খুচরা পর্যায়ে ভ্যাট ‘ফাঁকি ঠেকাতে’ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢাকঢোল পিটিয়ে ইএফডি (ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস) স্থাপন শুরু করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু পর্যাপ্ত ইএফডি স্থাপন করতে না পারা এবং স্থাপন করা ইএফডি নষ্ট হয়ে পড়ায় এই প্রকল্পের সুফল মিলছে না। বিপুল প্রত্যাশার প্রকল্পটিকে এখন ‘ভুল বিনিয়োগ’ বলছেন স্বয়ং এনবিআর কর্মকর্তারাই।
ভ্যাট বিভাগের দেওয়া তথ্যানুযায়ী-চট্টগ্রামে ১০ হাজারের বেশি ইএফডি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে এর অর্ধেক। সংখ্যায় যা ৪ হাজার ৮৬৭টি। খুচরা পর্যায়ের দোকান, হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা এসব ইএফডির এক চতুর্থাংশই এখন নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট ১ হাজার ১৭৭টি ইএফডি কোনো কাজেই আসছে না।
ভ্যাট কর্মকর্তারা বলছেন-ইএফডি স্থাপন প্রকল্পটি এনবিআর সরাসরি তদারকি করে। তাই চট্টগ্রামে চাহিদা অনুযায়ী ইএফডি স্থাপন কিংবা নষ্ট ইএফডি প্রতিস্থাপন দ্রুত সময়ে সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি সমাধানে এনবিআরকে জানানো হয়েছে। তারা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছেন। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ইএফডি স্থাপন করতে না পারায় প্রতিষ্ঠানটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশও জারি করেছে এনবিআর।
গত ২৮ অক্টোবর ইএফডি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘জেনেক্স ইনফোসিসকে’ দেওয়া ওই নোটিশে আগামী ২৮ কার্যদিবসের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ও দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব পাওয়া না গেলে এনবিআরে সংরক্ষিত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মুহাম্মদ জাকির হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, ইএফডি স্থাপন এবং তদারকির বিষয়টি এনবিআর সরাসরি তদারকি করে। এসব মেশিন বাজারে না পাওয়ায় আমরা চাইলেও প্রতিস্থাপন করতে পারছি না। চট্টগ্রামে ইএফডি নিয়ে যে সব সমস্যা দেখা দিয়েছে তা নিরসনে এনবিআরকে জানানো হয়েছে।
তিন কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয়:
২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যার বড় যোগান দিয়েছে ভ্যাট। এই খাতে ১ লাখ ৫১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্র থাকলেও আদায় হয় ১ লাখ ৫০ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে চট্টগ্রামে ১৯ হাজার ২১১ কোটি টাকার বিপরীতে ভ্যাট আদায় হয়েছে ১৭ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।
ভ্যাট কর্মকর্তারা বলছেন- ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বা লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি যাওয়া আরও কঠিন হবে। নিত্যপণ্যের বাজারে মানুষকে স্বস্তি দিতে ব্যাপক করছাড়, জ্বালানি তেল আমদানিকারক বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) আমদানি কমে যাওয়া এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই এই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ চলছে। দ্রুতই ভ্যাট আদায়ে গতি ফিরবে।
এ প্রসঙ্গে ভ্যাট কমিশনার মুহাম্মদ জাকির হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, মানুষকে স্বস্তি দিতে ব্যাপক করছাড়, বিপিসির আমদানি কমে যাওয়া আর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থবছরের শুরুতে ভ্যাট আদায় কিছুটা মন্থর হয়ে যায়। তবে গত মাস থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আশা করছি, অর্থবছর শেষের আগেই আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী ভ্যাট আদায় করতে সক্ষম হবো। ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আমাদের সহায়তা করবেন।
পূর্বকোণ/ইব