বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) বহরে নতুন ছয়টি জাহাজ যুক্ত করার জন্য জাহাজ ক্রয়ের কার্যক্রম চলমান থাকলেও সর্বশেষ চারটি জাহাজ ক্রয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। চায়নার ২ হাজার ৬২০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা অর্থায়নে ওই দেশ থেকেই চারটি জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত হয়। এসব জাহাজ ক্রয়ের প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত। সে হিসেবে চারটি জাহাজ বিএসসি’র বহরে যুক্ত হতে অপেক্ষা করতে হবে আরো তিন বছর।
তবে এসব জাহাজ একসাথে না এসে প্রকল্পের মেয়াদের ভেতরেই বিএসসির বহরে যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন বিএসসি কর্তৃপক্ষ। এ মুহূর্তে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এন্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনকে (সিএমসি) জাহাজ ক্রয়ের জন্য কার্যাদেশ দেওয়ার দাপ্তরিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানান বিএসসি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। জিটুজি ভিত্তিতে চীনা অর্থায়নে এসব জাহাজ কিনতে গত ১৮ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। মূলত জ্বালানি পরিবহনে বিদেশি জাহাজের ওপর নির্ভরতা কমাতে দুটি মাদার ট্যাংকার কিনতে যাচ্ছে সরকার। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়লা, সিমেন্ট ক্লিংকার, গমের মত পণ্য দেশে আনতে দুটি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার কেনা হচ্ছে।
প্রকল্পের প্রস্তাব অনুযায়ী ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) নিজস্ব সময়সূচি অনুযায়ী মাদার ট্যাংকারে জ্বালানি পরিবহন করা হবে।
আমদানি করা ক্রুড অয়েল সরাসরি আনলোড করার জন্য বঙ্গোপসাগরে মহেশখালীর পশ্চিম প্রান্তে ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং’ নামের একটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ফলে যে দুটি মাদার ট্যাংকার কেনা হচ্ছে, সেসব জাহাজ বঙ্গোপসাগরে ভিড়িয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে হতে ক্রুড অয়েল ও রিফাইন্ড প্রোডাক্ট সরাসরি ইস্টার্ন রিফাইনারির ডিপোতে স্থানান্তর করা সম্ভব হবে।
অন্যদিকে খাদ্য বিভাগ ও অন্যান্য সংস্থার জন্য গম, চাল, সিমেন্ট ক্লিংকার, সারের মত পণ্য দেশের বাল্ক ক্যারিয়ারে পরিবহন করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক রুটে জাহাজ ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ও হবে। প্রতিটি মাদার ট্যাংকারের ধারণ ক্ষমতা ১ লাখ ১৪ হাজার ডিডব্লিউটি সম্পন্ন। আর প্রতিটি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার ৮০ হাজার ডিডব্লিউটি পণ্য পরিবহন করতে পারবে। চার জাহাজের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬২০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, যার মধ্যে চীন থেকে ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে ২ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা; বাকি ১৩৪ কোটি টাকার যোগান দেওয়া হবে বিএসসি’র নিজস্ব অর্থায়ন থেকে।
এর আগে গতবছর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে নৌপরিবহন সচিব মো. মোস্তফা কামালের সাথে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এন্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে চীনা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা জাহাজ সরবরাহের ব্যপারে তাদের দর প্রস্তাব করেন। সেই দর সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে পর্যালোচনার ৪টি জাহাজ কেনার জন্য একনেকে প্রস্তাব পাঠায়।
পূর্বকোণ/পিআর