আনোয়ারায় ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে জোয়ারের পানিতে এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। খোলা বেড়িবাঁধ দিয়ে বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। ঘরবাড়িতে পানি ওঠেছে। এলাকার কয়েক হাজার লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। লোকজনের দুঃখ-দুর্দশা ও ভোগান্তি বাড়ছে। তবে বড় ধরণের কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। গতকাল (শনিবার) দুপুরে আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ও জুঁইদ-ি ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় সাগর থেকে খোলা বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করলে তা বন্যায় রূপ নেয়। বিশেষ করে গহিরা বার আউলিয়া, গহিরা ধলঘাট, পূর্ব গহিরা এলাকায় সাগরের পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়। উত্তাল সাগরের পানি লোকালয়ে আসলে চারদিকে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। বঙ্গোপসাগরে কয়েকফুট পানি বৃদ্ধি পায়। সাগরের জোরালো ঢেউ বেড়িবাঁধে আঘাত এনেছে। জোয়ারের পানিতে বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভাঙ্গার উপক্রম হয়। স্থানীয় চেয়ারম্যান জানে আলম জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণী’র কারণে পুরো এলাকার লোকজন তটস্থ। খোলা বেড়িবাঁধ দিয়ে সাগরের পানি
এলাকায় ঢুকে প্লাবিত হয়। স্থানীয়দের দুর্ভোগ ও দুর্দশা বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি আমিন শরীফ জানান, পূর্ব গহিরায় প্রায় ২ শ ফুট এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়নি। জোয়ারের তোড়ে বিভিন্ন স্থানের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জুঁইদ-ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোরশেদুর রহমান চৌধুরী খোকা জানান, জুঁইদ-ী ৩নং ওয়ার্ডের খোলা বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। স্থানীয় যুবলীগ নেতা আবদুল আজিজ টিপু জানান, দক্ষিণ গহিরা, মধ্যম গহিরা ও পূর্ব গহিরা এলাকা জোয়ারের পানিতে আংশিক প্লাবিত হয়েছে। বার আউলিয়া এলাকা দিয়ে জোয়ারের পানি অবাধে খোলা বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে ঢুকছে। গহিরা মালিয়া পাড়ার জালাল উদ্দিন জানান, জোয়ারের পানি তার ঘরে উঠেছে। রান্নাবান্না করতে পারছেন না। দুপুরে এ প্রতিবেদক সরে জমিনে এলাকা পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, পূর্ব গহিরা বরফকল এলাকায় শঙ্খের পানি বেড়িবাঁধের কানায় কানায়। শঙ্খের ঢেউ বেড়িবাঁধের সাথে ধাক্কা দিচ্ছিলো। বরফকলের সাথে লাগানো প্রায় ৫০ ফুট জায়গা লোকজন বস্তা দিলে এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকতে পারেনি। গহিরা বার আউলিয়া গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগরের ঢেউ উত্তাল ছিলো। বড় বড় ঢেউ সাগর থেকে এসে বেড়িবাঁধে বাধা পাচ্ছিলো। বার আউলিয়া এলাকা দিয়ে সাগরের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে মুহূর্তের মধ্যে এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। দুপুর ১ টার দিকে প্রবল বৃষ্টি ও ধমকা হাওয়া বয়ে যায়। এ সময় ঘরবাড়ি ও বিলে বৃষ্টি ও সাগরের জোয়ারের পানি একাকার হয়ে থৈ থৈ করছিল। কিছু ঘরবাড়ি পানিতে ভাসছে। জোরে ধমকা হাওয়া ও বাতাস বয়ে যাওয়ায় লোকজন ঘরবাড়ি থেকে বের হতে পারেনি। তখন ওই এলাকায় এক ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বার আউলিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রও পানিতে ভাসে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেড়িবাঁধ নির্মিত হওয়ায় বাঁচা মিয়া মাঝির ঘাট ও ছিপাতলী ঘাটসহ রায়পুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী’র ভয়াবহ আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়েছে। জোয়ারের পানি এলাকায় প্রবেশ করতে পারেনি। এলাকাবাসী দ্রুত খোলা বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।