চট্টগ্রাম শনিবার, ০৪ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

৮ ডিসেম্বর আমীরহাটের সম্মুখযুদ্ধে জাফরসহ তিন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন

জাহেদুল আলম, রাউজান

৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ১২:৩১ অপরাহ্ণ

রাউজানের বীর মুক্তিযোদ্ধা বাদল চন্দ্র পালিত (৭৫) বাবার সাথে কৃষি কাজ করতেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সেই কৃষি কাজ ছেড়ে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। শুধু তিনিই নন, তার দেখাদেখি একের পর এক মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন বাদলের দুই ছোট ভাই সাধন পালিত এবং মিলন পালিতও। মুক্তিযুদ্ধের সেই সময়কার নানা স্মৃতি বাদল চন্দ্র পালিত তুলে ধরেন পূর্বকোণ প্রতিনিধির কাছে।

 

তিনি বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল ২২ বছর।  বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করতাম। এ জন্য যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য ট্রেনিং নিতে মাকে ‘আসছি’ বললেও বাবাকে না জানিয়ে বৈশাখ মাসের একদিন বন্ধুরাসহ ৫০-৬০ জনের একটি দলের সাথে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হই। আমাদের দলে ছিলেন মেজর রফিকুল ইসলাম। রামগড় হয়ে ভারতের সাব্রুম থেকে হরিণা ক্যাম্পে যাই। সেখানে আমাদের সাথে ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ৪ থানার কমান্ডার এডভোকেট হাশেম, অসিত সিংহসহ অনেকে। আমরা ইয়ুথ ক্যাম্পে ছিলাম। সেখান থেকে ট্রেনিং সেন্টার ‘বগাপা’ যাই। ২৯ দিন ট্রেনিং নিয়ে আমরা ২২ জনের একটি দল খাগড়াছড়ি, ফটিকছড়ি হয়ে পার্বত্য অঞ্চলের কচুপাড়ায় অবস্থান নিই। সেখান থেকে একদিন অপারেশন করতে নোয়াপাড়ায় গিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে দিই। এরপর বেরুলিয়া এক্সক্লুসিভ দিয়ে রাঙ্গামাটি রোডের ব্রিজ ধ্বংস করি। ৮ ডিসেম্বর হলদিয়া আমীরহাট পাকবাহিনীর সাথে মুখোমুখি অপারেশন করি। সেই অপারেশনে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন ডাবুয়ার জাফরসহ তিনজন। তারা শহীদ হওয়ার পর এদেশীয় কিছু রাজাকার ওই তিনজনকে গলায় রশি বেঁধে, টেনে হেঁছড়ে রাউজান সদরের পাইপের গোড়া নামক এলাকায় নিয়ে ফেলে দেয়। এই মর্মান্তিক দৃশ্যটির কথা মনে পড়লে আমি এখনো কান্না করি।

 

বাদল চন্দ্র পালিত আরো বলেন ‘আমরা বিভিন্ন সময় রাঙ্গামাটি সড়কের রাউজান ঢালারমুখ এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করি। একসময় তারা আমাদের আক্রমণের মুখে পিছু হটে। তবে শত্রু বাহিনীর বিরুদ্ধে অপারেশন করার জন্য বিভিন্ন সময় কচুপাড়া ছাড়াও পাহাড়তলী খৈয়াখালী, আবুরখীলসহ বিভিন্নস্থানে থাকতাম। যুদ্ধের শেষদিকে আমরা কচুপাড়ায় অবস্থানে ছিলাম। তখন আস্তে আস্তে বুঝতে পারি, পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করে দেশ ছাড়ছে। এরপর আমরা রাউজান উপজেলা সদরের দিকে চলে আসি। ওই সময় আমরা ৫০-৬০ জন ছিলাম। উপজেলায় এসে শুনি দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। তখন আমাকে উৎসুক সবাই কোলে নিয়ে পুরো ফকিরহাট ঘুরে বেড়ায়। এসময় বিজয় মিছিল বের করা হয়। ১০ জানুয়ারির পর বঙ্গবন্ধু কারাবাস থেকে মুক্তি ফেলে, তার নির্দেশে আমি ও আমাদের দলের সদস্যরা ভাটিয়ারিতে অস্ত্র জমা দিই। তিনি বলেন, পাকবাহিনীর সাথে আঁতাত করে রাজাকাররা আমাদের বাড়ি লুটপাট ও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল যুদ্ধের শুরুতে। আমি যুদ্ধে যাওয়ার পর আমার ছোট ভাই সাধন পালিত ও মিলন পালিতও ভারতে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যায়।

 

জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা বাদল চন্দ্র পালিত রাউজান পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত সুরেশ চন্দ্র পালিত ও মৃত কুসুম বালা পালিতের বড় ছেলে। বাদল ২ ছেলে ও ১ মেয়ের জনক।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট