চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভর মৌসুমেও কমেনি লবণের দাম

ইফতেখারুল ইসলাম

৭ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ

শুষ্ক মৌসুমে গত বছর দেশে প্রতি মাসে আড়াই লাখ টনের বেশি লবণ উৎপাদন হয়। কিন্তু গত দুই মাসে লবণ উৎপাদন হয়েছে মাত্র এক লাখ ৭০ হাজার টন। এ কারণে উৎপাদন মৌসুমেও কমেনি পণ্যটির দাম। চাষীরা বলছেন বৈরি আবহাওয়ার কারণে লবণ উৎপাদন কিছুটা কম হচ্ছে। যেহেতু আগামী মে পর্যন্ত লবণের মৌসুম পড়ে আছে, অনুকূল আবহাওয়া পেলে ঘাটতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। গত মৌসুমে (২০২১-২২) সারাদেশে রেকর্ড পরিমাণ মোট ১৮ লাখ ৩২ হাজার টন লবণ উৎপাদন হওয়ার পরও ৫ লাখ টন ঘাটতি হয়। এবারের চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ টন।

 

ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ে বর্তমানে প্রতিবস্তা (২৫কেজি) আয়োডিনযুক্ত ভ্যাকুয়াম লবণ বিক্রি হচ্ছে ৯২০-৯৩০ টাকার মধ্যে। যা সাধারণত মৌসুমের সময় ৫৫০-৬২০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। শিল্পের কাঁচামালের জন্য ব্যবহৃত প্রতিবস্তা (৭৪ কেজি) আয়োডিনবিহীন লবণ বিক্রি হচ্ছে ১২৮০ থেকে ১৩০০ টাকা দামে। যা কয়েকদিন আগে দেড় হাজার টাকা ছিল এবং মৌসুমের সময় সর্বোচ্চ ৭০০-৭৫০ টাকার মধ্যেই দাম থাকে। এমনকি গত মে পর্যন্ত প্রতি বস্তা আয়োডিনবিহীন লবণের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা।

 

চাক্তাইয়ের মেসার্স হাজি আহমদ লাল মিয়া সল্ট ক্রাসিং ইন্ডাস্ট্রিজের আসাদুজ্জামান পূর্বকোণকে বলেন, গত বছর সংকট ছিল। দেড় লাখ টন আমদানি করা হয়েছিল। আরো দুই লাখ টন আমদানির উদ্যোগ নিলেও ডলার সংকটের কারণে আমদানি করা যায়নি। লবণের মৌসুম শুরু হয়েছে নভেম্বরে। দুই মাসে উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ৩৮ হাজার টন। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে মৌসুমের শুরুতে লবণ উৎপাদনে কিছুটা ব্যঘাত ঘটছে। তাই দাম এখনো কমেনি। তিনি বলেন, উৎপাদন মৌসুম হিসেবে এই সময়ে সাধারণত লবণের দাম থাকে সর্বনিম্ন। কিন্তু গত মে মাস থেকে দাম বেড়েছে।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে মোট উৎপাদিত লবণের প্রায় ৯০ শতাংশ আসে কক্সবাজার থেকে। বাকি ১০ শতাংশ হয় চট্টগ্রামের বাঁশখালীসহ দেশের অন্যান্য উপকূলীয় এলাকায়।

 

উৎপাদন কম হওয়ার বিষয়ে কক্সবাজার টেকনাফ এলাকার লবণ চাষী রবিউল আলম বলেন, লবণ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য রাতে শীত আবার দিনে কড়া রোদ দরকার। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন কিছুটা কমেছে। বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নের লবণ চাষী রমজান আলী বলেন, গত বছর মৌসুমের সময় প্রতিমণ লবণ বিক্রি হয়েছে ১৮০-২০০ টাকায়। যা এবছর বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। তবে গত বছরের তুলনায় উৎপাদন খুবই কম।

 

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) তথ্যমতে, দেশে নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত ৭ মাস লবণ উৎপাদন হয়। চলতি অর্থ বছরে (২০২২-২৩) দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন। সেই হিসেবে প্রতিমাসে সাড়ে তিন লাখ টন লবণ উৎপাদন প্রয়োজন।

 

বিসিকের লবণ মাঠ পরিদর্শক ইদ্রিস আলী পূর্বকোণকে জানান, চলতি বছর নভেম্বরের ১ তারিখ থেকেই লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। যা গত বছর সম্ভব হয়েছিল নভেম্বরের শেষের দিকে। সেদিক দিয়ে চাষীরা এগিয়ে আছে। লবণের দাম না কমা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত বছর উৎপাদন ব্যয় ছিল প্রতিমণ ২২০ টাকা। এবার নানা কারণে তার চেয়ে বেশি হবে। তবে কিছুদিন ধরে ঘণ কুয়াশার কারণে লবণ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কারণ এই ফসলটির জন্য কড়া রোদের প্রয়োজন হয়। ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, লবণের মজুদ হয়তো নেই। যা উৎপাদন হচ্ছে তা দিয়েই চাহিদা পূরণ হয়ে যাচ্ছে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিকের এক কর্মকর্তা পূর্বকোণকে বলেন, প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ লবণ আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হয়। সরকার প্রায় এক লাখ টন লবণ মজুদ রাখে। একথা সত্য যে, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা লবণ আমদানি করার জন্য সবসময় মুখিয়ে থাকেন। কারণ আমদানি করতে পারলেই লাভ। তার প্রধান কারণ হল প্রতিবেশী দেশে লবণের দাম কম। আবার মানও ভালো। সরকারের নীতি হল লবণ উৎপাদনে স্বাবলম্বী হওয়া।

 

পূর্বকোণ/আর

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট