চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের ফলাফল বাতিল চেয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের দায়ের করা মামলায় তাকে মেয়র ঘোষণা করেছেন আদালত। একইসঙ্গে আগামী ১০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবকে গেজেট প্রকাশ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ খাইরুল আমীনের আদালত এই রায় দেন। এরপরেই ডা. শাহাদাত হোসেনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মঈনউদ্দীন হোসাইন সোহেল আদালতের রায় তুলে ধরে গণমাধ্যমকে বলেন, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর ৫৩(২) ধারা মতে মামলায় ডা.শাহাদাত হোসেনকে বিবাদীগণের বিরুদ্ধে একতরফা সূত্রে বিনা খরচায় ডিক্রি প্রদান করা হলো। ওই আইনের ধারা ৫৯(খ) অনুসারে গত ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি সরকারের গেজেট অনুসারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একই বছরের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মেয়র হিসেবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরীকে নির্বাচিত ঘোষণা বাতিল করা হয়েছে। আইনের ৫৯(ক) অনুসারে এই মামলায় নির্বাচনে ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে নির্বাচিত মেয়র হিসাবে ঘোষণা করা হলো। বলা বাহূল্য, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করে সেই জায়গায় ইতিমধ্যে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
প্রশ্ন হলো- নিম্ন আদালতের রায়ের পরেই কি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নিতে পারবেন এই বিএনপি নেতা? জানতে চাইলে ইসি সচিব শফিউল আজিম বলেন, ‘ইসির লিগ্যাল উইংয়ের সাথে কথা বলেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। এখন নির্বাচন কমিশন নেই। যে কারণে হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত দেয়া যাবে না’। তিনি আরও জানান, রায়ের পূর্ণাঙ্গ আদেশ না দেখে এখনই ইসি-ও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ মনে করেন, এখন আগে দেখতে হবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কি পদক্ষেপ নেন। তাদের পদক্ষেপের পরেই বলা যাবে, কোনটা শুদ্ধ, আর কোনটা অশুদ্ধ। তার কথায়, ট্রাইব্যুনাল তার কাজ করেছে। এতে ভুল নেই। অপর আরো কয়েকজন নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার বিশ্লেষকেরাও ধারণা দিয়েছেন, ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করলেও এখনই তিনি চেয়ারে বসতে পারবেন কী না তার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।
২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ঘোষিত ফলাফলে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পাওয়ায় নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা অনুসারে, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মেয়রপ্রার্থী শাহাদাত হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছিলেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। পরে, একই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি চসিক নির্বাচনে কারচুপি ও ফল বাতিল চেয়ে মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় বিবাদী করা হয়েছিল চসিকের সাবেক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান, নির্বাচন কমিশনারের সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, আবুল মনজুর, এম এ মতিন, খোকন চৌধুরী, মুহাম্মাদ ওয়াহেদ মুরাদ, মো. জান্নাতুল ইসলামকে। আদেশের সময় তাদের পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর থেকে চসিক কর্মকর্তারা রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছিলেন। এ থেকে বোঝা যায় নির্বাচনের নামে ওইদিন শুধু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। যে কারণে নির্বাচনে ভোটের হিসাব চেয়ে এখনো পাওয়া যায়নি। কোনো কেন্দ্র থেকে ইভিএমের প্রিন্ট কপিও দেওয়া হয়নি। ভোটের দিন দুপুর পর্যন্ত ৪ থেকে ৬ শতাংশ ভোট পড়ে। কিন্তু ভোটের হিসাবে দেখানো হয়, ২২ শতাংশ ভোট পড়েছে।
পূর্বকোণ/ইব