চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪

কাদের-রওশনে দোটানা

চট্টগ্রাম জাপা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১:১৭ অপরাহ্ণ

আগামী নির্বাচনে কোন দিকে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। সরকারের সঙ্গে থাকছে, নাকি অন্য জোটে যাচ্ছে বা স্বতন্ত্র অবস্থান নিয়ে নির্বাচন করবে-তা নিয়ে চট্টগ্রাম জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধোঁয়াশায় রয়েছেন। তবে শীর্ষ নেতারা জানান, দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের প্রতি আস্থা রয়েছে। কেন্দ্র থেকে যে নির্দেশনা আসবে, সেদিকেই যাবেন নেতাকর্মীরা। চট্টগ্রামের জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা জানান, আগামী নির্বাচনে জাপার ভূমিকা নিয়ে ভেতরে-ভেতরে দলের অভ্যন্তরে দুটি ধারা স্পষ্ট হয়েছে। একটি ধারা দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বে, অন্যটি দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে ঘিরে। রওশন এরশাদ ইতিমধ্যেই সরকারের সঙ্গে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

 

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নগর জাপার আহ্বায়ক সোলায়মান আলম শেঠ পূর্বকোণকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটে আছে জাতীয় পার্টি, আগামী নির্বাচনেও মহাজোটে থাকবে। কারণ গত তিনটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ছাড়া সরকার গঠন করতে পারেনি মহাজোট। আগামীতেও আওয়ামী লীগ জাপা একসঙ্গে থাকবে।’ তিন মাস আগে রওশনপন্থীরা চট্টগ্রামের তিন সাংগঠনিক জেলা ও পার্বত্য জেলায় জাতীয় পার্টির আলাদা কমিটি ঘোষণা করেছে। তবে ওই কমিটির কার্যক্রম এখনো চোখে পড়েনি। বার্ধক্যসহ নানা জটিলতায় শারীরিকভাবে অসুস্থ রওশন এরশাদ।

 

নগর জাপার সদস্য সচিব এয়াকুব চৌধুরী বলেন, ‘অস্থিত্বহীন লোকজনদের নিয়ে রওশন এরশাদ-সমর্থিতরা কমিটি ঘোষণা করেছেন। তাদের কোনো তৎপরতা নেই।’ পার্টির সদস্য সচিব মো. এয়াকুব চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘রাজনীতির পরিবেশ এখন ভালো নেই। কেন্দ্র ও নগর নেতা-কর্মীদের মধ্যে অনেক সমস্যা আছে। দলের বেশির ভাগ সংসদ সদস্য চায় সরকারের সঙ্গে থাকতে। আর জেলা, নগর ও তৃণমূল নেতা-কর্মীরা চায় স্বতন্ত্র অবস্থান নিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, খুন-গুম নিয়ে মাঠে থাকতে। নিজেদের অবস্থান যাচাই-বাছাই করতে। নিজস্ব জোট গঠন করে নির্বাচন করতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দলীয় চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের প্রতি আস্থা রয়েছে।  কেন্দ্র থেকে যে নির্দেশনা আসবে, সেভাবেই কাজ করবেন নেতাকর্মীরা।’

 

চলতি মাসের ১৪ তারিখে নগর জাতীয় পার্টির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। উত্তর জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কেন্দ্রে জিএম কাদের ও রওশন এরশাদের মধ্যে বিরোধের কারণে সম্মেলন স্থগিত করা হয়। তবে নগর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব এয়াকুব চৌধুরী বলেন, জাতীয় নির্বাচনের কারণে সম্মেলন স্থগিত করা হয়।

 

আগামী নির্বাচন নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেনি জাতীয় পার্টি। তবে ভেতরে-ভেতরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আশা অনেকের।

 

দলীয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের এবারও মহাজোটের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ মহাজোটের ব্যানারে এ আসন থেকে তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াও চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে নগর জাপার সদস্য সচিব এয়াকুব চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৯ থেকে নগর জাপার আহ্বায়ক সোলায়মান আলম শেঠ ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) সংসদীয় আসনে সাবেক মেয়র ও সাবেক এমপি মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী ভেতরে-ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নগর জাপার আহ্বায়ক, সদস্য সচিব ও শীর্ষ নেতারা নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা জানান।

 

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেই জাতীয় রাজনীতিতে জাতীয় পার্টিকে শুরু হয় নাটকীয়তা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নতুন করে শুরু হয়েছে পুরোনো নাটক। দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও বিরোধীদলীয় নেত্রী এরশাদ পত্নী রওশান এরশাদকে ঘিরে জাপায় অস্থিরতা বিরাজ করছে।

 

উত্তর জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন আকবর বলেন, ‘পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে উত্তর জেলা জাতীয় পার্টি দলীয় কার্যক্রমে সরব রয়েছে। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার সম্ভাবনা বেশি। সেই হিসেবে ব্যারিস্টার আনিস আবারও মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপি নির্বাচনে আসলে এক ধরনের প্রস্তুতি হবে। না আসলে অন্য কৌশলে হবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচন করলে জাতীয় পার্টি চট্টগ্রামে তিনটি আসন ভাগে চাইবে।

 

এয়াকুব চৌধুরী বলেন, আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য দলীয় হাইকমান্ড নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু আসনভিত্তিক প্রার্থী মিলছে না। দলের কেন্দ্রীয় কমান্ড যে নির্দেশনা দেয়, আমরা আগামী নির্বাচনে সেভাবে প্রস্তুতি নেব।

 

পূর্বকোণ/আরডি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট