চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

চট্টগ্রাম-১০ : ‘দোয়া-শুভেচ্ছার’ আড়ালে ভোটের মাঠে প্রার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

৯ জুলাই, ২০২৩ | ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

দোয়া-অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের আড়ালে কৌশলে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা। একাধিক প্রার্থী দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়, ধর্মীয়-সামাজিক অনুষ্ঠানে দলবল নিয়ে দোয়া চাচ্ছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর বড় আকারে শোডাউন করেছেন একাধিক প্রার্থী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে সরব রয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

 

আগামী ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী, ডবলমুরিং, হালিশহর) আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সাবেক মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমিনের মৃত্যুর কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

 

তফসিল মতে, ৪ জুলাই মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়। ৬ জুলাই মনোনয়নপত্র বাছাই করা হয়। ৬ প্রার্থীর মধ্যে চারজনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে রিটার্নিং অফিসার। স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। ১২ জুলাই প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ১৩ জুলাই প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করবেন প্রার্থীরা।

 

ভোটে চার দলের চার প্রার্থী : বর্তমানে ভোটের মাঠে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো. সামসুল আলম, তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী দীপক কুমার পালিত, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের রশীদ মিয়া। স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী মো. আরমান আলী ও মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং অফিসার। ভোটের সমর্থনসূচক এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরের মিল না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।

 

মনোনয়নপত্র বৈধতার পর প্রার্থীরা ঘরোয়া বৈঠক-সভা, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। মসজিদ-মন্দিরের অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে দোয়া-আশীর্বাদ চাচ্ছেন। চার প্রার্থীর দলীয় প্রতীক নির্ধারণ থাকায় কৌশলে ভোটের মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা।

 

গতকাল শনিবার লালখান বাজারে চট্টগ্রাম-১০ আসনের আওতাভুক্ত নগরের ১০ ওয়ার্ড ও ইউনিট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি ও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু।

 

নির্বাচন আচরণবিধির ৫ ধারায় বলা আছে, কোন প্রার্থী বা তার পক্ষে কোন রাজনৈতিক দল, অন্য কোন ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারবে না।

 

তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী দীপক কুমার পালিত বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো সভা-সমাবেশ না করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার। কোনো অনুষ্ঠানে না গিয়ে ফোনে ফোনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা-বার্তা বলছি। যোগাযোগ রক্ষা করছি।’ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের বিষয়ে তিনি দাবি করেন, ‘আগের ছবি বা শুভেচ্ছা জানানো ছবি ফেসবুকে দিচ্ছেন সমর্থকেরা।’

 

চার প্রার্থীর মধ্যে তিন প্রার্থী ও দলীয় নেতাকর্মীদের ফেসবুক পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দলীয় নেতাকর্মীরা প্রার্থীদের ফুলের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর ছবি শোভা পাচ্ছে। রাজনৈতিক দল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করছে।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই প্রার্থী বলেন, প্রচার-প্রচারণার সময় তো কম। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর নেতাকর্মী-সমর্থক ও ভোটের কাছে কৌশলে যেতে হচ্ছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের ভয়ে কৌশলে প্রচার চালাতে হচ্ছে।

 

জাতীয় পার্টি প্রার্থী মোহাম্মদ সামসুল আলম মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান, সেলিম এন্ড ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন সালামকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। আগামী সোমবার ডবলমুরিং থানা জাতীয় পার্টির উদ্যোগে দেওয়ান হাট এলাকায় নির্বাচনী সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভাপতি শেখ আকতারের বাড়িতে এ সভা ডাকা হয়েছে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের হাত-পা আইনে বাধা রয়েছে। কোন সভা বা অনুষ্ঠানে না যাওয়ার জন্য কমিশন থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনার কারণে সব ধরনের সভায় যোগদান থেকে বিরত রয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

 

প্রসঙ্গত, গত ২ জুন চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমীন মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে ৪ জুন ওই আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ডা. আফছারুল আমীন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। এ আসন থেকে তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

পূর্বকোণ/মাহমুদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট