রেলপথে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে যাওয়ার একমাত্র স্পেশাল ট্রেনের চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আগামী ১০ জুন পর্যন্ত চলাচলের অনুমতি থাকলেও ইঞ্জিন ও ক্রু সংকট দেখিয়ে ৩০ মে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে এই স্পেশাল ট্রেনের চলাচল। তবে এই সিদ্ধান্তকে চট্টগ্রামের প্রতি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ‘বিমাতাসুলভ’ আচরণ আখ্যা দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই রেলপথের যাত্রীরা।
যাত্রী সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন- গত ৯ মে রেলওয়ের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিদ্যমান জনবল এবং লজিস্টিকস দিয়েই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে দুই জোড়া ট্রেন চালু করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ইঞ্জিন ও ক্রু সংকট থাকলে মাঠ পর্যায় থেকে এই ধরনের প্রস্তাব দেওয়ার কথা নয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই প্রস্তাব গ্রহণ না করে উল্টো এই রুটের একমাত্র স্পেশাল ট্রেনটিই বন্ধ করে দিচ্ছে। বাস মালিকদের লাভবান করতেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার রেলওয়ে যাত্রী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু সাঈদ তালুকদার। তিনি বলেন, কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটি জনপ্রিয়। ট্রেনে যাত্রী বাড়ায় কয়েকটি বাস কর্তৃপক্ষ ভাড়া কমাতে বাধ্য হয়েছে। এখন স্পেশাল ট্রেন বন্ধ করলে বাস মালিকরা লাভবান হবেন।
মো. আবু সাঈদ বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবিতে আমরা রেলমন্ত্রী, রেলওয়ের ডিজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছি। যাত্রীদের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু যাত্রীদের দাবিতো মানা হলোই না, উল্টো এই রুটে চলা একমাত্র স্পেশাল ট্রেনের চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। অনুমোদিত সময় শেষের আগেই ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা হতাশ। যাত্রীরা ক্ষুব্ধ।
যাাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দীন চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, এই রুটে প্রতিদিন ৪০-৫০ হাজার যাত্রী চলাচল করে। তাদের স্বস্তিতে যাতায়াতের জন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার পর্যন্ত রেলরুট সম্প্রসারণ করেছেন। কিন্তু রেলওয়ের কিছু কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগটি বিতর্কিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই পথে ট্রেন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত চট্টগ্রামের প্রতি ‘বিমাতাসুলভ’ আচরণের বহিঃপ্রকাশ।
সংশ্লিষ্টরা জানান- দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন গত নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের পর প্রথম এই রুটে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হয় গত ১ ডিসেম্বর। বিপুল যাত্রী চাহিদা থাকলেও গত ছয় মাস ধরে এই রুটে চলাচল করছে মাত্র দুটি ট্রেন। তাও চলছে কেবল ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয়দের। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেন চালুর বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন তারা।
সেই দাবির বাস্তবায়ন না হলেও ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে গত ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে একটি ঈদ স্পেশাল ট্রেন চালু করা হয়। কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে যেটি ১০ জুন পর্যন্ত চলাচলের অনুমতি আছে। এরমধ্যে গত ৯ মে স্পেশাল ট্রেনের বিদ্যমান লোকবল ও লজিস্টিকস ব্যবহার করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে দুই জোড়া নিয়মিত ট্রেন চালুর প্রস্তাব দেয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজারের (ডিআরএম) কার্যালয়।
এর প্রেক্ষিতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের দপ্তর থেকে একজোড়া নিয়মিত ট্রেন চালুর প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য রেলভবনে পাঠানো হয়। কিন্তু সেটি অনুমোদন না করে উল্টো স্পেশাল ট্রেন চলাচলই বন্ধ করে দিচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এসিওপিএস কামাল আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ইঞ্জিন ও ক্রু সংকট থাকায় কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন বুধবার পর্যন্ত চলবে। ৩০ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বাতিল করা হলো।
তবে রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে পূর্বকোণকে জানান, ইঞ্জিন বা ক্রু সংকট নয়- একটি প্রভাবশালী মহল ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বেসরকারি পরিচালনায় চলা ট্রেনকে ঢাকা-কক্সবাজার পর্যন্ত চালাতে চায়। তাদের সুবিধা দিতেই রেলওয়ের একটি পক্ষ কক্সবাজার স্পেশালকে নিয়মিত করার পরিবর্তে এর চলাচলই বন্ধ করে দিচ্ছে। এটি হলে ওই প্রভাবশালী মহল লাভবান হবে। তবে রেল বিপুল রাজস্ব হারাবে।
পূর্বকোণ/এসএ