চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪

শাহাদাতের স্বপ্নযাত্রা

চসিক মেয়রের শপথ আগামী সপ্তাহে

মোহাম্মদ আলী

১০ অক্টোবর, ২০২৪ | ১২:৫২ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে আগামী সপ্তাহে শপথ নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের। গত মঙ্গলবার বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। শপথ নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি গতকাল বুধবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করবে বলে জানা গেছে। তবে দুর্গাপূজার ছুটির কারণে বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত সরকারি বন্ধ থাকায় এ চারদিন কোনো কাজ হবে না। ছুটিশেষে অফিস খুললে সোমবার থেকে শপথের কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর জানা যাবে শপথের প্রকৃত দিনক্ষণ।

 

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চট্টগ্রামসহ দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের সব মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের অপসারণ করে। মেয়রদের পরিবর্তে সরকারি আমলাদের সিটি করপোরেশনের প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ অবস্থায় আদালতের রায়ে নির্বাচিত মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন কবে শপথ ও দায়িত্ব নেবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ডা. শাহাদাত হোসেন দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘দুর্গাপূজায় সরকারি বন্ধের কারণে বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত সরকারি অফিসে কোন কাজ হবে না। সোমবার অফিস খুললে আশা করছি বুধবারের মধ্যে শপথ হয়ে যাবে।’

 

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট পান। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে রেজাউল করিমসহ ৯ জনকে বিবাদী করে মামলাটি করেছিলেন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। আদালত গত পহেলা অক্টোবর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে জয়ী ঘোষণা করেন। ওই দিন আদালত ১০ দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করতে সরকারকে নির্দেশ দেন।

 

 

চট্টগ্রাম প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক খাইরুল আমিন এ রায় দেন। আদালতের এ রায়ের ৮ দিনের মাথায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনার সচিব শফিউল আজিম এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন। তাতে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালত, চট্টগ্রামে দায়েরকৃত নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল মামলার গত ১ অক্টোবরের আদেশে ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থী ও ১ নম্বর বিবাদী মো. রেজাউল করিম চৌধুরীকে নির্বাচিত ঘোষণা বাতিল করে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে নির্বাচিত মেয়র ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো।’

 

এদিকে মেয়র হিসেবে শপথ ও দায়িত্ব পালনে তার কোন কোন কাজে অগ্রাধিকার থাকবে এ নিয়ে গতকাল দৈনিক পূর্বকোণকে এক প্রতিক্রিয়ায় ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘চসিক মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার পর আমার প্রথম কাজ হবে চট্টগ্রামবাসীর আশা-আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন করা। চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশাকে সামনে নিয়ে সেগুলো সমাধানে কাজ করে যাব। আমি অনেক আগে থেকে দাবি করে আসছি নগর সরকার প্রতিষ্ঠিত করা। এটি একটি যৌক্তিক দাবি। কারণ নগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সরকারি সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে নিয়ে চসিকের অধীনে একসাথে কাজ করার সুযোগ হবে। তাতে নগরীতে পরিকল্পিত উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব হবে। চট্টগ্রামের পরিকল্পিত উন্নয়ন না হওয়ার পিছনে মূল কারণ হচ্ছে, সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা। এ কারণে রাস্তাঘাট সংস্কারসহ সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজ আজকে জনদুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। তাই সরকারি সেবা সংস্থাগুলোকে একসাথে এনে উন্নয়ন কাজের সমন্বয় করতে হবে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, নগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসম্মত শিক্ষাদানে ব্যবস্থা গ্রহণসহ পর্যায়ক্রমে সকল উন্নয়ন কাজ করা হবে।’

 

এদিকে শপথ নেওয়ার পর চসিকের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের মেয়াদ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতে, চসিকের মেয়র ও কাউন্সিলরের পূর্ণ মেয়াদ হচ্ছে ৫ বছর। আদালত ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করলেও এ ক্ষেত্রে তিনি ৫ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। চলতি মাসে যদি ডা. শাহাদাত হোসেন শপথ নেন, তাহলে তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন মাত্র ১৬ মাস। কারণ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ষষ্ঠ পরিষদের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। এই পরিষদের নির্বাচিত মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত প্রথম সাধারণ সভার দিন থেকে পরিষদের মেয়াদ গণনা করা হয়।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট