চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

আধা কিলোমিটারে ৫ অপরাধ

নাজিম মুহাম্মদ

৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ | ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ

নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশনে থেকে দুই নম্বর গেট রেলক্রসিং পর্যন্ত দূরত্ব আধা কিলোমিটারের চেয়েও কম। তবে সামান্য এ দূরত্বে অন্তত পাঁচ ধরনের অপরাধ ঘটছে প্রতিনিয়ত। এর মধ্যে রয়েছে রেলের জমি দখল করে দোকান-কলোনি নির্মাণ, রেলের স্লিপার ও রেলবিট চুরি, মাদক আর জুয়ার আড্ডা এবং ভাসমান হকার বসিয়ে চাঁদাবাজি। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

নগর জুড়ে রেলের হাজারো একর জমি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করছে অবৈধভাবে দখলদাররা। অথচ গোডাউন না থাকায় কোটি টাকা মুল্যের রেলবিট ও স্লিপার রাখতে হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। ষোলশহর রেলস্টেশন থেকে রেললাইন ধরে হেঁটে দুই নম্বর গেট রেলক্রসিংয়ের দিকে যেতেই দুইপাশে খোলা আকাশের নীচে ভাঁজ করে রাখা হাজারো রেলবিট ও স্লিপার। দেখে মনে হবে পরিত্যক্ত কোন লোহার স্তুপ। রেললাইনের পাশেই রয়েছে একাধিক ভাঙারির দোকান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, ৮/১০ বছরের বেশি সময় ধরে রেলবিট আর স্লিপারগুলো খোলা আকাশের নীচে রেখেছে রেলকর্তৃপক্ষ। দেখাশোনার জন্য রেলের কোন পাহারাদারও রাখা হয়নি। রাত গভীর হলেই শুরু হয় লোহা চুরির প্রতিযোগিতা। রেলবিট ও স্লিপারগুলোর ওজন বেশি হওয়া কেটে টুকরো করে নিয়ে যায়।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে পূর্বাঞ্চল রেলের বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ আবু হানিফ জানান, ষোলশহর রেলস্টেশনে রেলের স্লিপার আর রেললাইনের বিটগুলো রাখা হয়েছে তার সবগুলোই ব্যবহারযোগ্য। এগুলো আসলে স্ক্র্যাপ হয়নি। টুকটাক মেরামত করলেই ব্যবহার করা যাবে।

কোন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া কোটি টাকারও বেশি রেলবিট আর স্লিপার খোলা জায়গায় রাখা প্রসঙ্গে প্রকৌশলী আবু হানিফ জানান, ওখানে যে পরিমাণ মালামাল রয়েছে তা সংরক্ষণ করে রাখার মতো রেলের কোন গোডাউন নেই। রেলস্টেশনের পাশেই রয়েছে রেলের ভ‚সম্পদ বিভাগের ভূসম্পত্তি ও কানুনগো অফিস। অফিসের চারপাশে রেলের জমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে সারিসারি ঘর। খোঁদ কানুনগো অফিসের পেছনেই তৈরি করা হয়েছে ২৮ ঘরের একটি কলোনি। রেললাইন ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর দোকান। নিয়ম অনুযায়ী রেললাইনের ১০ ফুট দূরত্বের মধ্যে কোন ধরনের স্থাপনা থাকার কথা নয়।

লোকজন জানান, মামুন নামে ক্ষমতাসীন দলের একজন অনুসারী এসব দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। একইভাবে ষোলশহর এলাকায় রেলের জমি দখল করে কলোনি নির্মাণ করেছে হাসান, সাদ্দাম ও বশর নামে দুই ব্যক্তি।

তবে হাসান জানান, তার নামে কোন কলোনি নেই। সাদ্দামেরও কোন কলোনি নেই। সাদ্দাম ভাল লোক। মানুষ শুধু শুধু তার নামে বদনাম করে।

এর আগে গত বুধবার রাত সাড়ে নয়টার সময় ষোলশহর, তালতলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বসেছে মাদক সেবনকারীদের আড্ডা। লোকজন জানান, প্রতিদিন রাত আটটার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাদকসেবীদের আড্ডা। মাদকের পাশাপাশি চলে জুয়ার আসর। সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন সাদ্দাম। একাধিকবার জেলেও গেছেন। তবে খুব বেশিদিন তাকে জেলে থাকতে হয় না। নাজিম, নাঈম, রুবেল, সবুজ নামে তিন ব্যক্তি সাদ্দামের মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য। শুভ নামে এক ব্যক্তি রয়েছে। যিনি সাদ্দামের টাকা পয়সা তোলার কাজ করেন। অনেকটা ম্যানেজারের মত। ষোলশহর মেয়র গলির শেষমাথায় মসজিদ কলোনিতে তার দুটি নিজস্ব পাকা ভবন রয়েছে।

রেল লাইন ঘেঁষে দোকান ও কলোনি নির্মাণ বিষয়ে জানতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পূর্বাঞ্চল রেলের ভূসম্পদ কর্মকর্তা মাহবুবুল করিমের মুঠোফোনে (০১৭১১৬৯২৮২৯) একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (ওসি) নাজিম উদ্দিন মজুমদার জানান, বুধবার রাতে আমরা সেখানে অভিযান চালিয়েছি। তেমন কাউকে পায়নি। সাদ্দাম সম্পর্কে আমার খুব একটা ধারণা নেই। জুয়া কিংবা মাদকসেবন সম্পর্কে সংবাদ পেলে আমরা অবশ্যই অভিযান চালাবো।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাদ্দামের বিরুদ্ধে মাদক, ছিনতাই ও অস্ত্রআইনে পাঁচলাইশ থানায় ১৩ ও খুলশী থানায় একটি মামলা রয়েছে। জেলও কেটেছে একাধিকবার। নগর পুলিশের তালিকায় সাদ্দামকে অবৈধ মাদক ব্যবসায়ী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সাদ্দামের পুরো নাম সাদ্দাম হোসেন প্রকাশ সাদ্দাম। তার বাবার নাম মৃত নুরুল আলম। নিজ বাড়ি আনোয়ার উপজেলার বুরুংছড়া গ্রামে।

রেললাইন ধরে দুই নম্বর গেট রেলক্রসিংয়ে গেলে দেখা যায়, ক্রসিংয়ের দুই পাশে রেললাইন ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে বিশটি দোকান। বসেছে সবজি ও মাছের দোকান। এরমধ্যেই বেলা তিনটার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেন আসতেই কোনমতেই রেললাইন থেকে সবজি আর মাছের খাঁচা সরিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। ট্রেনে চলে যেতেই সবাই ফের বসে যান রেল লাইন ঘিরে।

কথা হয় এক সবজি দোকানদারের সাথে। বলেন, স্থানীয় কিছু ছেলে আছে যাদেরকে নিয়মিত টাকা দিয়ে ব্যবসা করতে হয়। পাশেই মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়িওয়ালা এক যুবককে ইশরায় দেখিয়ে বলেন, উনি মুলত এসব নিয়ন্ত্রণ করেন।

উক্ত সবজি বিক্রেতা বলেন, এখানে ব্যবসা করি। টাকার গুনতে হয় বাসায় গিয়ে। বেশি টাকা দেখলে ওরা হাওলাদ চায়। বাস্তবতা হচ্ছে হাওলাদের নামে চাঁদাবাজি করে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুখে খোঁচা দাড়িওয়ালা যুবকের নাম শহীদুল ইসলাম রনি।

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট