চট্টগ্রাম সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

মাসে ৫০ লাখ টাকার ‘চাঁদাবাজি’

নিজস্ব প্রতিবেদক

৫ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ

নগরীর কাপ্তাই রাস্তার মাথায় সিএনজিচালিত ট্যাক্সি থেকে টোকেনের নামে প্রতিমাসে অন্তত ৫০ লাখ টাকার চাঁদাবাজি করা হয়। এসব চাঁদার ভাগ পায় পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতা। বড় অঙ্কের এ চাঁদাবাজি দখলে নিতে শ্রমিক নেতাদের মধ্যে রাস্তা দখল ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। কথিত শ্রমিক নেতাদের হাতে অস্ত্র উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

 

কাপ্তাই রাস্তার মাথায় টোকেন বাণিজ্যের রাজা ছিলেন মো. হোসেন। গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর অস্ত্র-গুলিসহ তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। হোসেন গ্রেপ্তার হওয়ার পর বদলে যায় চাঁদাবাজির ক্ষেত্রও। চাঁদাবাজির রাজত্ব রাতারাতি দখলে নেয় হোসেনের শিষ্য আজাদ ও মুজিব। গত ১০ ডিসেম্বর হোসেনের ভাই হাসানকে অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর টোকেন ও চাঁদাবাজির রাজ্য এখন আজাদ-মুজিবের হাতে। টোকেন-চাঁদাবাজি ও তাদের অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ট্যাক্সিচালকেরা।

 

কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে বোয়ালখালী, রাউজান, রাঙ্গুনীয়া, হাটহাজারী ও কাপ্তাই লিচু বাগান এলাকা পর্যন্ত গ্রামচালিত সিএনজি ট্যাক্সি চলাচল করে। এসব রুটে প্রায় সাত হাজার ট্যাক্সি টোকেন নিয়ে চলাচল করে। কথিত শ্রমিক নেতাদের কাছ থেকে এসব টোকেন নিতে হয়।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাউজান, রাঙ্গুনীয়া, হাটহাজারী ও কাপ্তাই লিচু বাগান এলাকায় চলাচল করে অন্তত ৬ হাজার ট্যাক্সি। ট্যাক্সিপ্রতি মাসে ছয়শ টাকা চাঁদা দিয়ে টোকেন নিতে হয়। সেই হিসাবে মাসে অন্তত ৩০ লাখ টাকার চাঁদা তোলা হয়। আর বোয়ালখালী রুটে চলাচল করে হাজারখানেক ট্যাক্সি। এসব ট্যাক্সি থেকেও মাসে ৬শ টাকা করে টোকেন নিতে হয়। সেই হিসাবে মাসে ছয় লাখ টাকার চাঁদা তোলা হয়।

 

এছাড়াও প্রতিদিন সকাল ও বিকেল লাইনম্যানের নামে ১০ টাকা করে ২০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। দিনে চার রুটের প্রায় চার হাজার ট্যাক্সি চলাচল করে। সেই হিসাবে দিনে ৮০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়। মাসে দাঁড়ায় ২৪ লাখ টাকা। সবমিলে মাসে ৫০-৬০ লাখ টাকার চাঁদাবাজি চলে কাপ্তাই রাস্তার মাথায়।

 

কাপ্তাই রাস্তার মাথায় এখন চাঁদাবাজির প্রধান নায়ক হচ্ছেন চট্টগ্রাম অটো ট্যাক্সি অটো টেম্পোর সভাপতি মো. আজাদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। তাদের নেতৃত্বে জাফর ও জাকিরসহ ১৫-২০ জনের গ্রুপ প্রতিদিন লাঠি হাতে রাস্তায় পাহারা দিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে আসছেন বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

 

অভিযোগের বিষয়ে মো. আজাদ বলেন, ‘সংগঠনের সদস্যদের কল্যাণে মাসে ৬শ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়। তাদের বিপদে-আপদে তা খরচ করা হয়। জায়গায় জায়গায় টাকা দিতে হয়।’ পুলিশের নামে চাঁদার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশের নামে কেন চাঁদা নেব। রাস্তায় যানজট নিরসন ও শৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিতদের জন্য দৈনিক চাঁদা তোলা হয়।’ এ প্রতিবেদককে প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কোন দেশে পরিবহন থেকে টাকা নেওয়া হয় না।’

 

সদ্য জামিনে মুক্তি পেয়েছেন মো. হোসেন। তিনি দাবি করেন, ‘প্রতিপক্ষ টাকার বিনিময়ে অস্ত্র দিয়ে আমার ভাইকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেছি। পুলিশ তা তদন্ত করছে।’ অভিযোগ রয়েছে, চাঁদাবাজির ভাগ পায় এমপি, কাউন্সিলর, পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতা। এই চাঁদাবাজির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে প্রায়ই সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা লেগে থাকে।

 

নগর ট্রাফিক পুলিশের চান্দগাঁও থানার টিআই মোশাররফ হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, ‘ট্যাক্সির টোকেনবাজি নিয়ে খুবই বিব্রত ও যন্ত্রণায় আছি। আগে হোসেন নিয়ন্ত্রণ করতো। হোসেন গ্রেপ্তার হওয়ার পর আরেক গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে। বাইরে (উপজেলা) এসব নিয়ন্ত্রণ করে। তারপরও প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে গ্রাম ট্যাক্সি জব্দ করি। মাঝে মাঝে বিশেষ অভিযানও পরিচালনা করা হয়।’ চট্টগ্রাম অটোরিকশা অটো ট্যাক্সি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘নিউজ হলে শ্রমিকেরা বিপদে পড়বে। কাল-পরশু দেখা করে বিস্তারিত বলবো।’

 

পূর্বকোণ/আর

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট