স্বাধীনতার পর থেকেই প্রতি দশ বছর পরপর কারিকুলাম পরিবর্তন হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালে কারিকুলাম পরিবর্তন হয় এবং ২০১২ সালে তা আমরা মাঠপর্যায়ে পেয়েছিলাম। সেখানেও এই প্রশিক্ষণ হয়েছিল। আবার দশ বছর পরে আমাদের কারিকুলাম পরিবর্তন হয়েছে। এটা একটা নিয়মিত কার্যক্রম। এই পরিবর্তনটা কিন্তু যুগোপযোগী।
প্রশিক্ষণ নিয়ে বলতে গেলে ২০২১ সালে আমাদের সব উপজেলা ও মেট্রো শহরের থানায় কিছু পাইলটিং প্রতিষ্ঠান হয়েছিল। আমাদের চট্টগ্রাম মেট্রোতে দুইটা পাইলটিং প্রতিষ্ঠান ছিল। একটা ফুলকি, আরেকটা সিটি কর্পোরেশনের। ওখানে শিক্ষকগণ বছরব্যাপী অনেক ধরনের প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। প্রতিমাসে একটা সপ্তাহভিত্তিক এসেসমেন্ট হয়েছে। এই এসেসমেন্টের ভিত্তিতে ২০২২ সালে আমাদের আরও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম হয়েছে এবং ২০২৩ এর জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির কারিকুলাম প্রবর্তন হয়েছে।
আমাদের এখানে জেলা পর্যায়ে কিছু কোর ট্রেইনার আছেন। তাদেরকে ঢাকায় এনসিটিবির বিশেষজ্ঞরা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। সেই কোর ট্রেইনাররা উপজেলা ও থানায় যারা শিক্ষক প্রশিক্ষণে কাজ করবেন, তাদেরকে প্রস্তুত করেছেন। আমাদের চট্টগ্রাম জেলায় অষ্টম আর নবম শ্রেণির কারিকুলাম নিয়ে যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে, সেখানে ১৬,১৪০ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। আমাদের এখানে ভেন্যু আছে ১৯টি এবং ট্রেইনার কাজ করছেন প্রায় ৭০০ জন।
ডিসেম্বরের মধ্যে কিন্ডারগার্টেনসহ মন্ত্রণালয়ের বই যায়, এমন সব প্রতিষ্ঠানকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনার জন্য আমরা ডাটাবেইজ তৈরি করেছিলাম। সময় স্বল্পতা ও নির্বাচনের কারণে এই পর্যায়ে প্রশিক্ষণ পাচ্ছে শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠান, অটোনমাস, এমপিওভুক্ত, একাডেমিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এবং পাঠদানের অনুমতি যাদের আছে তারা। আমরা প্রত্যাশা করছি জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে কিন্ডারগার্টেনের সকল শিক্ষকও প্রশিক্ষণের আওতায় আসবে।
আমাদের এই কারিকুলামের সবকিছু কিন্তু সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করে প্রণয়ন করা হয়েছে এবং মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিদিনই মনিটরিং করা হচ্ছে। তাই আমাদের কাজ হচ্ছে ধৈর্য ধরে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করা। শিক্ষার্থীরা যেই স্তরে তাদের পড়াশোনা বন্ধ করবে, সেই স্তরে থেকে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে তার জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। সেই রকম ব্যবস্থা এই কারিকুলামে আছে।
আমাদের এই কারিকুলামের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাইভেট টিউশন থাকবে না। অভিভাবকেরা প্রাইভেট টিউশন ফি দিতে হচ্ছে না, ১০০ টাকা বা ৫০ টাকার উপকরণ ফি দিতে হচ্ছে। এটা তাদের কাছে অনেক খরচ মনে হয়। ২০১০ সালে দেশব্যাপী সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হয়েছিল। এটার নির্যাস কিন্তু আমরা পাইনি অসহযোগিতা আর গুজবের জন্য। এই বাংলাদেশ সব দিক দিয়ে এগিয়ে গেছে, শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে।
আমাদের এখানে পাবলিক পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে দশম শ্রেণিতে। ফিফটি পার্সেন্ট প্রতিষ্ঠান মূল্যায়ন করবে, আর ফিফটি পার্সেন্ট বোর্ড মূল্যায়ন করবে। পরীক্ষা নেই, এই কথাটা কিন্তু সঠিক না। এখানে যে এসেসমেন্ট আছে, এসেসমেন্টকে যদি আমরা ব্যাপক অর্থে সংজ্ঞায়িত করি, তাহলে এটাও কিন্তু পরীক্ষা।
আগে মূল্যায়ন হতো ছয়মাসে ও বছরে একবার। একটা স্টুডেন্ট স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর পরীক্ষার আগে আর আসতো না। এখন কিন্তু এই সিস্টেম নেই। আমাদের এবারের নীতিমালায় আছে, কোন শিক্ষার্থী যদি ৭৫ পার্সেন্ট উপস্থিত না থাকে, তাহলে সে কোনভাবেই পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত হবে না। এবারের জন্য এটা শিথিল করে ফিফটি পার্সেন্ট করা হয়েছে। আগামী বছর কিন্তু ৭৫ পার্সেন্ট অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে।
আমাদের এই কারিকুলামের ক্ষেত্রে ঘাটতি হচ্ছে আমরা ব্যাপকভাবে অভিভাবক সমাবেশ করতে পারিনি। এবার কিন্তু আমাদের অভিভাবক সমাবেশ করার অনেক বাজেট এবং নির্ধারিত সূচি আছে। আমরা আশা করি অভিভাবকেরা সেখানে তাদের সব প্রশ্নের জবাব পাবেন।
এখানে মূলত কষ্ট হচ্ছে শিক্ষকদের। ওনারা নিজেদের নতুন করে তৈরি করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে শিক্ষকদেরকে যদি আমরা একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি আমাদের সকল সুযোগ সুবিধা দিয়ে, তাহলে এই কারিকুলাম কিন্তু যথাযথ বাস্তবায়ন হবে।
এটা শুধু ফিনল্যান্ড না, পৃথিবীর ৫৬টি দেশে এই কারিকুলাম হচ্ছে। আমরা প্রত্যাশা করি এই কারিকুলামে একজনও বেকার থাকবে না।
পূর্বকোণ/পিআর