চট্টগ্রাম সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘জনপ্রিয়তাই’ কাল হলো তাদের

ইমাম হোসাইন রাজু

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৩:০৩ অপরাহ্ণ

ক্লাসের সহপাঠীদের কাছে ‘জনপ্রিয়’ হওয়ার কারণেই চার সাধারণ শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। আর বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়ে আইসিইউতে যেতে হয় দুই শিক্ষার্থীকে। কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগে এসব বিষয় তুলে ধরেছেন বেধড়ক মারধরের শিকার আইসিইউতে যাওয়া দুই শিক্ষার্থী। পাশাপাশি ভবিষ্যতে নিরাপত্তাও চেয়েছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। যদিও অভিযুক্তরা দাবি করে আসছিলেন- চারজনই শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত। এজন্যে তাদের শাসানো হয়েছে, মারধর করা হয়নি। এদিকে, দুই শিক্ষার্থীর দেয়া অভিযোগের মিল পাওয়া গেছে সহপাঠীদের সাথে কথা বলেও। ঘটনার পর থেকেই সহপাঠীরা বলেছিলেন- ভর্তির পর থেকে ক্লাসের মনিটর (ক্যাপ্টেন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল নির্যাতনের শিকার হওয়া সাকিব। যা একই ব্যাচের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী অভিযুক্ত সাজু দাশ মেনে নিতে পারতেন না। এ নিয়ে এর আগেও একাধিকবার সাকিবকে ‘শাসানো’ হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।  কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে পৃথকভাবে ১৩ পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগে নির্যাতনের শিকার সাকিব হোসেন ও জাহিদ হোসেন ওয়াকিল উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক কর্মী না হওয়া সত্বেও সহপাঠীদের কাছে ‘জনপ্রিয়’ হওয়ায় ক্ষোভ তৈরি হয় সহপাঠী সাজু দাশের। এ কারণেই তাদের নির্যাতন করা হয়।  সাকিব হোসেন তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘২০২০ সালে ৬২ তম ব্যাচের বি সেকশনের মনিটর (ক্যাপ্টেন) হতে চেয়েছিল অভিযুক্ত সাজু দাশ। কিন্তু ক্লাস টিচার আমাকে মনিটর নির্বাচন করেন যা সহ্য করতে পারেননি সাজু। এতে বিভিন্নভাবে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে মনিটরশিপ থেকে সরে দাঁড়াই। ২০২১ সালে কলেজের প্রধান মনিটর ঠিক করে দেন, তখন বি সেকশনের জন্য আলাদা মনিটর ঠিক করতে গিয়ে ক্লাসে সবাই পুনরায় আমাকে নির্বাচিত করতে চায় এবং মেসেঞ্জারে ভোটাভোটি হয়। কিন্তু আবারো সাজু আমাকে ফোন দিয়ে হুমকি দেয় এবং যারা মেসেঞ্জারে ভোটের আয়োজন করে তাদেরকও হুমকি দেয়। ফলে আমি আর ঝামেলায় না গিয়ে সরে দাঁড়াই। কলেজের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও বিভিন্ন কর্মকা-ে আমি নেতৃত্বমূলক আচরণ করতাম এবং আমার আলাদা জনপ্রিয়তা ছিল সবার কাছে। যার কারণে হিংসা হতো তাদের। তারা এ জনপ্রিয়তাকে মেনে নিতে পারতো না। আমি সন্ধানীর সক্রিয় সদস্যও ছিলাম। এরমধ্যে ২০২১ সালে মেইন হোস্টেলের ডাইনিংয়ে ডেকে সবার সামনে হুমকি দেওয়া হয় এবং নানাভাবে ফোনে হুমকি দিতে থাকে। যার কারণে সন্ধানী থেকেও পদত্যগ করি। তাছাড়া হোস্টেলের যে রুমে আমি থাকতাম, সবাই আমার কাছে আসতো বেশি। এসব কিছু সহ্য হতো না তাদের। আর এসবের কারণেই নির্যাতন চালানো হয়।’

 

জাহিদ হোসেন ওয়াকিল উল্লেখ করেন, ‘প্রথম বর্ষে সাকিব কিছুদিন মনিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। ওকে সবাই অনেক পছন্দ করতো। জনপ্রিয় হওয়ায় আমিও তাকে পছন্দ করি। যখন নাসিরাবাদের হোস্টেল থেকে আমাদের প্রধান ছাত্রাবাসে নিয়ে আসা হয়, তখন থেকেই সাকিব আমার রুমমেট ছিল। একসঙ্গে আমাদের চলাফেরা। যেহেতু সাকিব সবার কাছে প্রিয় ছিল, আর আমি যেহেতু সাকিবের রুমমেট, তাই তারা আমাদের দু’জনকে মেরেছে। শুধু তাই নয়, মাহিন, সৌরভ এসে আইসিইউ থেকে আমাকে মর্গে পাঠানোর হুমকিও দিয়েছে।’

 

এদিকে, আলোচনায় আসা সাজু দাশের বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এক পর্যায়ে সংযোগ বন্ধ করে দেন। যদিও গত শনিবার সাজু দাশ পূর্বকোণকে বলেছিলেন, ‘তারা (সাকিব ও ওয়াকিল) হচ্ছে শিবিরের ক্যাডার, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রমাণ আছে।’

 

দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, মহড়াও দিচ্ছেন অভিযুক্তরা : সহপাঠীকে আটকে রেখে নির্যাতন করার এক সপ্তাহ পার হলেও এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। কিংবা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি কলেজ প্রশাসন কিংবা পুলিশ প্রশাসন। আর এ সুযোগে প্রকাশ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অভিযুক্তরা। শুধু তাই নয়, নির্যাতনের শিকার দুই শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও প্রকাশ্যেই তাদের সামনে মহড়াও দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি প্রকাশ্যে কলেজের ক্যাম্পাস ও অধ্যক্ষের কার্যালয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে তাদের। এতে করে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটছে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের। এদিকে, গতকাল আলোচ্য ঘটনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কলেজের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক চলাকালীন সময়েও কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে প্রকাশ্যে মহড়া দিতে দেখা গেছে অভিযুক্তদের। অথচ ওই সময়ে কলেজের জরুরি একাডেমিক কাউন্সিল সভা চলছিল।

 

পুলিশ বলছে, নির্যাতনের শিকার হওয়া কিংবা কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে কোন লিখিত আবেদন না পাওয়ায় অভিযুক্তদের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। আর কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন- তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর সর্বোচ্চ শাস্তি গ্রহণ করা হবে। অন্যদিকে, সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, বারবার ছাড় পেয়ে যাওয়ার কারণেই এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে অভিযুক্তরা। যে কারণে বেপরোয়া হয়ে ওঠেছেন তারা।

 

এদিকে, লিখিত চিঠিতে শিক্ষার্থীর পাশাপাশি তাদের মা-বাবারাও নিরাপত্তার আকুতি জানিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষের কাছে। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় শঙ্কায় ভুগছেন তাঁরা।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট