চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

সিডিএ’র ৬ লাখ টাকার প্রকল্পের ৪ লাখই হাওয়া!

ইমাম হোসাইন রাজু

২২ অক্টোবর, ২০২২ | ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ

সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের একটি অংশের জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয় ৫ লাখ ৯১ হাজার ১৩৪ টাকার। অথচ সেই অংশে কাজ করা হয় মাত্র ১ লাখ ৮৫ হাজার ১৩৯ টাকার। বাকি ৪ লাখ ৫ হাজার ৯৯৫ টাকাই হাওয়া হয়ে যায়। আর এমনই অনিয়ম ঘটেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অক্সিজেন জংশন হতে কাপ্তাই রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের একটি অংশে। অর্থ লোপাট হওয়ার পেছনে জড়িত ছিলেন খোদ সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য কর্মকর্তারাও। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

দুদক জানায়, প্রকল্পের নামে কাজ না করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে মামলা দায়ের করে দুদক। যদিও মামলা দায়ের হওয়ার পর তা স্থগিত চেয়ে আদালতে রিট করেন আসামি পক্ষ। তবে আদালতের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়ার পর দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর পর মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছে দুদক। অভিযোগপত্রে কাজ না করে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের প্রমাই মেলায় সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসসহ সংশ্লিষ্ট পাঁচ জনের নাম আনা হয়। অভিযোগপত্র জমা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত।

 

দুদক সূত্রে জানা যায়, গত ৪ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক এ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন প্রদান করেন। পরবর্তীতে গত ৯ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক (সংযুক্ত) মো. ফজলুল বারী আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগপত্রে ১০ জনকে সাক্ষী করা হয়। আর আসামি রাখা হয় পাঁচ জনকে।

 

আসামিরা হলেন : সিডিএর’র প্রধান প্রকৌশলী ও তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক কাজী হাসান বিন শামস, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) ইকবাল হোসেন মজুমদার, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল আমিন ভূঁইয়া, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এস্টিমেটর) সৈয়দ গোলাম সরোয়ার ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নাইস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. ইয়াকুব চৌধুরী। দুদক জানায়, ২০০৮ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর তৎকালীন উপ-সহকারী পরিচালক সামছউদ্দিন আহমেদ পাঁচজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

 

মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, অক্সিজেন জংশন হতে কাপ্তাই রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের লট নং-২১ এ বর্ণিত একটি ক্রস কালভার্ট কাজের অনুকূলে ঠিকাদার নাইস এন্টারপ্রাইজ ৫ লাখ ৯১ হাজার ১৩৪ টাকা উত্তোলন করেন। কিন্তু নিরপেক্ষ প্রকৌশলীর পরিমাপ প্রতিবেদন অনুযায়ী উক্ত প্রকল্পে মাত্র ১ লাখ ৮৫ হাজার ১৩৯ টাকার কাজ পাওয়া যায়। বাকি ৪ লাখ ৫ হাজার ৯৯৫ টাকার কাজ না করেই নিজেরা পরস্পর যোগসাজসে আত্মসাৎ করেন।

 

মামলা দায়েরের পর তদন্তকালে কাজী হাসান বিন শাসম হাইকোর্ট বিভাগে মামলা কার্যক্রম স্থগিতাদেশ চেয়ে রিট পিটিশন দাখিল করেন। যারপ্রেক্ষিতে আদালত ২০১২ সালে মামলার তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিলে দুদক তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত করেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ৯ মার্চ দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে জানানো হয় অত্র মামলা কার্যক্রম পরিচালনায় আইনগত কোন বাধা নেই। যদিও আসামিরা সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগে মিস পিটিশন দায়ের করেন। যা বর্তমানে বিচারাধীনের অপেক্ষায় আছে। তবে ২০১৭ সালের ১১ জুন দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে জানানো হয় ক্রিমিনাল মিস পিটিশন আপিল বিভাগের কোন স্থগিতাদেশ নেই। ফলে মামলার তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনায় আইনগত কোন বাধা নেই।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অক্সিজেন জংশন হতে কাপ্তাই রোর্ড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের লট নং-২১ এ বর্ণিত একটি ক্রস কালভার্ট নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৫ লাখ ৯১ হাজার ৪৫০ টাকা।

 

উক্ত প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দরপত্র বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে ৩টি দরপত্র পাওয়া যায়। দাখিলকৃত দরদাতাগণের মধ্যে মেসার্স নাইস এন্টারপ্রাইজের দাখিলকৃত ৬ কোটি ৪৯ লাখ ১২২ টাকা দর সর্বনিম্ম হলেও টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির ২০০৬ সালের ২৩ জানুয়ারির ২য় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রাক্কলিত ৫ লাখ ৯১ হাজার ৪৫০ টাকা ধরে মেসার্স নাইস এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তীতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।

 

তদন্তে দেখা যায়, ২০০৬ সালের ২ মে সিডিএ’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ গোলাম সারোয়ার এবং সহকারী প্রকৌশলী নুরুল আমিন ভূঁইয়া প্রকল্পের বাস্তবায়িত কাজের পরিমাপ গ্রহণ করে পারিমাপ বহিতে ৫ লাখ ৯১ হাজার ১৩৪ টাকার কাজের হিসাব লিপিবদ্ধ করে স্বাক্ষর করেন।

 

আর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী বর্তমানে প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শাসম কোন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই বিলের অনুমোদনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন মজুমদারের কাছে বিল উপস্থাপন করেন। তিনিও তা যাচাই না করেই প্রধান প্রকৌশলী ও চেয়ারম্যানের চূড়ান্ত অনুমোদন নিয়ে ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করেন।

মামলা রুজুর পূর্বে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের উপস্থিতিতে বাস্তবায়িত প্রকল্পের সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া এবং আবদুল মতিনের সহযোগিতায় পরিমাপ করা হয়। কিন্তু পরিমাপে মাত্র ১ লাখ ৮৫ হাজার ১৩৮ টাকার কাজ পাওয়া যায়। বাকি ৪ লাখ ৫ হাজার ৯৯৫ টাকার কাজ না করেই যোগসাজসে আসামিরা আত্মসাৎ করেন।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট