চট্টগ্রাম শনিবার, ০৪ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

জাতীয় সমাজসেবা দিবস আজ

চট্টগ্রামে ৫ বছরে সরকারি আর্থিক সহায়তা পেলেন সাড়ে ৭ হাজার রোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক

২ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১২:২৫ অপরাহ্ণ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী দেশে ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৯৮ জন মানুষ ক্যান্সারে প্রাণ হারান প্রতিবছর। শুধু ক্যান্সার নয়, প্রতিবছর কিডনি, লিভারসিরোসিস, জন্মগত হৃদরোগ, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও থ্যালাসেমিয়ার মতো দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। এসব রোগের চিকিৎসাও বেশ ব্যয়বহুল। এসব রোগে আক্রান্তদের আর্থিক সহায়তা করে সরকার।

 

গেল ৫ বছরে সাড়ে সাত হাজার রোগী এ সেবার আওতায় এসেছেন। প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে মোট বিতরণ করা হয়েছে সাড়ে ৩৭ কোটি টাকার বেশি। তবে অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণে সহায়তা পাওয়ার আগেই অনেক রোগী মৃত্যুবরণ করেন।

 

গতকাল দুপুরে হাটহাজারীর গুমানমর্দন এলাকা থেকে কিডনি রোগে আক্রান্ত স্বামীর পক্ষে সহায়তার চেক নিতে আসেন আসেন গৃহবধূ রুমা আক্তার। নগরের মুরাদপুরে চট্টগ্রাম জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে কথা হয় তার সঙ্গে তিনি জানান, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ কিডনি রোগ ধরা পড়ে তার রিকশাচালক স্বামী ইমাম হোসেনের। কিডনি রোগীদের সরকার আর্থিক সহায়তা দেয়-এমন খবর জানতে পেরে ওই বছরের ২২ আগস্ট সহায়তার জন্য আবেদন করেছিলেন। এর এক বছর ৪ মাসের বেশি সময় পর ৩-৪ দিন আগে জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে সরকারি সহায়তার চেক গ্রহণের জন্য ফোন করা হয়।

 

এরমধ্যে প্রায় ৬ মাস আগে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় মারা যান তার স্বামী ইমাম হোসেন। সরকারি এই আর্থিক সহায়তা দেরিতে পাওয়ার কারণ হিসেবে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কথা বলছেন সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। তারা জানান, উপজেলা কার্যালয়ে সহায়তা প্রার্থীদের নির্দিষ্ট পরিমাণ আবেদন জমা হলে সেগুলো জেলা কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে বিভিন্ন উপজেলা থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক আবেদন জমা হওয়ার পর সেগুলো পাঠানো হয় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। সিভিল সার্জনের স্বাক্ষরের পর ফের জেলা কার্যালয়ে পাঠানো হয় আবেদনগুলো। পরিবহনের জন্য কোনো বরাদ্দ না থাকায় প্রতিটি আবেদন পৃথকভাবে পাঠাতে পারেন না কর্মকর্তারা। এতে নানা কার্যালয় ঘুরে আবেদন যাচাই-বাছাইয়েই পার হয়ে যায় ৬ মাসের বেশি। এরপর বরাদ্দ আসতে আরও কিছুদিন।

 

জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার এই কর্মসূচি শুরু হয় ২০১৩ সালে। শুরুতে তিনটি রোগে আক্রান্তদের সরাসরি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে সহায়তা দেওয়া হলেও পরবর্তীতে যোগ করা হয় আরও তিনটি। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে সংশ্লিষ্ট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে এককালীন জনপ্রতি পঞ্চাশ হাজার টাকা হারে বাজেট প্রাপ্তি সাপেক্ষে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া শুরু হয়।

 

চট্টগ্রাম জেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এই কর্মসূচির আওতায় ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে চট্টগ্রামে সহায়তা পেয়েছেন ১২৪০ জন রোগী। তবে পরের বছর ৪৮ জন কমে সহায়তার আওতায় আসেন ১১শ ৯২ জন। একই পরিমাণ রোগী সহায়তা পান ২০২১-২০২২ অর্থবছরও।

 

২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৮ জন বেড়ে উপকারভোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪শ’তে। অবশ্য প্রতিবছরই সহায়তা প্রার্থীর চেয়ে প্রায় অর্ধেক কম থাকে বরাদ্দ। গড়ে তিন হাজার করে সহায়তার আবেদন আসলেও বরাদ্দ আসছে অর্ধেকের মতো। তবে সর্বশেষ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৪শ জন রোগীর জন্য সহায়তা বরাদ্দ থাকলেও পরবর্তীতে আবেদনের প্রেক্ষিতে দুই দফায় তা বাড়িয়ে ২৫শ ১০ জন করা হয়। সরকারের আর্থিক সহায়তা পাওয়া এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন ক্যান্সার আক্রান্তরা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও কিডনি আক্রান্তরা। সবচেয়ে কম রয়েছে জন্মগত হৃদরোগ আক্রান্তরা।

 

চট্টগ্রাম জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক ফরিদুল আলম বলেন, চাহিদার চেয়ে বরাদ্দ কম। আমরা নানা তদবির করে গেল বছর বরাদ্দ বাড়িয়ে নিয়েছি, তারপরও চাহিদা পূরণ হয়নি। আবেদন পাওয়ার পর আমরা সবকিছু প্রস্তুত করে রাখি, কিন্তু বরাদ্দ একটু দেরিতে হয়। এর বাইরে দারিদ্র বিমোচন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও এতিমখানায় সহায়তা, প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক কার্যক্রম, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচিসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। এরমধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ২০২৪ সালে চট্টগ্রামে বিভিন্ন কার্যক্রমে উপকারভোগী হয়েছেন ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৩১৭ জন। ব্যয় হয়েছে ২৩৫ কোটি ৪৭ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

 

জাতীয় সমাজসেবা দিবস আজ

 

জাতীয় সমাজসেবা দিবস আজ বৃহস্পতিবার। সমাজ দর্শন এবং উন্নয়ন কৌশলের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজসেবায় নিয়োজিত সমাজকর্মীদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে ২ জানুয়ারিকে জাতীয় সমাজসেবা দিবস ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করে আসছে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

 

এবারও ‘নেই পাশে কেউ যার, সমাজসেবা আছে তার’ প্রতিপাদ্যে নানা আয়োজনে পালন করা হচ্ছে দিবসটি। এ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সকালে নগরের জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়। অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন, প্রধান অতিথি হিসেবে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এবং অতিথি হিসেবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট