চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

দলীয় প্রার্থীদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে বিব্রত আওয়ামী লীগ

৫ জুন, ২০২২ | ১:০৪ অপরাহ্ণ

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 

বাঁশখালী উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের বেফাঁস বক্তব্য ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ইভিএমের বাটন টিপে দেওয়া, সরকারি গুন্ডা বাহিনী থাকা, প্রতিপক্ষের প্রচারণায় হামলা চালিয়ে ইভিএম পদ্ধতি এবং নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ করে তুলেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। দলীয় প্রার্থীদের এসব আচরণে আওয়ামী লীগ বিব্রত বলে জানান দলীয় শীর্ষ নেতারা।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘এসব বক্তব্যে আমরা বিব্রত। এটা হচ্ছে অসুস্থ রাজনীতির কুফল।’ এ ধরনের প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া ভুল হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে এসব প্রার্থী যাতে দলীয় মনোনয়ন না পান, সেই বিষয়ে আমরা সতর্ক থাকব।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক এডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘কঠিন সত্য বেফাঁসভাবে উচ্চারণ করেছেন। নিকট অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। তিনি আবার আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। সরকারিদলের সাহসী প্রার্থী হিসেবে এসব কথা বলেছেন। যা নাগরিক সমাজ প্রত্যাশা করে না।’
গত সোমবার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে প্রার্থীদের মতবিনিময় সভায়ও বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রার্থীরা সরকারদলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকির অভিযোগ করেছিলেন।
জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য আমরা সর্বাত্ম চেষ্টা করছি। আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
নির্বাচন কমিশনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘যার যে দায়িত্ব তা পালনে অবহেলা বা গাফিলতির অভিযোগ উঠলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন কমিশন। এখানে দায়িত্ব পালনে গাফিলতির কোনো সুযোগ নেই।’
চাম্বল ইউনিয়নের সরকারদলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরী ইভিএম’র বাটন টিপে দেওয়ার জন্য লোক থাকবে এমন একটি বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ-গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়। গত শুক্রবার বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। গত পৌরসভা নির্বাচনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘তোমার আঙ্গুল, আমি টিপে দেব, ওটা হলো সুষ্ঠু ভোট।’
গত ২৮ মে (শনিবার) বাংলাবাজার ১ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারণায় নির্বাচন ও ইভিএমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সামিল বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। পরদিন পুঁইছড়ি ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাকের হোসেন বাচ্চু ‘আমার আছে সরকারি গুন্ডা’ এই ধরনের বেফাঁস বক্তব্য দিয়ে মাঠে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশকে শঙ্কায় ফেলে দেয়। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সরকারি দলের লোক, আমার তো সরকারি গুন্ডা আছে। লাইসেন্সধারী। … নির্দেশ দিলে আমার কাজ করবে।’ মুজিবুল হক চৌধুরীর বক্তব্য আচরণবিধি পরিপন্থী উল্লেখ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে বিধায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন নির্বাচন কর্মকর্তা।
গত শুক্রবার সরল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী লিয়াকত আলী তালুকদারের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলার জন্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী রশিদ আহমদ চৌধুরীর সমর্থকদের দায়ী করা হয়েছে। রশিদ আহমদ স্থানীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের চাচা।
বৃহস্পতিবার নির্বাচনী প্রচারণায় পথসভায় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে আলোচনার জন্ম দেন বাহারছড়া ইউনিয়নের নৌকা দলীয় প্রার্থী তাজুল ইসলাম। তিনি সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের এপিএস হিসেবে পরিচিত। তবে তাজুল গণমাধ্যমের কাছে সেই বক্তব্য অস্বীকার করে বলেন, আমার বক্তব্য এডিট করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের সঙ্গে প্রার্থীদের মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ও পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তারপরও নমনীয় হননি সরকারদলীয় প্রার্থীরা।
নির্বাচন বিশ্লেষক এডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী আরও বলেন, ‘নির্বাচনী এসব হালচাল গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। কিন্তু সরকার ও নির্বাচন কমিশন তা খেয়ার করছেন না। গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষা নির্বাচন এখন কেতাবি কথায় পরিণত হয়েছে। ভোটে এখন মানুষের আস্থা নেই, বিশ্বাস নেই, আগ্রহ নেই। বাঙালিকে বলা হতো ভোটপ্রিয় বাঙালি। এখন চূড়ান্ত অনীহা দেখা দিয়েছে। কারণ সরকারিদলের প্রার্থী অবধারিতভাবে নির্বাচিত হবেন। এই অচলায়তন থেকে ফিরতে হবে।’

পূর্বকোণ/এস 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট