চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪

ট্রমা সেন্টার নিজেই ট্রমায়!

ইমাম হোসাইন রাজু ও আহমদ মনির

১৭ অক্টোবর, ২০২২ | ১১:০০ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের বাসিন্দা মাহবুবুল আলম। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে টমটমে চড়ে কর্মস্থলে যাওয়ার পথিমধ্যেই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। কিন্তু আশপাশের কোন হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে ছুটে আসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। নিরাপদ সময়ের মধ্যে জীবন ফিরে পেয়েছেন ঠিকই কিন্তু হারিয়ে ফেলেন হাঁটা-চলার শক্তি। দুর্ভাগ্যবশত বরণ করেন পঙ্গুত্ব।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকগণ জানান, মাহবুব যদি দুর্ঘটনার এক ঘণ্টার মধ্যে সঠিক চিকিৎসা সেবা পেতেন তাহলে পঙ্গুত্ব থেকে সহজেই বেঁচে যেতেন। সেই সুযোগও ছিল। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাঝপথে লোহাগাড়ার বিশেষায়িত ট্রমা সেন্ট্রারটি যদি চালু থাকতো তাহলে সেখানেই তিনি ২০ মিনিটের ব্যবধানে চিকিৎসা সেবা নিতে পারতেন। ফিরে পেতেন স্বাভাবিক জীবন। দুর্ঘটনার শিকার মাহবুব সেই সুযোগটি পাননি। পৌনে চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিশেষায়িত ট্রমা সেন্টারটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের ৯ বছর পরও চালু হয়নি। যে কারণে মাহবুবের মতো অসংখ্য মানুষকে পঙ্গুত্ববরণসহ প্রাণ হারাতে হচ্ছে পথিমধ্যে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনাসহ গুরুতর রোগীদের জরুরি সেবা প্রদানে ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু হয় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া ট্রমা সেন্টারের। প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিশেষায়িত এ হাসপাতালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু চালু হলেও তাতে জনবল আর যন্ত্রপাতি না থাকায় কোন কাজেই আসছে না। কাগজে কলমে ট্রমা সেন্টার থাকলেও বাস্তবে কিছুই নেই এ বিশেষায়িত হাসপাতালে। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয়সহ সুশীল সমাজ। একই সঙ্গে দ্রুত ট্রমা সেন্টারের কার্যক্রম চালুকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবিও জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে দেখা যায়, আসবাপত্রভর্তি কক্ষগুলো রোগীশূন্য অবস্থায় হাহাকার করছে এবং স্বল্প পরিমাণের যন্ত্রপাতি কক্ষের ভেতর এমনিভাবে পড়ে আছে। স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় বহির্বিভাগের কিছু কার্যক্রম চললেও জনবল ও ডাক্তারের অভাবে তাও এক পর্যায়ে ব্যাহত হয়ে পড়েছে। যেন ট্রমা সেন্টারটি শুধুমাত্র কালের সাক্ষী হয়ে ফরিয়াদির কাটগড়ায় দাঁড়িয়ে নীরবে কাঁদছে।

 

লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ট্রমা সেন্টারটি দক্ষিণ চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু উদ্বোধন হয়েছে বটে, তবে প্রযোজনীয় জনবলের জন্য কোন পদ সৃষ্টি হয়নি। বিশ শয্যার প্রযোজনীয় আসবাপত্র থাকলেও সংশিষ্ট যন্ত্রপাতির প্রচুর অভাব রয়েছে। অতীতে স্বাস্থ্য বিভাগের অর্থোপেডিক ডাক্তার দিয়ে কিছু কিছু চিকিৎসা সেবা দেয়া হলেও প্রযোজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। যদিও এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে, কিন্তু এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন কার্যকারিতা দেখা যায়নি।

স্থানীয়রা বলছেন, ভবনটি তৈরি করতে সরকারের বহু টাকা ব্যয় হয়েছে এবং বর্তমান মজুদকৃত আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতির মূল্যও অনেক টাকা। কোন ধরনের কার্যক্রম চালু না হওয়ায় তাদের কাছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নীরবতা এক প্রকার প্রশ্নবিদ্ধ। তাই এলাকাবাসী উক্ত ট্রমা সেন্টারের কার্যক্রম চালুকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট