শরীরে হালকা জ্বর ছিল নগরীর হালিশহরের বাসিন্দা নাসিমা আক্তারের। দু’দিন পর চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা নিরীক্ষা করলে জানতে পারেন তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। এরপর বাসাতেই অবস্থান করেন ৪৭ বছর বয়সী এ গৃহিনী। কিন্তু শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় গত ৯ নভেম্বর ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রায় ছয়দিন ডেঙ্গুর সঙ্গে লড়ে হেরে যান এ নারী। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) ভোরে মারা যান তিনি।
নাসিমা আক্তারের মতো চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে শুধুমাত্র চট্টগ্রামেই। যারমধ্যে প্রায় সাড়ে ৫৪ শতাংশই হচ্ছেন নারী। অথচ আক্রান্তদের তালিকায় নারীর হার মাত্র সাড়ে ২৭ শতাংশ।
এদিকে, কম আক্রান্ত হলেও বেশি মৃত্যুর জন্য নারীর জীবন ধারণ প্রক্রিয়াকে দায় দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। যা নারীকে ডেঙ্গু বদলে যাওয়া ধরনের ফাঁদে ফেলছে। তাদের পর্যবেক্ষণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার পাশাপাশি উদাসীনতা নারীর মৃত্যু বাড়িয়ে দিচ্ছে।
অন্যদিকে, এখনও মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম যদি জোরদার করা না হয়, তাহলে বাকি দিনগুলোতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতে হবে বলেও আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকসহ কীটতত্ত্ববিদরা।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ক্রমেই অবনতির দিতে যাচ্ছে ডেঙ্গুর চিত্র। বাড়ছে মৃত্যুর ঘটনাও। শুধুমাত্র গেল দুই সপ্তাহেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। যা গেল অক্টোবর মাসের চেয়েও ১১ শতাংশ বেশি। আক্রান্তের সংখ্যাও কমতি নেই।
চলতি বছরের গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৫৩৭ জন। এরমধ্যে ১ হাজার ৯০০ জন হচ্ছে পুরুষ। যা মোট রোগীর ৫৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। আর নারীর সংখ্যা ছিল ৯৮৬ জন। যা মোট রোগীর ২৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ। বাকি ৬৫১ জন হচ্ছে শিশু। যা মোট ভর্তি হওয়াদের মধ্যে ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ।
অন্যদিকে, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ৩৫ জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এরমধ্যে ১৯ জনই হচ্ছেন নারী। যা মোট মৃত্যুর ৫৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। আর পুরুষের সংখ্যা ১২ জন। যা মোট মৃত্যুর ৩৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। আর ডেঙ্গুতে ৪ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। যা মোট মৃত্যুর ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ।
পূর্বকোণ/এমটি