চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪

ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কায় গণপরিবহন জরিপ!

নাজিম মুহাম্মদ

১৮ জুলাই, ২০২২ | ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ

গণ পরিবহন জরিপের শুরুতেই উদ্যোগের সফলতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন এ সংক্রান্তে গঠিত কমিটির দুই সদস্য। তাদের অভিযোগ, নগর পুলিশ কমিশনার পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নির্দেশনা মোতাবেক জরিপ কাজ পরিচালনা করছেন না। অনিয়ম আমলে না নিয়ে রহস্যজনকভাবে এড়িয়ে যাওয়ার কারণে নগর পুলিশের মহতী উদ্যোগটি ভেস্তে যাবে, এমন আশঙ্কা করছেন জরিপ কমিটির ওই দুই সদস্য। যারা নগর ও জেলার গণ পরিবহন সমিতির নেতা। জরিপ কমিটির দুই সদস্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল ও চিটাগাং জেলা পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব গোলাম রসূল বাবুল জানান, শৃঙ্খলা ফেরাতে গণ পরিবহনের জরিপ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরটিসি’র চেয়ারম্যান সদ্য বিদায়ী পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর পরিবহণ সংশ্লিষ্টদের মনে স্বস্তি দেখা দেয়। কিন্তু সেই জরিপ কাজ শুরুর পর দেখা গেল, জরিপে যে যে বিষয় আমলে নেয়ার নির্দেশনা ছিল, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সেটি অনুসরণ করছেন না। উদাহরণ দিয়ে পরিবহন মালিক সমিতির আলোচ্য দুই নেতা বলেন, স্থানীয়ভাবে তৈরি মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি এখন নগরীতে চলাচল করছে হিউম্যান হলার নামে। গাড়িগুলো নির্মাণ থেকে শুরু করে দলিলাদি প্রস্তুত, এর কোনটিতেই নিয়ম মানার বালাই নেই। মিল নেই ফিটনেসের সঙ্গে গাড়ির ইঞ্জিন কিংবা চেসিস নম্বর। এমনকি গাড়িগুলোতে যে রেজিস্ট্রেশন নম্বর লাগানো হয়েছে তাও সঠিক নয়। ১৩ সিটের অনুমোদন থাকলেও গাড়িতে ১৮ থেকে ২০ সিট সংযুক্ত করা হয়েছে। এতসব অনিয়মের ব্যাপারে আমরা (পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা) আপত্তি তোলার পরও জরিপ কমিটি হিউম্যান হলারগুলোর অনুকূলে ‘ছাড়পত্র’ দিচ্ছে। অর্থাৎ জরিপ কমিটির কর্মকর্তারা হিউম্যান হলারের অনিয়ম- ত্রুটি আমলেই আনছেন না।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল ও চিটাগাং জেলা পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব গোলাম রসূল বাবুল জরিপ কাজের নামে যে কার্যক্রম চলছে, তাকে প্রহসনের নামান্তর বলে অভিযোগ করেছেন। তারা হিউম্যান হলারের জরিপ কাজ বাতিল করে পুনরায় সঠিকভাবে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার দাবি তুলেছেন। উল্লেখ্য, গত ২৩ মে অনুষ্ঠিত আরটিসির সভায় গণ পরিবহন জরিপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। আরটিসির তথ্য অনুযায়ী নগরীর ১৮ রুটে ৯৫৯টি হিউম্যান হলার চলাচল করছে। গত ২৭ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ মাঠে হিউম্যান হলারের জরিপ কাজ চলে। সামান্য কিছু গাড়ি না আসায় সেগুলোর জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করে সহসাই জরিপ কাজ সম্পন্ন করা হবে।

অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জরিপ কমিটির আহবায়ক নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের উপ কমিশনার নাসির আহমেদ জানান, হিউম্যান হলারের জরিপ কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। নির্ধারিত সময়ে সব গাড়ি আসতে পারেনি। আমরা আরো তিনটি তারিখ দিয়ে বাকী হিউম্যান হলারগুলোর জরিপ কাজ সম্পন্ন করব।

জরিপ কমিটির সদস্য বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, নিয়ম অনুযায়ী গাড়ির কাগজের সাথে গাড়ির কোম্পানি মিল আছে কিনা, রেজিস্ট্রেশন নম্বরের সাথে চেসিস নম্বরের মিল রয়েছে কিনা, গাড়ির সিট, চাকা এমনকি রঙ পরিবর্তন হয়েছে কিনা, গাড়িটি সড়কে চলাচলের উপযুক্ত কিনা সরেজমিনে এসব দেখেই তবে একটি গাড়ির ফিটনেস দেয়ার কথা। কিন্তু বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শকরা এসব না দেখে কাগজপত্রের সাথে গাড়ির মিল না থাকা সত্বেও হিউম্যান হলারগুলোকে ফিটনেস দিয়ে দিচ্ছে। বেলায়েত হোসেন বেলাল অভিযোগ করে বলেন, নিজেদের দোষ ঢাকতে বিআরটিএ কর্মকর্তারা কোন কিছুই সঠিক না থাকার পরও হিউম্যান হলারগুলোকে ছাড় দিচ্ছে। এ ধরনের জরিপ করা আর না করা সমান। তাই আমরা বিয়ষটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছি।

বেলায়েত হোসেন আরও অভিযোগ করেন, জরিপে গাড়ির সাথে চেসিস নম্বর মিল নেই, ইঞ্জিন নম্বর মিল নেই- এসব ত্রুটি মাফ করিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে এক শ্রেণীর শ্রমিক নেতা গাড়ির মালিকের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

জরিপ কমিটির সদস্য চিটাগাং জেলা পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব গোলাম রসুল বাবুল বলেন, গণ পরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ কমিশনার যে উদ্দেশ্যে জরিপ কাজ শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছেন তা বাস্তবে হচ্ছেনা। এ জরিপ অনেকটা লোক দেখানো।

গোলাম রসুল বলেন, ২০০১ -২০০২ সালে বেশ মেয়াদউত্তীর্ণ হবার কারণে বেশ কিছু হিউম্যান হলার বাতিল করা হয়েছিল। ওই বাতিল করা গাড়িগুলো স্থানীয় গ্যারেজে মেরামত করে অন্য গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর লাগানো হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৪-২০১৫ সালে ব্যাংক ঋণ কিংবা বিভিন্ন কারণে অনেক গাড়ি সড়কে নেই। সেইসব গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিয়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়িতে লাগিয়ে হিউম্যান হলার হিসাবে চালানো হচ্ছে। কোন হিউম্যান হলারের চেসিস নম্বর, ইঞ্জিন নম্বর কিংবা সিটের ধারণ ক্ষমতার সাথে ফিটনেস কিংবা রুট পারমিটের মিল নেই। অথচ এসব গাড়ি সড়কে চলাচলের বৈধতা দিচ্ছে জরিপ কমিটি। এ জরিপ কোন কাজে আসবে না।

শুরু হচ্ছে অটোটেম্পু জরিপ: আগামী ২০ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত ১৫ দিন অটোটেম্পোর জরিপ কাজ শুরু হবে। নগরীর আগ্রাবাদ সরকারি কলোনী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জরিপের কাজ চলবে। আরটিসির তথ্য অনুযায়ী নগরীতে ২১৯৩টি অটো টেম্পা চলাচল করছে। নগর ট্রাফিক পুলিশের পশ্চিম জোনের উপ কমিশনার স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক অটোটেম্পু মালিককে রুট ভিত্তিক কার্যক্রমের নির্দিষ্ট তারিখে গাড়ি ও গাড়ির যাবতীয় কাগজ নিয়ে হাজির থাকতে হবে। জরিপে অটো টেম্পোর চেসিস ও ইঞ্জিন নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছে কি না তা সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। জরিপ চলাকলিন অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া জরিপকৃত কাগজপত্রের কোন প্রকার ছবি তোলা যাবে না।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট