চট্টগ্রাম শনিবার, ০৫ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

অকারণে বাড়ল চালের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

৭ জুলাই, ২০২৪ | ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

স্বামী-স্ত্রী ও শিশু সন্তান নিয়ে তিন জনের সংসার। থাকতেন বহদ্দারহাট সংলগ্ন বাদুরতলায়। তিন মাস আগে শহর থেকে চলে গেছেন গ্রামের বাড়িতে। তিন জনের সংসারে খরচ বেড়েছে আড়াই থেকে তিন গুণ। বেড়েছে অন্যান্য খরচও। দ্রব্যমূল্যের চাপ সইতে না পেরে শেষতক গ্রামে ফিরে যান পরিবারটি।

 

গতকাল কথা হয় ওই ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গরিব ও মধ্যবিত্তের সংসার চলছে টানাটানিতে। বাজারে সবজি থেকে শুরু করে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। এখন নতুন করে দুশ্চিন্তা বেড়েছে চালের দামে। শহর ছেড়ে গ্রামে এসেও সংসার খরচের দুশ্চিন্তা যেন পিছু ছাড়ছে না।’

 

বাজারে শাক-সবজি থেকে শুরু করে মাছ-মাংসের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। বেশির ভাগ সবজির দাম কেজিতে এক শ টাকার ওপরে। ভোগ্যপণ্যের অন্যান্য পণ্যের দামও একই অবস্থা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে চালের দাম। যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বস্তাপ্রতি এক থেকে আড়াই শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মধ্য-নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি মানুষ।

 

চালের অন্যতম বড় পাইকারি মোকাম পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘দেশে চালের সবচেয়ে বড় মৌসুমে দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। অথচ দেশে ধান ও চালের কোনো সংকট নেই। তারপরও অযৌক্তিকভাবে চালের দাম বাড়িয়েছেন মিলাররা।’

 

তবে মিল মালিক সংগঠন চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘হঠাৎ করে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে নিম্নমানের চালের বেচাকেনা একেবারে কম। উন্নতমানের চালের দাম বস্তায় দুই শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।’

 

কোনো কারণ ছাড়াই দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি দুই থেকে আড়াই শ টাকা পর্যন্ত। চালের সবচেয়ে বড় ও ভরা মৌসুমে দাম বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে মিল মালিকদের দাবি, ধান সংকট ও ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দাম বেড়েছে।

 

বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে বেতি আতপ চাল বস্তাপ্রতি ২৪শ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৬ ও ২৭শ টাকায়। নূরজাহান সিদ্ধ (উন্নতমানের) ২৫শ টাকা থেকে বেড়ে ২৭৫০শ টাকা, মধ্যমানের নূরজাহান সিদ্ধ ২৪৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২৬শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট সিদ্ধ (উন্নতমানের) ২৭৫০ টাকা থেকে ৩৯০০ টাকা, মধ্যমানের ২৫৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইজাম সিদ্ধ ২৫শ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৭৫০ টাকায়। গুঁটি সিদ্ধ ২৩শ টাকা থেকে বেড়ে ২৫শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জিরাশাইল মানভেদে ২৯ ও ৩১শ টাকা থেকে বেড়ে ৩২ ও ৩৩শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. জাফর আলম বলেন, ‘বাজারে ধান-চালের সংকটের অজুহাতে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। মিলার ও বড় কর্পোরেট গ্রুপগুলো কারসাজি করে দাম বাড়িয়েছে।’

 

কনজুমার এসোসিয়েশেন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন পূর্বকোণকে বলেন, ‘দেশে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ার একটা প্রতিযোগিতা আছে। ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছেই। এখন চাল মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরাও এই প্রতিযোগিতায় সামিল হয়েছে।’

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট