বিজয় দিবসের সকাল। ঘড়ির কাঁটা ৮টা ছুঁইছুঁই। শহরের আকাশচুম্বী ভবনের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে সূর্য। এরমধ্যে পূর্বকোণ সেন্টারের সামনে এসে একে একে থামে পাঁচটি বাস। পরিবার-পরিজন নিয়ে জড়ো হতে থাকেন পূর্বকোণের কর্মীরা। মিনিট বিশেকে সবার পদচারণায় মুখর পূর্বকোণ প্রাঙ্গণ। এবার পূর্বকোণ পরিবারের আনন্দ সম্মিলনস্থল ফটিকছড়ির হালদা ভ্যালি চা বাগান। নানা আনন্দ-বেদনার খবর ফেরি, সেসব খবর পাঠযোগ্য করে ছাপা কাগজে পাঠকের হাতে পৌঁছাতে নানা কাজ সামলাতে হয় সবার।
প্রতিদিন এসব ভার-ভারিক্কি কাজে ব্যস্ত থাকা কর্মীরা আজ যেন পুরোপুরি নির্ভার, হাসিমুখে সহকর্মীদের সঙ্গে খোশগল্প করার দিন। প্রতিবছর এই দিনের অপেক্ষায় থাকেন পূর্বকোণ কর্মীরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে বিজয়ের আনন্দে মাতেন। এরমধ্যে ডাক আসে প্রস্তুতির। নির্ধারিত বাসে উঠে পড়েন সবাই। ঠিক নয়টা ২ মিনিটে পূর্বকোণ সেন্টার ছেড়ে যায় বাসের বহর। মিনিট বিশেক পরেই পরিবেশন করা হয় সকালের নাস্তা। ইট-পাথরের শহর ছেড়ে গাঁয়ের পথ ধরে চলতে থাকে বাস। দোকানপাট-ফসলিমাঠ আর পথের ধারে নাম না জানা গাছের ওপর সূর্যের মিষ্টি রোদ মন সতেজ করে দেয়।
ঘড়ির কাঁটা ১১টা ছোঁয়ার চার মিনিট আগেই হালদা ভ্যালি পৌঁছে বাসের বহর। চটজলদি বাস থেকে নেমে ফ্রেশ হওয়ার তাড়া সবার! ‘চায়ের রাজ্যে’ এসে চা দিয়ে অ্যাপায়ন না হলে কী হয়? শীতের মিষ্টি রোদে শুরুতে চা পান সবাইকে সতেজ করে তুললো। অবশ্য এরমধ্যে চা’র অপেক্ষা না করেই অনেকে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। চা বাগানের মনোরম প্রকৃতির সঙ্গে স্মৃতি সংরক্ষণে সেলফিতে মেতে ওঠেন কেউ কেউ। কেউ আবার হাঁপিয়ে ওঠেন চা বাগানের উঁচু-নিচু পাহাড় ঘুরে। এরমধ্যে পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ে সূর্য। দুপুর গড়াতেই শুরু হয় মধ্যাহ্নভোজ। পাশাপাশি চলতে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বিজয় দিবসে নানা দেশাত্মবোধক, আধুনিক ও আঞ্চলিক গান গেয়ে জমিয়ে তুলেন শিল্পী জিয়াউদ্দিন বাদশা ও সুপ্রিয় লাকি। জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া সারেন সবাই। এরমধ্যে সহকর্মীদের অনুরোধে মঞ্চে গান নিয়ে আসেন পূর্বকোণের ভিজ্যুয়াল বিভাগের কর্মী সানজানা আফরিন। সানজানার গানের পর ফের মঞ্চে আসেন শিল্পীরা। বেশকিছু জনপ্রিয় গান গেয়ে শোনান তারা। করতালি দিয়ে তাদের ধন্যবাদ জানান উপস্থিত সবাই। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে পূর্বকোণের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার প্রতিনিধিদের মঞ্চে ডেকে নেন আনন্দ সম্মিলন আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব মিহরাজ রায়হান।
কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পূর্বকোণ প্রতিনিধিদের হাতে সৌজন্য পুরস্কার তুলে দেন পূর্বকোণের জ্যেষ্ঠ কর্মীরা। এরপরই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন আনন্দ সম্মিলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও দৈনিক পূর্বকোণের নগর সম্পাদক নওশের আলী খান, প্রধান প্রতিবেদক সাইফুল আলম, প্রতিবেদক মোহাম্মদ আলী। আনন্দ সম্মিলনের নানা দিক নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি এমন জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের জন্য পূর্বকোণ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান তারা। তাছাড়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দি পূর্বকোণ লিমিটেডের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন চৌধুরীর সুস্থতার জন্য সবার দোয়া কামনা ও জরুরি কাজে যুক্তরাজ্যে থাকা পূর্বকোণ সম্পাদক ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরীর পক্ষ থেকে আয়োজনে অংশগ্রহণের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
সবশেষে অনুষ্ঠিত হয় সবচেয়ে মজার ও কাক্সিক্ষত র্যাফেল ড্র। এরমধ্যে ফের চা পর্ব সারেন সবাই। সব মিলিয়ে ৩০টি পুরস্কার ছিল এবারের র্যাফেল ড্র’তে। এরমধ্যে প্রথম পুরস্কার পান সহ-সম্পাদক রাশেদুল আলম, দ্বিতীয় পুরস্কার পান প্রতিবেদক ইমাম হোসেন রাজু, তৃতীয় পুরস্কার পান নাজিরহাট প্রতিনিধি মোরশেদ মুন্না। এছাড়াও চতুর্থ থেকে দশম পুরস্কার জেতেন আরও ২৭ জন। র্যাফল ড্র’র পুরস্কার বিতরণ শেষে স্থিরচিত্রে ফ্রেমবন্দী হন সবাই। সূর্যোদয়ের পর শুরু হওয়া আনন্দ সম্মিলনের সমাপ্তি ঘটে সূর্যাস্তের সঙ্গেই। হালদা ভ্যালি চা বাগানে আঁধার ঘনিয়ে আসার আগেই শহরের পথ ধরে বাসের বহর। সঙ্গী হয় কিছু আনন্দ স্মৃতি।
পূর্বকোণ/ইব