প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার বাস্তবায়ন হচ্ছে অবশেষে। নদীর তলদেশে টানেলের মতো জটিল কাজের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণকাজ শুরু হলেও অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে টানেল।
এই টানেলের মাধ্যমে নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আপাতদৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গার সঙ্গে আনোয়ারা উপজেলাকে যুক্ত করছে টানেল। তবে এই যোগাযোগের ব্যাপকতার আরো অনেক বেশি। শুধু পতেঙ্গা বা আনোয়ারা-ই নয়, মূলত দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সঙ্গে সারাদেশের বাধাহীন সড়ক যোগাযোগ চালু হচ্ছে। পদ্মাসেতুর পর এই টানেল যোগাযোগ, পর্যটন ও অর্থনীতির গতির সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
২০১৬ সালের ১৫ অক্টোবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রধানমন্ত্রীর শি জিনপিং যৌথভাবে টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে চীনের সাংহাই নগরীর মতো ওয়ান সিটি টু টাউন মডেলের মতো পরিণত করতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করা হয়েছে। টানেল উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে চট্টগ্রাম ওয়ান সিটি টু টাউনে রূপান্তর হবে।
নির্মাণ ব্যয় প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা হলেও টানেলের সুফল মিলবে অনেক বেশি। কারণ টানেলের মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অর্থনীতির দ্বার খুলে যাচ্ছে।
আনোয়ারা উপজেলায় কোরিয়া ইপিজেডের সাথে নতুন করে চায়না শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে। কর্মব্যস্ত এলাকায় বিশাল বিনিয়োগের হাতছানি দিচ্ছে। নানা উন্নয়নে প্রসারিত হচ্ছে আনোয়ারা প্রান্ত। প্রসারিত হচ্ছে পর্যটন, শিল্পকারখানা ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। আগে থেকেই কাফকো, ইউরিয়া সার কারখানা, কোরিয়া ইপিজেডসহ অনেকগুলো শিল্পপ্রতিষ্ঠান সচল আছে। আমদানি এবং রপ্তানির উৎপাদিত পণ্য টানেল দিয়ে এক শহর থেকে অন্য শহরে প্রবেশ করা যাবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পণ্য পৌঁছে যাবে বন্দর এলাকায়।
মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার, সংযোগ সড়কসহ টানেলের মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াচ্ছে ৯.৩৯ কিলোমিটার। টানেলটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত করবে এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের শুধু ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরত্বই কমবে না, অন্তত একঘণ্টা সময় সাশ্রয় হবে। সময় এবং দূরত্ব কমায় বিনোগকারীসহ পর্যটকগণের আগ্রহ আরো বেড়ে যাবে। চট্টগ্রাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া বিনিয়োগকারীরা আবার চট্টগ্রামে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী এই টানেল দিয়ে যানবাহন ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে চলবে।
টানেল দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। প্রতিদিন চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে ২৮ হাজার ৩০৫টি গাড়ি দৈনিক চলতে পারবে। তার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী যানবাহন। ২০৩০ নাগাদ ৩৭ হাজার ৯৪৬টি, ২০৬৭ সাল নাগাদ ১ লাখ ৬২ হাজার গাড়ি চলাচল করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বহুল প্রতিক্ষিত বঙ্গবন্ধু টানেলের শুভ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ২৮ অক্টোবর ২০২৩। উদ্বোধনের পরের দিন থেকে জনসাধারণের জন্য যানবাহন উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। নতুন মাত্রা যুক্ত হয়ে যাবে উন্নয়নের মহাসড়কের যাত্রায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থেকে শুভ উদ্বোধন করবেন বঙ্গবন্ধু টানেল।
লেখক : সহ-সভাপতি, বাফা ও পরিচালক- বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন