চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

আবাসস্থলেই মৃত্যুদূতের হানা

মোহাম্মদ আলী

৩ আগস্ট, ২০২২ | ১:৪৮ অপরাহ্ণ

নিজেদের আবাসস্থলেই হানা দিচ্ছে মৃত্যুদূত। চার কারণে মারা যাচ্ছে হালদার মা মাছ ও ডলফিন। কারণগুলো হচ্ছে- মাছ শিকারের জন্য বিষ ঢেলে নদী দূষণ, আঘাতজনিত, চর্বি সংগ্রহ করতে ডলফিন শিকার ও জালে শ্বাসরুদ্ধ। সাম্প্রতিক সময়ে হালদা নদীতে একের পর এক মা মাছ ও ডলফিনের মৃত্যুর ঘটনায় এ চার কারণকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করেছেন হালদা বিশেষজ্ঞরা।

হালদা নদীতে গত জুলাই মাসে একের পর এক মা মাছ ও ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে। বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে মাছ শিকারি চক্র। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিদিনই জাল ফেলছে নদীতে। গত ২৫ ও ২৬ জুলাই দুইদিনের ব্যবধানে হালদায় মারা গেছে তিনটি কাতলা মাছ। এ নিয়ে হালদায় দুই দশকে প্রায় ২০০ রুই জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) মা মাছ মারা গেছে। একই মাসে মারা গেছে তিনটি ডলফিন। তাতে গত পাঁচ বছরে ডলফিন মারা গেছে ৩৯টি। নদীতে একের পর এক মা মাছ ও ডলফিনের মৃত্যুর ঘটনায় ভাবিয়ে তুলেছে হালদা বিশেষজ্ঞদের।

এ প্রসঙ্গে নদী বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রাথমিক ধারণা মতে- চারটি কারণে হালদা নদীতে মা মাছ ও ডলফিনের মৃত্যু হচ্ছে। পরীক্ষা করে দেখেছি নদীতে আপাতত দূষণের মাত্রা নেই। এ অবস্থায় মাছ শিকার করতে নদীর কুম কিংবা শাখা খালে অসাধু চক্র পানিতে বিষ ঢেলে দেয়। তাতে অক্সিজেন শূন্য হয়ে মাছ মারা যাচ্ছে। এছাড়া নৌযানের আঘাত, মাছ ধরা জালে আটকে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে এবং চর্বি সংগ্রহ করতে ডলফিন মেরে ফেলছে অসাধু চক্র। এসব সমস্যা সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করতে না পারলে হালদার মা মাছ ও ডলফিন রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে’।

হালদায় মা মাছ ও ডলফিনের মৃত্যু প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘নদীতে ব্রুড মাছ মারা যাওয়ার কারণ বুঝতে পারছি না। এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখব। মন্ত্রণালয় একটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করে দিলে মা মাছ ও ডলফিনের মৃত্যুর কারণ চিহ্নিত করে করণীয় নির্ধারণ করা যাবে’।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহিদুল আলম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘হালদার মা মাছ ও ডলফিন মৃত্যু রোধ করতে নদীর তীরবর্তী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধি, ডিম সংগ্রহকারী ও জেলেদের সম্পৃক্ত করে কাজ করছি। দায়িত্ব নেওয়ার পর ৬৮টি অভিযান চালিয়েছি। বর্তমানে এই অভিযান চলমান রয়েছে। এদিকে হালদাতে অবৈধ মাছ শিকারিদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযান চালাচ্ছে নৌ-পুলিশ। সদরঘাট নৌ-পুলিশ থানার অধীনে হাটহাজারীর রামদাশ মুন্সির হাটে স্থাপন করা হয়েছে নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি। নদীতে অভিযান প্রসঙ্গে সদরঘাট নৌ-পুলিশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ বি এম মিজানুল রহমান বলেন, ‘অবৈধ মা মাছ শিকারিদের রুখতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে নৌ-পুলিশ। গত ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত হালদা নদীতে ২১৬টি অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে নৌ-পুলিশ ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৮৭০ মিটার অবৈধ জাল উদ্ধার করে। এ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ৪টি। দিন দিন অভিযান আরো বৃদ্ধি করা হচ্ছে’।

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট