১৮ মাস পার হলেও এখনো সচল হয়নি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের অকেজো হয়ে পড়ে থাকা একমাত্র এমআরআই মেশিন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি নিয়ে দরকষাকষির কারণে মেশিনটি সচল করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যার কারণে প্রায় দশ কোটি টাকায় কেনা মেশিনটি ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে, কবে নাগাদ এ মেশিনের সেবা কার্যক্রম শুরু হবে তাও এখন পর্যন্ত অনিশ্চিত। যদিও মেশিনটি সচল করতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে দীর্ঘ সময় মেশিনটি বন্ধ থাকায় একদিকে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা, অন্যদিকে রাষ্ট্রও হারাচ্ছে রাজস্ব।
জানা যায়, ২০২২ সালের মে মাসের মাঝামাঝিতে এসে বিকল হয় জাপান থেকে কেনা এমআরআই মেশিনটি। প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের জাপানি ‘হিটাচি ১.৫ টেসলা’র অত্যাধুনিক মেশিনটি সরবরাহ করেন ঢাকার মেডিটেল প্রাঃ লিমিটেড নামের এক প্রতিষ্ঠান। ক্রয়ের চুক্তি অনুযায়ী তিন বছরের ওয়ারেন্টি ছিল মেশিনটি। কিন্তু তিন বছর যেতে না যেতেই ত্রুটি শুরু হয় কোটি টাকা মূল্যের এ মেশিনটির। এরপর বারবার বিকল হতে থাকে এ যন্ত্র। সর্বশেষ বিকল হওয়ার পর থেকে থেকেই এখন পর্যন্ত মেশিনটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, একমাত্র মেশিনটি সচলের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে অন্যান্য দপ্তরে বহু সংখ্যক চিঠি চালাচালি করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রায় কোটি টাকার ব্যয় বিবরণীয় দেয়া হলেও সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় মেশিনটি মেরামত করা যাচ্ছে না। ফলে অচল হয়ে পড়ে থাকায় মেশিন থেকে সেবাও গ্রহণ করতে পারছেন না সাধারণ রোগীরা। এতে গরিব রোগীদের বাড়তি টাকা খরচ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে।
চমেক হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সুভাষ মজুমদার বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এমআরআই মেশিনটি বন্ধ থাকায় একদিকে যেমন সাধারণ রোগীরা কষ্ট পাচ্ছেন, অন্যদিকে শিক্ষার্থীরাও তাদের প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
রোগীরা বলছেন, চিকিৎসা সেবার ব্যয় নিয়ে এমনিতেই মারাত্মক হিমশিম খেতে হয়। তারমধ্যে অতিরিক্ত ব্যয় করা কষ্টসাধ্য। বৃহত্তর চট্টগ্রামের বৃহৎ এ হাসপাতালের এমআরআই মেশিনটি চালু থাকলে হয়তো তাদের অতিরিক্ত এ অর্থ ব্যয় করতে হতো না। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র এমআরআই মেশিন চালু করার উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ রোগী ও সংশ্লিষ্টদের।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, ‘সরকারি গাইডলাইন অনুযায়ী বারবার মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তাবনা দেয়া হলেও তারা তাদের দাবিতে অনড় রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন সুরাহা হয়নি। যার কারণে মেশিনটি সচল করা যাচ্ছে না। নতুন মেশিনের চাহিদাও পাঠানো হয়েছে।’
প্রসঙ্গত : প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জনের এমআরআই পরীক্ষা করা হয়ে থাকে চমেক হাসপাতালে। এ পরীক্ষার জন্য রোগীদের খরচ করতে হয় আড়াই থেকে ৪ হাজার টাকা। একই পরীক্ষা বেসরকারি ল্যাবগুলোতে করা হয় অন্তত পাঁচ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।
পূর্বকোণ/আরডি