চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

জোয়ারে বিলীন দেড়শ কৃষকের স্বপ্ন

মিটু বিভাস

২১ আগস্ট, ২০২২ | ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ

গত প্রায় এক যুগ ধরে নগরীর কাট্টলী উপকূলে চাষাবাদ করে আসছেন মো. ফরিদ। ৫ একরেরও বেশি জায়গা জুড়ে ধানসহ বিভিন্ন মৌসুমী সবজির আবাদ করে থাকেন তিনি। লাভও মোটামুটি ভাল হতো। কিন্তু গত দুই বছর ধরে তার আবাদি জমিতে ফলছে না কোন ফসল। মহেশ খাল ও নাজির খালের মুখে অবস্থিত দুটি স্লুইস গেট নষ্ট থাকায় বর্ষা মৌসুমে আবাদি জমিতে ঢুকে পড়ছে জোয়ারের পানি। ফলে নষ্ট হয়ে গেছে জমির ফসল। পানির সাথে আসা পলিতে লবণাক্ত হয়ে যাচ্ছে চাষের জমি। শীত মৌসুমে জোয়ারের পানি কম আসলেও জমির ফসল ফলানো নিয়ে সন্দিহান তিনি। ফরিদের মতো প্রায় শতাধিক কৃষকের একই অবস্থা। পুঁজি হারিয়ে এখন দিশেহারা অবস্থা তাদের।

গতকাল সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে আউটার রিং রোডের মহেশখালে অবস্থিত স্লুইস গেট দিয়ে ঢুকে পড়ছে জোয়ারের পানি। গত দুই বছরেও নবনির্মিত এ গেটটি চালু করা যায়নি। অন্যদিকে উত্তর পাশে নাজির খালের মুখে অবস্থিত গেটটি মেরামতের অভাবে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ময়লা আবর্জনা জমে আটকে গেছে এর পাটাতন। ফলে কোন বাধা ছাড়াই চলে আসছে জোয়ারের পানি। ভরা জোয়ারে তলিয়ে যাচ্ছে উপকূলীয় এলাকার ফসলি জমি। হালিশহর থেকে সলিমপুর পর্যন্ত এ এলাকায় প্রায় ৫শ একর জমিতে প্রায় দেড়শতাধিক কৃষক চাষাবাদ করেন।

স্থানীয় কৃষক মো. ফরিদ বলেন, গত বছর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কোন ফসল তুলতে পারেননি তিনি। শীত মৌসুমে পানি না ঢুকলেও লবণাক্ত মাটির কারণে নষ্ট হয়ে যায় চারা। গতবছর প্রায় আট লক্ষাধিক টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে জমিতে লাগানো সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এবারও কোন আশা দেখছি না। অন্যের জমি খাজনায় নিয়ে চাষাবাদ করি। এভাবে চলতে থাকলে দেশের বাড়ি লালমনিরহাটে ফিরে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই।

অপর কৃষক মো. ইলিয়াছ বলেন, জমিতে গ্রীষ্ম মৌসুমে বিভিন্ন শাকের আবাদ করেছিলাম। জোয়ারের পানি ঢুকে সব নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া কৃষি অধিদপ্তর থেকে প্রত্যেক কৃষককে এক বস্তা ধানের বীজ দেয়া হয়েছিল। সে বীজও নষ্ট হয়ে গেছে। এখন নতুনভাবে বীজ বপনের সাহস পাচ্ছি না। এ এলাকায় আগাম ফসল হিসেবে টমেটোর চাষ করতেন মো. পারভেজ। এবারও চারা লাগিয়েছেন। কিন্তু জোয়ারের পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে সব চারা।

তিনি বলেন, পুরো এলাকার চাষের জমিগুলো এখন ক্ষতবিক্ষত। বিভিন্ন শাক ও ধানের জমি তলিয়ে গেছে। নতুন ভাবে চাষাবাদ করব সে সামর্থ্যও এখন নেই। দ্রুত এ গেট দুটি সচল করা না হলে বছর জুড়ে এখানকার জমিতে কোন ফসল ফলানো যাবে না। পারভেজের মতো ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন চোখে শর্ষেফুল দেখছেন এই এলাকার প্রায় প্রত্যেকটি কৃষক।

এর আগে গতবছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী স্লুইস গেট দুটি মেরামতের আশ্বাস দিলেও কোন কাজ হয়নি। কৃষকরা জানেন না কোথায় অভিযোগ করলে এর প্রতিকার পাওয়া যাবে। স্থানীয় কৃষি অফিসে মৌখিকভাবে অবহিত করেছেন বলে তারা জানান।

তবে মেট্রোপলিটন কৃষি অফিসার কামরুম মোয়াজ্জেমা পূর্বকোণকে বলেন, এ ধরনের কোন অভিযোগ এখনও পায়নি। অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানের অবশ্যই চেষ্টা করব।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ড. নেছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, শুধু এ দুটি নয়, উপকূলের সবকটি স্লুইস গেট মেরামতের জন্য এর আগে বেশ কয়েকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। স্থানীয় এ কৃষকদের দুর্ভোগ লাঘব করতে হলে দ্রুত এ গেটগুলো মেরামতের কোন বিকল্প নেই।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট