চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

পাহাড় কাটা রোধে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা

বিশেষ এনফোর্সমেন্ট টিম গঠনসহ ৫ দফা সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

১২ জুন, ২০২৩ | ১:২৩ অপরাহ্ণ

পাহাড় কাটা রোধে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেছেন, পাহাড়খেকোদের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রেখে কঠিন আইন তৈরি করতে হবে। ৫০ হাজার বা ১ লাখ টাকা জরিমানা নয়, পরিবেশ ধ্বংসকারীদের সারাজীবন জেলে পুরে রাখতে হবে। একইসঙ্গে পাহাড় কাটা বন্ধে বিশেষ এনফোর্সমেন্ট টিম গঠন করতে হবে। হটলাইন চালু করতে হবে। পাহাড়ি এলাকায় কোনো ধরনের স্থাপনার অনুমোদন দেওয়া যাবে না। পাহাড়ে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া যাবে না।

 

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে গতকাল সকাল ১১টায় হোটেল সৈকতের সাঙ্গু হলে এ সভার আয়োজন করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, নগরীতে কি পরিমাণ পাহাড় ছিল তার সঠিক তথ্য কোথাও আছে বলে মনে হয় না। স্বাধীনতার পর থেকে নগরীর পাহাড় নিয়ে কোন জরিপ করা হয়নি। পাহাড় কেটে বায়েজিদ লিংক রোড নির্মাণ করা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, পাহাড় না কেটে সড়কটি নির্মাণ করা যেত।  আমরা ক্ষমতা পেলে নিজেদের সবজান্তা মনে করি। কারো পরামর্শ শুনি না।

 

আকবরশাহ বেলতলী ঘোনায় সিটি কর্পোরেশনের সড়ক নির্মাণ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, বিএস শিটে ওই এলাকায় ৪০ ফুট রাস্তা রয়েছে। সেখানে পাহাড় কেটে রাস্তা করা হয়নি। কয়দিন আগে মাটি চাপা পড়ে একজন লোক মারা গেছে। সেখানে পাহাড়ের চূড়া কেটে একটি হাউজিং করা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে পাহাড়ের টিলা কেটে রীতিমতো আবাসিক এলাকা করা হচ্ছে। অথচ পরিবেশ অধিদপ্তর নীরব ভূমিকা পালন করছে। মেয়র বলেন, পাহাড় কাটা বন্ধে সব সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করলে আমি সবার আগে থাকব।

 

এর আগে সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নগরীতে ছোট বড় পাহাড়ের সংখ্যা ছিল প্রায় ২০০টি। বিলুপ্ত হয়ে গেছে ১২০টি। ১৯৭৬ সালে নগরীর পাঁচটি থানা এলাকায় মোট পাহাড় ছিল ৩২ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার। ২০০৮ সালে সেটা কমে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ২ বর্গকিলোমিটার। বিগত ৩২ বছরে ১৮ দশমিক ৩৪৪ বর্গকিলোমিটার পাহাড় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। যা মোট পাহাড়ের প্রায় ৫৭ শতাংশ। নগর উন্নয়নে খোদ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) পাহাড় কেটেছে ২০টি।

 

সবচেয়ে বেশি পাহাড় কাটা হয়েছে নগরীর বায়েজিদ, খুলশী, কোতোয়ালী, আকবরশাহ ও পাহাড়তলী এলাকায়। জালালাবাদ, জঙ্গল সলিমপুর, বাংলাবাজার, শেরশাহ, চশমাহিল, অক্সিজেন, লালখান বাজার, ফয়’স লেক, সার্সন রোড এবং পাঁচলাইশ এলাকায় ৮৮টি পাহাড় সম্পূর্ণ এবং ৯৫টি পাহাড় আংশিক কাটা হয়েছে। শুধুমাত্র পাঁচলাইশ এলাকায় কাটা হয়েছে ৭৪ শতাংশ পাহাড়।

 

রিজওয়ানা হাসান বলেন, বিজ্ঞ আদালত নগরীর আকবরশাহ থানার উত্তর পাহাড়তলী মৌজায় পাহাড় কাটার উপর ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদান করেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর পাহাড় কাটা অব্যাহত রাখলে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হয় চলতি বছরে। মামলাটি বর্তমানে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। পাহাড় কাটার অপরাধে কাউন্সিলর জসিমের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে।

 

সিডিএ চেয়ারম্যান জহুরুল আলম দোভাষ বলেন, ভবনের নকশা অনুমোদনে তিনটি কমিটি রয়েছে। সেগুলো হলো- অথরাইজেশন, বিশেষ কমিটি এবং নগর উন্নয়ন কমিটি। এসব কমিটিতে সিডিএ কর্মকর্তারা ছাড়াও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এসব কমিটির ছাড়পত্র পেলেই নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়। সিডিএতে জনবল সংকট রয়েছে। শীঘ্রই লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। জনবল সংকট কেটে গেলে পুরো মাত্রায় কাজ করতে পারবে সিডিএ।

 

লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলাল বলেন, পাহাড়া কাটা রোধে দীর্ঘ এ সভায় সব বক্তা পাহাড় কেটে বসতির কথা বললেন, কিন্তু পাহাড় কেটে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তৈরির কথা কেউ বললেন না। লালখান বাজার মোড়ে সরকারি সংস্থা পাহাড় কেটে একের পর এক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করছে অথচ তাদের বিরুদ্ধে কাউকে কখনো কথা বলতে দেখা যায় না।

 

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর সিকান্দার খান, কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) উমর ফারুক, সহকরী বন সংরক্ষক জয়ানাল আবেদীন প্রমুখ।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট