চট্টগ্রাম সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

টাকা নেয়, সময় বাড়ে টেন্ডার নেই ৭ বছরেও

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৫ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অভ্যন্তরীণ সড়ক পরিবহন ঠিকাদার (আইআরটিসি) নিয়োগের টেন্ডার হয়েছিল সাড়ে সাত বছর আগে। অথচ দুই বছর অন্তর অন্তর টেন্ডার হওয়ার কথা রয়েছে। ২০১৫ সালে ঠিকাদার নিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিন মাস করে সময় বাড়িয়ে চলছে খাদ্যশস্য পরিবহন। অভিযোগ রয়েছে, সময় বাড়ানোর জন্য প্রতি ঠিকাদারকে উৎকোচ দিতে হয় খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের।

 

খাদ্য বিভাগ জানায়, চট্টগ্রাম জেলার অভ্যন্তরীণ খাদ্য গুদামে সরকারি খাদ্যশস্য পরিবহনের কাজ করে ২৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মূলত তা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে চার জনের একটি সিণ্ডিকেট। নামে-বেনামে একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ওই সিন্ডিকেটের। তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে আইআরটিসির টেন্ডার। এতে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিচ্ছে ওই সিন্ডিকেট। অপরদিকে, খাদ্যশস্য পরিবহন খাতে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি গুনছে সরকার।

 

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় জানায়, জেলায় সরকারি খাদ্য গুদামে খাদ্য পরিবহনের সর্বশেষ টেন্ডার হয় ২০১৩ সালের জুন মাসে। ২০১৫ সালের জুনে এই মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তবে ২০১৭ সালে টেন্ডারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তা আবার বাতিল করা হয়।

 

২০১৫ সালে ঠিকাদারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে তিন মাস করে সময় বৃদ্ধি করে কাজ চলে আসছে। এভাবে অভ্যন্তরীণ সরকারি গুদামে খাদ্য পরিবহন কার্যক্রম চলে আসছে সাড়ে ৭ বছর ধরে। প্রতিবার সময় বাড়ানোর জন্য একেকজন ঠিকাদারকে দুই হাজার টাকা করে উৎকোচ দিতে হয় খাদ্য কর্মকর্তাদের। কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ২৪ ঠিকাদারের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে খাদ্য বিভাগ। নিয়োগ করা হচ্ছে না নতুন ঠিকাদার।

 

চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আবদুল কাদের পূর্বকোণকে বলেন, ‘খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে নতুন করে নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। সেই নীতিমালার নির্দেশনা মতে নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

 

আইআরটিসির ঠিকাদার গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ডিপার্টমেন্ট (খাদ্য বিভাগ) টেন্ডার না করলে আমাদের করার কিছুই নেই। এখন তেলের দামবৃদ্ধি পাওয়ায় গাড়ি ভাড়াও অনেক বেড়ে গেছে। এতে আমাদের পুষায় না। এ নিয়ে বিপদে আছি।’

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেছেন, জেলা খাদ্য বিভাগ সরকারদলীয় একটি প্রভাবশালী ঠিকাদার চক্রের হাতে জিম্মি। ২০১৩ সাল থেকেই ২৪ ঠিকাদারকে দিয়ে খাদ্য পরিবহন করানো হচ্ছে। গুটিকয়েক ঠিকাদারের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে খাদ্য বিভাগ। যার কারণে হয়নি আইআরটিসির টেন্ডার-প্রক্রিয়া।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার গোলাম রব্বানী বলেন, ‘এখানে নিয়ন্ত্রণের কিছুই নেই। যে যার মতো করে নিজেদের প্রোগ্রাম (খাদ্য পরিবহন) করে থাকেন।’ বিভাগীয় সড়ক পরিবহন ঠিকাদার সমিতির সভাপতি সৈয়দ মাহমুদুল হক পূর্বকোণকে বলেন, ‘হ্যাণ্ডলিং ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়ে সরকার নতুন করে নীতিমালা করছে। সেই নীতিমালার আলোকে ঠিকাদার নিয়োগের টেন্ডার প্রক্রিয়া করবে খাদ্য বিভাগ। টেন্ডার না হওয়ার পর্যন্ত তিন মাস অন্তর অন্তর সময় বাড়ানো হচ্ছে।’

 

পূর্বকোণ/আরএ

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট