চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

মাসের ব্যবধানে চিনির দাম বেড়েছে কেজিতে ৯ টাকা

ইফতেখারুল ইসলাম

২৯ আগস্ট, ২০২২ | ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ

ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে চিনির দাম এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে প্রায় ৯ টাকা বেড়ে গেছে। কয়েক বছর ধরে দেশে বেসরকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি চিনি ৭০ থেকে ৭৫ টাকার মধ্যে ওঠানামা করলেও বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে চিনি প্রতি কেজি ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, খরার কারণে চিনি উৎপাদনকারী দেশগুলোতে উৎপাদন কমে যাওয়া ও বিভিন্ন দেশ চিনিসহ পণ্য রপ্তানি সীমিত করায় বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত চিনির বুকিং দর বেড়েছে। একইসাথে ডলারের দামবৃদ্ধি ও নিয়ন্ত্রিত শুল্ক ২০ শতাংশের সাথে আরো ১০ শতাংশ বাড়িয়ে পূর্বের ন্যায় ৩০ শতাংশ করায় দেশিয় বাজারেও পণ্যটির দাম বেড়েছে।

গতকাল (রবিবার) দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে প্রতিমণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৫০ থেকে ৩১০০ টাকায়। যা এক মাস আগে ছিল সর্বোচ্চ ২,৭০০-২,৭৫০ টাকা। অর্থাৎ মণে ৩৫০ টাকা বেড়ে গেছে। কেজিতে প্রায় ৯টাকা বেড়ে গেছে।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে চিনি আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। বর্তমানে বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি বাজারেও দাম বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় চলতি মৌসুমে সরকারি সব মিলে উৎপাদন চালু করার পাশাপাশি চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি পর্যায়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্বের প্রধান চিনি উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশ ব্রাজিল। সম্প্রতি দেশটির উৎপাদন উল্লেখযোগ্য কমে যাওয়ায় দেশটি রপ্তানিতে কিছুটা কড়াকড়ি করেছে। তাছাড়া বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের কারণে বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানি উৎপাদন প্রবণতায় পাম অয়েলের পাশাপাশি চিনির ওপরও প্রভাব পড়েছে। ব্রাজিল আখ থেকে চিনি উৎপাদনের পাশাপাশি ইথানল দিয়ে বায়োডিজেল উৎপাদন করায় বিশ্বব্যাপী চিনির দাম বাড়ছে। যে কারণে আমদানি নির্ভর দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কিছুটা সংকটে রয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যমতে, গত অর্থ বছরে (২০২১-২২) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মাত্র ১৭ লাখ টন চিনি আমদানি হয়েছে। এর আগে ২০২০-২১ অর্থ বছরে চিনি আমদানি হয়েছিল ২১ লাখ টন। এক বছরের ব্যবধানে ৪ লাখ টন চিনি কম আমদানি হওয়ায় সরবরাহ কিছুটা ঘাটটি রয়েছে দেশের প্রধান বেসরকারি রিফাইনারি মিলগুলো।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত চিনির কেজি প্রতি দাম ছিল ৫৮ সেন্ট। ২০২০ সালে ছিল ৫৯ সেন্ট। ২০২১ সালে কেজি প্রতি দাম বেড়ে ৭৪ সেন্টে উঠে যায়। সর্বশেষ চলতি বছরের মে মাসে চিনির দাম সর্বোচ্চ ৮০ সেন্ট উঠে। তবে জুনে ১ সেন্ট কমে ৭৯ সেন্টে এবং গত মাস জুলাইয়ে কেজি প্রতি চিনির গড় দাম ছিল ৭৭ সেন্ট।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন (বিএসএফআইসি) ২০২১ সালের ৬ এপ্রিল চিনির দাম ৭০ টাকা থেকে ৫ টাকা বাড়িয়ে ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে। গত ১০ আগস্ট বেসরকারি মিল মালিকদের এসোসিয়েশন সরকারের কাছে চিনির দাম পুননির্ধারণের আবেদন করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দেয়া চিঠিতে চিনির দাম বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব এবং ব্যাংকের দামে ডলার পেতে আবেদন করা হয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে, বাংলাদেশে অপরিশোধিত চিনি ও পরিশোধিত বা সাদা চিনি আমদানি হয়। অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ট্যারিফ ভ্যালু ধরা হয় টন প্রতি ৩৫০ ডলার। আমদানি পর্যায়ে এ চিনিতে ৩ হাজার টাকা স্পেসিফিক ডিউটি বা কাস্টমস ডিউটি দিতে হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর এবং ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর। অপরদিকে সাদা চিনির ক্ষেত্রে টন প্রতি ৪৩০ ডলার ট্যারিফ ভ্যালু ধরে ৬ হাজার টাকা কাস্টমস ডিউটি ছাড়া বাকি শুল্ক অপরিশোধিত চিনির মতোই। তবে চলতি বছরের শুরুতে চিনির দাম বেড়ে গেলে সরকার অপরিশোধিত চিনি আমদানির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২০ শতাংশ নির্ধারণ করে। পরে তা ১৫ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

বর্তমানে দেশে চিনির চাহিদা প্রায় ১৮-২০ লাখ টন। দেশীয় চাহিদার মধ্যে সরকারি মিলগুলো এক সময় দেড়-দুই লাখ টন চিনি উৎপাদন করত। গত দুই বছরে ১৫টি সরকারি চিনিকলের মধ্যে ছয়টির উৎপাদন বন্ধ থাকায় উৎপাদন আরো কমে গেলে খাতটি বেসরকারি মিলের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট