চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪

দাতাদের বড় অংশই তরুণ

ইমাম হোসাইন রাজু

২ নভেম্বর, ২০২২ | ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ

ওমর ফয়সাল। পেশায় একজন চিকিৎসক। শিক্ষাজীবন থেকেই মধ্যবয়সী এ তরুণ নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন স্বেচ্ছায় রক্তদানে। কর্মজীবনে প্রবেশের সাথে সাথেই অঙ্গীকার করেছেন মরণোত্তর চক্ষুদানও করবেন তিনি। শুধু নিজেই নয়, তারমতো মরণোত্তর চক্ষুদানের জন্য অঙ্গীকার করেছেন ডা. ফয়সালের গর্ভধারীনি মা’ও।

 

ডা. ওমর ফয়সাল বলেন, আমি শিক্ষাজীবন থেকেই রক্তদান করছি। রক্তদান সংগঠনের সঙ্গেও কাজ করেছি। নিজের ইচ্ছে থেকেই এখন অঙ্গীকার করেছি, মৃত্যুর পর আমার চোখ অন্যকে দান করবো। আমার উৎসাহ দেখে আমার মা’ও চক্ষুদান করতে রাজি হয়েছেন। মূলত মৃত্যুর পর আমার দেহ কোনো কাজে আসবে না, তার চেয়ে চক্ষু দুটো অন্যকে দান করলে কারও উপকার হবে। মানবিক চিন্তা থেকে আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

 

মরণোত্তর চক্ষুদানের ব্যাপারে শুধু ফয়সাল বা তার মা-ই নন- চট্টগ্রামে তাদের মতো অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বিশেষ করে তরুণেরা বেশি অঙ্গীকার করছেন মরণোত্তর চক্ষুদানের ব্যাপারে। যদিও রক্তদানের সিংহভাগই জোগান দিয়ে যাচ্ছেন এসব তরুণরা।

 

রক্ত ও চক্ষুদান নিয়ে কাজ করা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সন্ধানীর তথ্য অনুসারে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ১২৬ জন মানুষ স্বেচ্ছায় মরণোত্তর চক্ষুদানের জন্য অঙ্গীকার করেছেন। যাদের অধিকাংশই হচ্ছে তরুণ। এরমধ্যে গেল এক বছরে প্রায় ৩০ জন এ তালিকায় নিজেদের যুক্ত করেছেন। যা আগের বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। চক্ষুদান ছাড়াও রক্তদানের ক্ষেত্রেও তরুণদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বলে জানায় সন্ধানী। সন্ধানী ছাড়াও রক্ত নিয়ে কাজ করা অন্য সংগঠনগুলোর চিত্রও একই। তরুণরাই স্বেচ্ছায় রোগীদের রক্তদানে এগিয়ে আসছেন বেশি।

 

সন্ধানী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সভাপতি আমজাদ হোসেন বাবু বলেন, ‘রক্তদানের ব্যাপারে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। কিন্তু মরণোত্তর চক্ষুদানের ক্ষেত্রে তা অনেকাংশেই কম। যদিও সুখবর হচ্ছে অতীতের তুলনায় দিনদিন মরণোত্তর চক্ষুদানে আগ্রহ এখন অনেক বাড়ছে। আগ্রহীদের ও অঙ্গীকার করাদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই তুলনামূলক বেশি। আশা করছি সামনে আরও সংখ্যা বাড়বে।’

 

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি এক যুবক মুঠোফোনে জানায়, তার বাবা মারা গেছেন। বাবার চক্ষু দুটো দান করতে চান। আমরাও দ্রুত গিয়ে সেই দুটো চোখ সংগ্রহ করি। যার একটি কর্নিয়া ঢাকায়, অন্যটি চট্টগ্রামের এক রোগীকে দান করেছি। শুধু এটিই নয়, কোভিড সময়ে রাত ১টার দিকে ফোন আসে চন্দনাইশ থেকে। তখনও আরেক তরুণ তার মায়ের দুটো চোখ দান করতে চান। সেটিও আমরা সংগ্রহ করেছি। বলা চলে আগের চেয়ে এখন অনেকেই আগ্রহী হয়ে ওঠছেন। এভাবে সবার এগিয়ে আসা উচিত।

 

এমন বাস্তবতার মধ্যেই দেশে আজ বুধবার (২ নভেম্বর) পালিত হচ্ছে জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস। মৃত্যুর পূর্বে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত চক্ষুদানের ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করে থাকে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এই চক্ষু ব্যবহার করতে পারেন এবং স্বেচ্ছায় রক্তদান করতে পারেন। সে ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করতেই প্রতিবছর এ দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে চট্টগ্রামসহ সারাদেশেই সরকারি বেসরকারি ও বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হয়। চট্টগ্রামেও দিবসটি উপলক্ষে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা ও র‌্যালির আয়োজন করেছে সন্ধানীসহ বিভিন্ন সংস্থা।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট