিষ্ঠান এডফ্রেম কর্তৃক সেন্ট্রাল প্লাজা মার্কেটের ছাদে ও দেয়ালে এলইডি সাইনসহ বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন বোর্ড স্থাপন করে বিজ্ঞাপন প্রচার করছেন। বিধিবহির্ভূতভাবে যেসব বিজ্ঞাপন প্রচারের অনুমতি প্রদান করা হয়েছিল ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সেসবের অনুমতি বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
এমতাবস্থায় পত্র প্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে সেন্ট্রাল প্লাজা মার্কেট হতে এলইডি সাইনসহ বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারের কাজে ব্যবহৃত মালামাল/যন্ত্রপাতি স্বউদ্যোগে সরিয়ে নেয়া/ অপসারণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। অন্যথায়, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক অপসারণ/উচ্ছেদপূর্বক সরঞ্জাম জব্দসহ বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, বিল বোর্ডগুলোর বিষয়ে উচ্চ আদালতের একটি রিট আছে। এ কারণে আমরা একটু সময় নিচ্ছি।
পূর্বকোণ/ইব