চট্টগ্রাম বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

চট্টগ্রামে শিশু-হৃদরোগ চিকিৎসার বেহাল দশা !

ইমাম হোসাইন রাজু 

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১২:৫৬ অপরাহ্ণ

গত ২১ সেপ্টেম্বর ভোরে প্রথম সন্তানের জন্ম দেয় ফেনী জেলার বাসিন্দা খাদিজা আক্তার। কিন্তু জন্মের পরপরই সদ্য ভূমিষ্ট সন্তানের প্রচণ্ড শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়। অবশ্য, উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে স্থানীয় চিকিৎসকরা পাঠিয়ে দেন চট্টগ্রামে। পরিবারের লোকজন চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করালে প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষায় ধরা পড়ে শিশুটি জন্মগত হৃদরোগের সমস্যা। তবে কয়েক ঘণ্টা শিশুটিকে এনআইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হলেও জন্মের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায় শিশুটি।

শিশুর আত্মীয় জামিল পূর্বকোণকে বলেন, ‘জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে জন্ম নিলেও চট্টগ্রামে শিশু হৃদরোগের চিকিৎসক নেই। যার কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু শিশুর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। নিয়ে যাওয়ার আগেই মারা যায় সে।’

শুধু খাদিজার সন্তানের ক্ষেত্রেই নয়, চট্টগ্রামে বড়দের হৃদরোগের চিকিৎসার পরিধি দিনদিন বৃদ্ধি পেতে থাকলেও শিশুদের হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা একেবারেই নাজুক। চট্টগ্রামের কোন সরকারি হাসপাতালেই নেই শিশু হৃদরোগ চিকিৎসক বা পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট। বেসরকারি দু-একটি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকলেও নেই চিকিৎসক। সপ্তাহ কিংবা মাসে রাজধানী ঢাকা থেকে হাতেগোনা দু-একজন চিকিৎসক এসে প্রাথমিক সেবা দেন। তাও আবার সবসময় পাওয়া যায়না তাদের। এক কথায় শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা চট্টগ্রামে বেহাল দশা অবস্থা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারিভাবে চট্টগ্রামের একমাত্র টার্সিয়ারি হাসপাতাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পৃথক একটি হৃদরোগ বিভাগ আছে। যেখানে হৃদরোগের পর্যাপ্ত চিকিৎসকসহ চিকিৎসা ব্যবস্থাও রয়েছে। কিন্তু আলোচ্য বিভাগ কিংবা হাসপাতালটিতে নেই শিশু হৃদরোগ চিকিৎসার পৃথক কোন ইউনিট। শিশু হৃদরোগী এলে হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের অন্য সাধারণ রোগীর সঙ্গে রেখেই চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। সময় সময় এসব রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন হৃদরোগ বিভাগের কযেকজন চিকিৎসক। আবার একটু জটিলতা থাকলে তাদের ঢাকায় রেফার করা হয়। তবে এ জন্য হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসকরাও বলছেন- শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ থাকাটা খুবই প্রয়োজন বৃহৎ এ হাসপাতালে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা চট্টগ্রামে অপ্রতুল। সরকারি কোন হাসপাতালে শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ নেই। বেসরকারিভাবেও শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হয়নি। সপ্তাহে একদিন ঢাকা থেকে দু-একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হলেও পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবার জন্য ঢাকাতেই ছুটতে হয় রোগীদের। বিষয়টি নিয়ে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত প্রয়োজন। অন্তত চমেক হাসপাতালে হলেও একজন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ জরুরি।’

এদিকে শিশু হৃদরোগীর সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও হৃদরোগ চিকিৎসকদের সংগঠনের তথ্য বলছে- দেশে বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের হৃদরোগে ভুগছে প্রায় সাড়ে চার লাখ শিশু। প্রতিবছর ৫০ হাজার শিশু জন্মগতভাবে হৃদরোগ নিয়েই জন্ম নিচ্ছে। এসবের মধ্যে বছরে প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি শিশু চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। এমন অবস্থায় শিশুদের হৃদরোগ চিকিৎসা ব্যবস্থায় দ্বিতীয় রাজধানীতে বিশেষ নজর রাখা জরুরি- এমন মত হৃদরোগ চিকিৎসকসহ এ অঞ্চলের স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের। চট্টগ্রাম হাট ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ও চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার দাশ বলেন, ‘দিনদিন আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি ঘটছে। হৃদরোগের চিকিৎসাও বর্তমানে চট্টগ্রামে অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু শিশুদের হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা নাজুক। অপ্রতুল সেবার কারণে এসব রোগীদের চিকিৎসায় ঢাকায় ছুটতে হয়। যদিও আমাদের হার্ট ফাউন্ডেশন বিষয়টি বিবেচনা করে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি যদি হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হলে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে।’

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট