চট্টগ্রাম সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

রাত নামলেই মাঝিরঘাট চলে যায় ‘কিরিচ বাহিনীর’ দখলে

নাজিম মুহাম্মদ

৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ | ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ

ওরা দশ থেকে বারো জন। রাত ১০ টার পর থেকেই লম্বা ধারালো কিরিচ নিয়ে সড়কে নেমে পড়ে। ওদের আতঙ্কে থাকেন যানবাহন চালক ও সাধারণ লোকজন। কিরিচধারীদের বয়স আনুমানিক ১৭ থেকে ২০ বছর। তাদের নিয়ন্ত্রণ করে মনির নামে এক ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে সদরঘাটসহ বিভিন্ন থানায় ৭/৮টি মামলা রয়েছে। পুলিশ বলছে, অনেক খুঁজেও তার নাগাল মিলছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাঝিরঘাট এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, মাঝিরঘাট থেকে আমদানির নানা পণ্য সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বিশেষ করে রাতে স্ক্র্যাপ বহনকারী লং ভ্যাহিকেলসহ নানা যানবাহনের চলাচল যখন বাড়তে থাকে তখনই লম্বা ধারালো কিরিচ হাতে সড়কে নেমে পড়ে সংঘবদ্ধ গ্রুপটি। রাত যতো গভীর হয় মাঝিরঘাট এলাকায় ওদের টহল বাড়ে। বলা চলে ওদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় ব্যস্ততম মাঝিরঘাট। টহলকালে নৈশ প্রহরীদের পাহারা দিতে বাধা দেয় তারা। কেউ কিছু বলতে চাইলেই ‘মাথা ফেলে দেয়ার’ হুমকি দেয়া হয়। কিরিচধারীদের টার্গেটই থাকে লং ভ্যাহিকেলের স্ক্র্যাপ চুরি আর আমদানি করা হিমায়িত মাছের ব্লক ছিনতাই করা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তি ভাসমান কিশোর ও তরুণদের ব্যবহার করছে স্ক্র্যাপসহ নানা পণ্য চুরি ও ছিনতাইয়ের কাজে। যদিও সে (মনির) কখনো প্রকাশ্যে আসে না। কিরিচ হাতে যেসব তরুণ মাঝিরঘাট এলাকায় রাজত্ব করে তারা মনিরের অনুসারী। মনির হোসেনের বাবার নাম বেলায়েত। এসআরভি জলিল চৌধুরী ছোট মাঠ বস্তিতে থাকে। রাতের বেলায় প্রকাশ্যে কিরিচ হাতে ১০/১২ জন কিশোর-তরুণ ঘুরে ঘুরে নৈশ প্রহরীদের পাহারা না দিতে শাসিয়ে যাচ্ছে এমন ভিডিও মাঝিরঘাটের একাধিক লোকের মুঠোফোনে দেখা যায়।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া মনিরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মনির নিজেকে আসলাম বলে পরিচয় দেয়। বলে, আমার নাম আসলাম। মুহুূর্তেই জানতে চায় কল করার কারণ। এরপরই লাইন কেটে দেন।

সদরঘাট থানার পরিদর্শক (ওসি) খাইরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমরা শুনেছি। কিরিচ হাতে কিশোর-তরুণরা মনিরের অনুসারী। এরা একাধিকবার জেলে গেছে। সম্প্রতি জামিনে বের হয়েছে। কিরিচ হাতে ঘুরাঘুরি করার একটি ভিডিও আমাদের হাতেও এসেছে। ভিডিওটি বেশ কয়েকদিন আগের। যাদেরকে ভিডিওতে দেখা গেছে তারা সবাই চিহ্নিত। মনিরের বিরুদ্ধে ৭/৮টি মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান ওসি খাইরুল ইসলাম।

জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নগরীর মাঝিরঘাট এলাকায় চলন্ত ট্রাকে স্ক্র্যাপ চুরিতে বাধা দিতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে আহত হন মালামালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই প্রহরী। স্ক্র্যাপ কারখানায় নেয়ার পথে মাঝিরঘাট নারিকেল তলা এলাকায় ৮/১০ জন কিশোর ট্রাকে উঠে পড়ে। ট্রাক থেকে লোহা ফেলে দেয়ার সময় তাদের বাধা দেওয়ায় মালামালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কর্মী আবু সুফিয়ান, মোহিনী কুমার চাকমাকে তারা ছুরিকাঘাত করে। এর আগে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কোন এক রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এক প্রহরীকে খুন করা হয় এমনই চুরির সময়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিভিন্ন ইস্পাত উৎপাদনকারী কোম্পানি ইস্পাত উৎপাদনের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ আমদানি করে থাকে। লং ভ্যাহিকেল কিংবা ট্রাকে করে এসব স্ক্র্যাপ সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন কোম্পানির কারখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। মাঝিরঘাট, এ কে খান, বায়েজিদ, ফৌজদারহাট লিংক রোডসহ বিভিন্নস্থানে এসব চক্র গড়ে উঠেছে। চক্রের হোতারা ভাসমান ও মাদকাসক্ত কিশোর-তরুণদের চুরির কাজে ব্যবহার করছে।

পাহাড়তলি জোনের সহকারী কমিশনার এ.কে.এম মহিউদ্দিন সেলিম গত ফেব্রুয়ারি মাসে নগর পুলিশের পশ্চিম জোনে কর্মরত ছিলেন। তিনি বলেন, স্ক্র্যাপ চুরির ঘটনায় সেই সময় ৬ জন গ্রেপ্তার হয়েছিল। ওই মামলায় মনিরকে আসামি করা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে আমরা বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েছি। সেই সময় মনির আত্মগোপনে ছিল।

বেশিরভাগ সময় রাতের বেলায় কারখানায় মালামাল নেওয়ার পথে তারা ট্রাকে হানা দেয়। মূলত গতি কম থাকলে তারা স্ক্র্যাপবহনকারী ট্রাক কিংবা লং ভ্যাহিকেলে উঠে পড়ে। এরপর গাড়ি থেকে স্ক্র্যাপ ফেলে দেয়। ওই সময় তদন্তে সাতটি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছিল। তা হলো- নগরীর মাঝিরঘাট, বারিক বিল্ডিং, বারো কোয়ার্টার, ঈদগাঁ, অলংকার, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের টোল রোড সংলগ্ন সেবা ফিলিং স্টেশন, পাক্কা রাস্তার মাথা ও কালু শাহ ব্রিজ।

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট