চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

দুই কারণে কমছে না মশা

ইফতেখারুল ইসলাম

২০ আগস্ট, ২০২২ | ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ

মূলত দুটি কারণে বন্দর নগরীতে মশার উৎপাত কমছে না। যে কারণে মশক নিধনখাতে বছরে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা সত্ত্বেও মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন নগরবাসী।

অনিয়মিত বৃষ্টি মশার বংশ বিস্তারে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করছে। অপরদিকে, অন্তত ৫ দিন অন্তর একই জায়গায় ওষুধ স্প্রে করতে পারে না চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওষুধ ছিটাতে না পারলে ফের মশার বংশ বিস্তার শুরু হয়। ফলে বছরে কোটি টাকার ওষুধ স্প্রে করার পরও নগরবাসী মশার উৎপাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। আক্রান্ত হচ্ছেন মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়ায়। গত বছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক দল রাসায়নিক পদ্ধতির পাশাপাশি জৈব পদ্ধতিতে মশা নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়েছেন। সেই পরামর্শও গ্রহণ করেনি চসিক। আজ শনিবার বিশ্ব মশক দিবস। ১৯৩০ সাল থেকে প্রতি বছর ২০ আগস্ট সারাবিশ্বে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবারও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা কীটতত্ত্ববিদ মোছাম্মৎ এনতেজার ফেরদাওছ পূর্বকোণকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের ঋতুগুলো পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। বর্ষাকালে একসময় টানা বৃষ্টিপাত হত। মশার ডিম এবং বাচ্চা বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে চলে যায়। তাছাড়া বৃষ্টির মধ্যে এডাল্ট মশা উড়তে পারে না। কিন্তু এখন বৃষ্টিপাত হয় অনিয়মিত। কিছুক্ষণ বৃষ্টি হয়ে ফের রোদ উঠে যায়। ছোটখাটো গর্তে, ডাবের খোসা, ফুলের টবে পানি জমে মশার প্রজনন পরিবেশ তৈরি হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মশার ওষুধ কার্যকারিতা হারিয়েছে একথা বলার সুযোগ নেই। কারণ ওষুধ কেনার সময় তা পরীক্ষা করা হয়। তবে কর্পোরেশন যদি ধারাবাহিকভাবে ওষুধ স্প্রে করতে পারতো তাহলেও মশার উৎপাত কমে যেত। যে জায়গায় এক ওষুধ স্প্রে করা হয় তার চার-পাঁচ দিনের মধ্যে সেখানে আবার স্প্রে করতে হবে। তাহলে ওই এলাকায় নতুন করে মশার বিস্তার ঘটার সুযোগ থাকবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, পুরো ওয়ার্ড ঘুরে ওই জায়গায় দ্বিতীয়বার স্প্রে করতে হয়তো মাস চলে যায়। ভোরে সূর্য উঠার পর এক ঘণ্টা এবং সূর্য ডোবার এক ঘণ্টা আগে স্প্রে করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। সে সময়টা মেনে তারা স্প্রে করতে পারে না। লার্ভিসাইড স্প্রে করে শুধুমাত্র নালায়। কিন্তু ফুলের টব, ডাবের খোসাসহ বাড়ির আঙ্গিনায় যেসব স্থানে মশা বংশ বিস্তার করে সেখানে সিটি কর্পোরেশনের স্প্রে করার সুযোগ খুবই কম। যে যার আঙ্গিনাকে পরিষ্কার রাখতে হবে। মশা খেকো মশা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিআরবি, প্রবর্তকসহ যেখানে বড় গাছ আছে সেখানে হাতি মশা বা মশা খেকো মশা বাস করে। ছোট পাত্রে এসব মশা জন্মায় না। তাই এই মশার সংখ্যা খুবই কম।

মশাবাহিত রোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিকুনগুনিয়া এখন নেই বললেই চলে। করোনার আগে একবার প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল। এবছর একটাও পাওয়া যায়নি। ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়া বাহিত মশা চট্টগ্রামে আছে। ফাইলেরিয়া রোগবাহী মশা চট্টগ্রামে নেই।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান কাউন্সিলর মোবারক আলী পূর্বকোণকে বলেন, ৪১ ওয়ার্ডে ২৫৪ জন মশক নিধন কর্মী কাজ করছে। উড়ন্ত মশা নিধনের জন্য সূর্যাস্তের সময় স্প্রে করা হয়। আর মশার ডিম এবং বাচ্চা নিধনের জন্য সকাল ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত লার্ভিসাইড এবং এলডিও স্প্রে করা হয় । কাজের সুবিধার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি ব্লকে ভাগ করা হয়। ছোট ওয়ার্ডে প্রতিটি জায়গা ৫ দিন অন্তর এবং বড় ওয়ার্ডে অন্তত ৮ দিন অন্তর স্প্রে করা হয়। এবিষয়ে মন্ত্রণালয়েরও নির্দেশনা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বাস্তবে মশক নিধন কার্যক্রম ওই নির্দেশনা অনুযায়ী হচ্ছে না এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, আসলে লোকবল সংকটও রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক দলের পরামর্শ : রাসায়নিকের পাশাপাশি জৈবিক পদ্ধতিতে মশা নিধনের জন্য গত বছরের আগস্ট মাসে চসিককে (চসিক) পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একদল গবেষক। এ সময় গবেষকরা জানান, শহরে এমন একটি জলাশয় পাওয়া গেছে যেখানে দীর্ঘদিন ধরে ময়লা-আবর্জনা জমে ছিল। কিন্তু ওই জলাশয়ে মশার কোনো লার্ভা পাওয়া যায়নি। গবেষণায় দেখা গেছে, জলাশয়টিতে এমন কিছু মাছের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যেই মাছগুলো লার্ভা খেয়ে ফেলে। মশার লার্ভাখেকো ওইসব মাছ বিভিন্ন জলাশয়ে ছেড়ে দিলে মশার উৎপাত অনেকাংশে কমে যাবে।

গত বছরের ২৪ মার্চ গঠিত ওই কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ ওমর ফারুককে সদস্য সচিব করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তাপসী ঘোষ রায়, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এইচ এম আবদুল্লাহ আল মাসুদ এবং প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট