চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

৫ কারণে কমছে না রডের দাম

মোহাম্মদ আলী

৩১ আগস্ট, ২০২২ | ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ

পাঁচ কারণে কমছে না রডের দাম। তবে গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে দাম স্থিতিশীল থাকলেও ডলারের মূল্য পুনরায় বাড়লে যে কোন সময় উর্ধ্বমুখী হতে পারে রড। অপরদিকে রডের দাম বৃদ্ধির কারণে কোন কাজ নিচ্ছেন না ঠিকাদাররা।

ইস্পাত খাতের শিল্প মালিকরা বলছেন, রডের দাম না কমার পাঁচ কারণের প্রথমটা হচ্ছে, ডলারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপ আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্বিতীয় কারণ ডিজেলের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি, এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। তৃতীয়ত বিদ্যুতের রেশনিং, চতুর্থ কারণ গ্যাসের চাপ কম। তাতে উৎপাদন কমে যাওয়াসহ খরচ বেড়ে গেছে এবং পঞ্চম কারণ আমদানি ঋণপত্র খোলার জটিলতা, এ পাঁচ কারণে বাজারে কমছে না রডের দাম। এর আগে এক মাসের ব্যবধানে নির্মাণ খাতের এই প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ফ্যাক্টরি মূল্য প্রতি টন প্রায় ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। অথচ ওই এক মাস আগেও রডের ফ্যাক্টরি মূল্য ছিল টনপ্রতি ৮২ হাজার থেকে ৮৬ হাজার টাকা। বর্তমানে কোম্পানিভেদে টনপ্রতি রড বিক্রি হচ্ছে ৮৭ হাজার থেকে ৯২ হাজার টাকা। তা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে টন প্রতি ৯৩ হাজার টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে স্ক্র্যাপ বিক্রি হচ্ছে প্রতিটন ৫৩০ থেকে ৫৪০ ডলার। স্ক্র্যাপ জাহাজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিটন ৬৩০ থেকে ৬৫০ ডলার। অপরদিকে জাহাজের পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে স্ক্র্যাপ হিসেবে পুরাতন জাহাজ বিক্রি করছে না। তাই স্ক্র্যাপ জাহাজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বেড়েছে রডের উৎপাদন খরচ।

চট্টগ্রাম এলজিইডি ঠিকাদার সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ জামশেদ চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘দফায় দফায় নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে সংকটের মুখে পড়েছেন ঠিকাদাররা। খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পের কাজ অনেক কমে গেছে। খুচরা বাজারে টনপ্রতি রড বিক্রি হচ্ছে ৯৩ হাজার টাকা। রডসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে সরকারি ও বেসরকারিভাবে উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। অনেকে বন্ধ রেখেছে নির্মাণ কাজ।’

চট্টগ্রাম এলজিইডি ঠিকাদার সমিতির সভাপতি মহিউদ্দীন সেফুল পূর্বকোণকে বলেন, ‘বর্তমানে চট্টগ্রামে সরকারের প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান আছে। এসব কাজে জড়িত রয়েছেন প্রায় আড়াই হাজার ঠিকাদার। রডসহ নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের কাজে ধীরগতি নেমে এসেছে। আবার অনেকের কাজ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে যেসব প্রকল্পের কাজ চলছে তা ২০১৮ সালের শিডিউল। এছাড়া শিক্ষা বিভাগের কাজগুলো ২০১৪ সালের শিডিউলের। শুধু রডের দাম নয়, একাধারে সিমেন্ট, পাথর, বালু, বিটুমিন সবকিছুর দাম বেড়েছে। এ কারণে এখন ঠিকাদাররা নতুন কোন কাজ নিচ্ছেন না। শুধু আগের কাজগুলো সম্পন্ন করছেন।’

মোস্তফা-হাকিম গ্রুপের ইস্পাত শিল্প গোল্ডেন ইস্পাত ও এইচএম স্টিল মিলের পরিচালক মোহাম্মদ সরওয়ার আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘ডলারের বিনিময়মূল্য ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধির কারণে রডের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ৪ থেকে ৫ মাস আগে থেকে টাকার ২০ টাকা পর্যন্ত অবমূল্যায়ন হয়। যা খুবই অস্বাভাবিক। ইস্পাত শিল্পের সম্পূর্ণ কাঁচামাল আমদানি নির্ভর। এ আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এ খাতের শিল্প মালিকরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। যেটি এখনো চলমান রয়েছে।’
সরওয়ার আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নিয়ম অনুযায়ী এলসি খোলার ক্ষেত্রে তিন মিলিয়ন ডলারের উর্ধ্বে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি লাগবে। এ অনুমতি নিতে বিভিন্ন শর্ত পূরণে বাধা-বিপত্তি ও দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। এটিই রডের দাম না কমার একটি অন্যতম সমস্যা।’

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট