চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

গাড়ির চেয়েও ‘চাঁদা’ বড়

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৭ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ

আরাকান সড়কের কালুরঘাট সেতু থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত পিঁপড়ার ঝাঁকের মতো গিজগিজ করে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এসব ব্যাটারি রিকশার যন্ত্রণায় অন্যান্য যানবাহন চলাচল বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। এলোমেলোভাবে চলাচলের কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও যানজট নিত্যনৈমিত্তিক কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ছোট-বড় দুর্ঘটনা তো লেগেই রয়েছে। অথচ মহাসড়কে ব্যাটারি রিকশা চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। শুধু তা নয়, এসব রিকশার ব্যাটারি চার্জের পেছনে প্রচুর বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ থাকলেও নিশ্চুপ রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। অথচ বিদ্যুৎসাশ্রয়ের কড়া নির্দেশনা রয়েছে সরকারের।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চান্দগাঁও এলাকার বিভিন্ন সড়ক-উপ-সড়কে অন্তত চার হাজার ব্যাটারি রিকশা রয়েছে। এরমধ্যে দিনে আড়াই হাজারের বেশি রিকশা নিয়মিত চলাচল করে। রিকশাপ্রতি দিনে আড়াই শ টাকা চাঁদা দিতে হয়। দিনে আড়াই হাজার রিকশা চলাচল করলেও আড়াই শ টাকা হিসাবে চাঁদা ওঠে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। যা মাসে দাঁড়ায় এক কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পুলিশের নামে এসব চাঁদা আদায় করেন ব্যাটারি রিকশাচালক সমিতির নেতারা। গতকাল (শুক্রবার) সন্ধ্যায় গ্রাহক সেজে কথা হয় ব্যাটারি রিকশা চলাচলের নিয়ন্ত্রক মো. বেলালের সঙ্গে। নতুন রিকশা নামানোর বিষয়ে কথা হয়। তিনি বললেন, ‘দিনে গ্যারেজ ভাড়া ও চার্জ খরচ ১২০ টাকা। লাইন খরচ ১৩০ টাকা। রিকশা রাস্তায় নামালে দিনে ২৫০ টাকা খরচ পড়ে। না নামলেও গ্যারেজ ভাড়া দিতে হবে ৪০ টাকা।’

 

সমিতির একাধিক নেতা ও রিকশাচালকের সঙ্গে কথা হয়। তারা বললেন, ‘চাঁদা আদায়ের বড় অংশ খরচ হয় পুলিশ, বিদ্যুৎ বিভাগ, জনপ্রতিনিধি ও সরকারদলীয় নেতাদের পেছনে।’

 

ব্যাটারি রিকশা সমিতির নেতা মো. ইসমাইলের সঙ্গেও নতুন গাড়ি নামানোর বিষয় নিয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘দিনে দুইশ টাকা দিতে হবে। এরমধ্যে পুলিশ ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের আমরা ম্যানেজ করবো।’ বিদ্যুতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আর চোরা লাইন ব্যবহারের সুযোগ নেই। প্রি-পেইড মিটারে চার্জ দেওয়া হয়। এক-একটি গ্যারেজে মাসে লাখ, দেড় লাখ টাকার কার্ড কিনতে হয়।’

 

সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর চান্দগাঁও থানার মোহরা, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, সিএন্ডবি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যাটারিরিকশা চলে আসছে। কালুরঘাট, মোহরা, মৌলভী পুকুর পাড়, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, মাজার গেট, সিএন্ডবি মোড়, সিএন্ডবি শিল্প এলাকা, হামিদচর, ওসমানিয়ার পুল, গোলাপের দোকান, কুয়াইশ এলাকায় বিভিন্ন সড়ক, উপ-সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিরিকশা। চার থেকে সাড়ে চার হাজার ব্যাটারিরিকশা চলাচল করছে এসব এলাকায়। নগরীর অন্যতম প্রধান সড়ক আরাকান সড়কে বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাসসহ ছোট-বড় ও মাঝারি যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব ব্যাটারিরিকশা। ফলে যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ও যানজট লেগে রয়েছে।

 

অভিযোগ রয়েছে, টোকেন বা চাঁদা দিয়ে চলাচল করছে এসব রিকশা। ব্যাটারিরিকশার কারণে চাপ পড়ছে বিদ্যুতের ওপর। এছাড়াও অপ্রাপ্ত বয়স্ক-শিশু ও অদক্ষতা চালকের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটনা দুর্ঘটনা। ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশনা দেন।

 

নগর ট্রাফিক পুলিশের চান্দগাঁও থানার টিআই মো. মোশাররফ হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রধান সড়কে (আরাকান সড়ক) ব্যাটারি রিকশা চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। আদালতের নির্দেশে মানবিক কারণে অলিগলিতে চলাচল করে।’

 

চান্দগাঁও থানা এলাকার অলিগলিতে এসব রিকশায় চার্জ দেওয়ার জন্য গড়ে ওঠেছে অসংখ্য গ্যারেজে। এলাকাভিত্তিক বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাসোহারা দিতে হয়। এ বিষয়ে জানতে বিদ্যুৎ বিভাগের কালুরঘাট শাখার নির্বাহী প্রকৌশলীর মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়ার পরও ফোন রিসিভ করেননি তিনি।

 

পূর্বকোণ/আর

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট