মো. রিপন বর্তমানে দুবাইয়ের একটি ওয়ার্কশপে কাজ করে। বেতন ৫০ হাজার টাকার উপরে। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সংসার জীবনে বেশ সুখেই আছে সে। শহরেই একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে তার পরিবার। অথচ একদিন এ রিপনই ছিল পরিচয়হীন পথশিশু। নগরীর রেলস্টেশনে করতো ভিক্ষা। কখনও কখনও চুরিও করতো। একদিন এক যাত্রীর মানিব্যাগ চুরি করার সময় ধরা পড়ে। কিছু লোক তাকে মেরে পুলিশের দিয়ে দেয়। পুলিশের সহযোগিতায় আনুমানিক ১০ বছরের রিপনের স্থান হয়েছিল চট্টগ্রামের ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’ নামের সংগঠনটিতে। বদলে যায় তার জীবনের মোড়। সে শুরু করে পড়াশোনা। এইচএসসি পাশ করে যুব উন্নয়ন থেকে কাজ শিখে সংগঠনের সহযোগিতায় চলে যায় দুবাইয়ে।
শুধু রিপন নয়, ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’ সংগঠনটি থেকে গত ২৩ বছরে প্রায় পাঁচ শতাধিক পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা করে হাতের কাজ শিখে কর্মজীবনে পা দিয়ে উন্নত জীবনযাপন করছে। যারা সবাই একসময় সমাজে অবহেলিত, নিষ্পেষিত ও নিপীড়িত সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু ছিল।
সংগঠনটির সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘অপরাজেয় বাংলাদেশে’র আশ্রয়ে বেড়ে ওঠা পথশিশুদের মধ্যে বাবা-মা পরিবারবিহীন নয়জন ছেলে এসি, ইলেক্ট্রনিক, মোবাইল সার্ভিসিং, দর্জি, ওয়ার্কশপ, গাড়িসহ বিভিন্ন হাতের কাজ শিখে বিদেশের মাটিতে কাজ করছে। এরা সবাই এখন বিয়ে করে সুন্দর জীবনযাপন করছে। আবার ১৪ জন ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষকতা, নার্স, এনজিও সংস্থায়, বিএসআরএমের মত কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ারিং ও ব্যাংকে চাকরি করছে। এছাড়া অনেকে হাতের কাজ শিখে বিভিন্ন কোম্পানিতে কম্পিউটার অপারেটর, ইলেকট্রনিকের কাজ, ভবন নির্মাণের ফোরম্যান হিসেবে কাজ করছে। মেয়েরা পোশাক কারখানায় চাকরি, সেলাই, ব্লক বাটিক, বিউটিফিকেশন, দোকানে বিক্রয় কর্মী হিসেবে কাজ করছে। কেউ কেউ নিজেরাই এখন ছোট মাঝারি উদ্যোক্তায় পরিণত হয়েছে।
এমন আলো ছড়ানো সংস্থাটি এখন প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। যে কারণে চট্টগ্রামের তিনটি শেল্টার হোম বন্ধ হয়ে বর্তমানে কোতোয়ালী জেল রোড আনসার ক্লাবের ৩য় তলায় মাত্র একটি শেল্টার হোম আছে। কমেছে সেবার পরিধি।
সংগঠনের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা জানান, ফান্ডের অভাবে আর্থিক সংকটে সংগঠনটি। যে কারণে শিশুদের নিরাপদে থাকার সুব্যবস্থা থাকলেও পথশিশুদের সংখ্যা বাড়াতে পারছে না পথশিশুদের এ সংগঠন। বর্তমানে এলাকার স্থানীয় প্রতিনিধি ও অল্প কয়েক বিত্তবানের সহযোগিতায় এ শিশুদের দু’বেলা খাবার চলছে। এছাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সহযোগিতায় শিশু-কিশোররা এলাকার বিভিন্ন স্কুলে পড়ছে।
পূর্বকোণ/আরডি