চট্টগ্রাম সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘স্থায়িত্ব’ বাড়াতে মহাসড়কে এই প্রথম পলিমার বিটুমিন

মিজানুর রহমান

৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ | ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ

দেশে প্রথমবারের মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পলিমার মডিফাইড বিটুমিন ব্যবহার করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। দুবাই থেকে আমদানি করা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই বিটুমিন ব্যবহারের কারণে মহাসড়কটির স্থায়িত্ব বাড়বে। ভারী থেকে অতি ভারী যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে। ঘনঘন মহাসড়ক সংস্কারের প্রয়োজন হবে না। সংস্কার ব্যয় কমে আসবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন- চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সিংহভাগ পণ্য আমদানি-রপ্তানি হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ভারী যানবাহনের চাপ সব সময়ই বেশি থাকে। যে কারণে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করেও এই মহাসড়ক টেকসই করা যাচ্ছে না। সংস্কারের কিছু দিন যেতে না যেতেই ছোট-বড় গর্ত তৈরি হচ্ছে। দেবে যাচ্ছে। এতে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

এই অবস্থায় উন্নত বিশ্বের মতো দেশেও পলিমার মডিফাইড বিটুমিন ব্যবহারের পরিকল্পনা নেয় সরকার। বিটুমিনের সঙ্গে প্লাস্টিক মেশানের কারণে পলিমার মডিফাইড বিটুমিন দিয়ে করা মহাসড়কে ৭৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে মাইনাস ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও কোনো পরিবর্তন হয় না। বিটুমিন গলে যায় না। রাটিং হয় না। ফলে মহাসড়কের স্থায়িত্ব নিশ্চিত হয়।

২০১৭ সালে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানিং ওয়েতে প্রথমবারের মতো পলিমার মডিফাইড বিটুমিন ব্যবহার করা হয়। এরপর সিলেট বিমানবন্দরের রানিং ওয়েতে এবং কাঁচপুর-মেঘনা গোমতী সেতু নির্মাণে ব্যবহার করা হয় পলিমার মডিফাইড বিটুমিন। তবে দেশের প্রথম কোনো মহাসড়ক হিসেবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেই পলিমার মডিফাইড বিটুমিন ব্যবহার করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়- ২০১৯ সালে চট্টগ্রামের সিটিগেট থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকা পর্যন্ত ১৯২ কিলোমিটার মহাসড়কে পলিমার মডিফাইড বিটুমিন ব্যবহারের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৯ এর জুলাই থেকে ২০২৩ এর জুন পর্যন্ত। পুরো প্রকল্পে পলিমার মডিফাইড বিটুমিন ব্যবহার করা হবে ২৮ হাজার টন।

দুইটি প্যাকেজে এই প্রকল্পের কাজ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। এরমধ্যে চট্টগ্রামের সিটিগেট থেকে মিরসরাইয়ের ধুমঘাট এলাকা পর্যন্ত ৬৬ কিলোমিটার নিয়ে একটি প্যাকেজ। এই অংশে কাজ হয়েছে ৪০ শতাংশ। এছাড়া মিরসরাইয়ের ধুমঘাট থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকা পর্যন্ত ১২৬ কিলোমিটার নিয়ে আরেকটি প্যাকেজ। ওই অংশে কাজ হয়েছে ৩৫ শতাংশ।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী (চট্টগ্রাম সার্কেল) মো. জাহিদ হোসেন পূর্বকোণকে জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেই প্রথমবারের মতো পলিমার বিটুমিন ব্যবহার করা হচ্ছে। অত্যাধুনিক এই বিটুমিন দিয়ে মহাসড়কের উপর ৫০ মিলিমিটার পুরুত্বের ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। অতি উচ্চ তাপমাত্রা ও ভারী ওজন পলিমার বিটুমিনের ক্ষতি করতে পারবে না।

তিনি বলেন, পুরো প্রকল্প দুইটি প্যাকেজে হচ্ছে। এরমধ্যে একটি প্যাকেজে চট্টগ্রামের সিটিগেট থেকে মিরসরাইয়ের ধুমঘাট এলাকা পর্যন্ত ৬৬ কিলোমিটার মহাসড়ক সংস্কার করা হচ্ছে। সওজের চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্ববধানে বাস্তবায়নাধীন এই অংশে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত অগ্রগতি ৪০ শতাংশ। যাত্রী ভোগান্তি কমাতে দুই লেন করে করে আমরা কাজ করছি।

সওজের কুমিল্লা সার্কেলের তত্ত্ববধানে বাস্তবায়নাধীন মিরসরাইয়ের ধুমঘাট থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকা পর্যন্ত ১২৬ কিলোমিটার অংশে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা।

তিনি পূর্বকোণকে বলেন, পলিমার বিটুমিন দিয়ে মহাসড়ক সংস্কারের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে আমরা কাজ করছি।

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট