প্রতিকূল আবহাওয়া, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি এবং ভারতীয় বর্ডার দিয়ে (চোরাই পথে) নিম্নমানের চা প্রবেশের কারণে দেশে চা উৎপাদন কমেছে বলে মনে করছেন বাগান মালিক ও সংশ্লিষ্টরা। এ তিন কারণে ২০২১ সালের তুলনায় গত বছর (২০২২) দেশে চা উৎপাদন কমেছে ২৬ লাখ ৭৭ হাজার কেজি। ২০২২ সালে দেশে চা উৎপাদন হয়েছে ৯৩ দশমিক ৮২৯ মিলিয়ন কেজি বা ৯ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার কেজি। ২০২১ সালে চা উৎপাদন হয়েছে ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৬ হাজার কেজি। সে হিসেবে ২০২১ সালের তুলনায় গত বছর ২৬ লাখ ৭৭ হাজার কেজি কম চা উৎপাদন হয়েছে। অন্যদিকে, চলতি বছর (২০২৩) এপ্রিল পর্যন্ত ৭ দশমিক ৬০ মিলিয়ন কেজি বা ৭৬ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে দেশে।
অন্যদিকে, চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে চা উৎপাদন কমলেও রপ্তানি বেড়েছে। ২০২১ সালের তুলনায় গত বছর চা রপ্তানি বেড়েছে ১ লাখ কেজি। যার বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ চা বোর্ডের নিয়মিত মনিটরিং এবং বাগান মালিক ও শ্রমিকদের নিরলস প্রচেষ্টায় চা রপ্তানি বেড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
খবর নিয়ে জানা যায়, চায়ের নতুন বাজার সৃষ্টি করে রপ্তানি বাড়াতে সম্প্রতি বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ চা বোর্ড। মানসম্মত চা উৎপাদন, উৎপাদন মূল্য কমানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের নিযুক্ত কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের বাংলাদেশি চা শিল্প সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে। শুরুর দিকে বাংলাদেশ থেকে হাতেগোনা কয়েকটি দেশে চা রপ্তানি হতো। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স, অষ্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, সাইপ্রাস, ব্রুনাই, গ্রিস, চীন, জাপানসহ প্রায় ২০টির মত দেশে চা রপ্তানি হচ্ছে। তবে চায়ের আন্তর্জাতিক বাজার ধরে রাখতে হলে, উৎপাদন খরচ কমাতে হবে বলে মনে করেন চা সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে হালদা ভ্যালি টি কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাদের খান বলেন, গত বছর আবহাওয়া আমাদের প্রতিকূলে ছিল। এছাড়া, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়াসহ আরো বেশ কয়েকটি কারণে চা উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া, ভারতীয় বর্ডার দিয়ে (চোরাই পথে) নি¤œমানের চা প্রবেশ করছে, যা অল্প মূল্যে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণেই মূলত চা উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে চা উৎপাদন আরো কমতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশে এমনিতেই চা উৎপাদনের খরচ বেশি। সরকারকে উদ্যোগ নিয়ে এ খরচ কমাতে হবে। এছাড়া, সারাদেশে শিল্প কারখানাসহ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে। সেখানে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। ফলে ধীরে ধীরে চা শিল্পে শ্রমিকের সংকট দেখা দিতে পারে। এসব বিষয় নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে।
চা রপ্তানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০০৮ সালের পর থেকে ক্রমান্বয়ে চা রপ্তানি কমেছে। রপ্তানি একেবারে বন্ধ হওয়ার পথে ছিল। তবুও কিছু কিছু চা রপ্তানি করা হয়েছে। আমাদের দেশের মধ্যেই যেহেতু চায়ের প্রচুর চাহিদা বেড়েছে। উৎপাদনের সমপরিমাণ চাহিদা আমাদের দেশেই সৃষ্টি হয়েছে। তবে সরকার চাইলে চা বাগান মালিকদের প্রণোদনা দিয়ে রপ্তানির জন্য উৎসাহিত করতে পারে।
চা ব্যবসায়ীদের মতে, বাংলাদেশি চায়ের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় বেশি মূল্যে বিক্রয় করতে হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক মার্কেট ধরতে হলে উৎপাদন খরচ কমানোর কোন বিকল্প নেই। আমেরিকা, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, জাপানসহ অনেক দেশে বাংলাদেশের চা রপ্তানি হচ্ছে। বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের চায়ের আলাদা কদরও রয়েছে।
পূর্বকোণ/পিআর