চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

জেটির সিঁড়ি ভেঙে সেই কাদা মাড়ানি-দুর্ভোগ

১৬ মে, ২০২২ | ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ

সৌমিত্র চক্রবর্তী 

ফের এক যুগ আগের দুর্ভোগ ফিরে এলো সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ যাত্রী পারাপারের গুরুত্বপূর্ণ নৌ-পথ কুমিরা গুপ্তছরা ঘাটে। ২০০৮-০৯ ইং সালে কুমিরা থেকে সন্দ্বীপ অথবা সন্দ্বীপ থেকে কুমিরা যাতায়াতকারী যাত্রীদের চলতে হতো সাগরের কাদা মাড়িয়ে। সেসময় কাদা থেকে মুক্তি পেতে দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপবাসীর প্রাণের দাবি ছিলো কদমাক্ত অংশে জেটি নির্মাণ। ২০০৯-১১ সালে সরকার সেই দাবির গুরুত্ব উপলব্ধি করে ৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছিলো ৬৩৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩.৬৫ মিটার প্রস্তের একটি জেটি। ২০১২ সালে তৎকালীন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহাজাহান খান জেটিটি উদ্বোধন করলে সংশ্লিষ্ট যাত্রীরা খুশিতে মাতোয়ারা হন। বলাবাহুল্য সেই থেকে এ রুটের যাত্রীদের আর কাদা মাড়িয়ে চলতে হয়নি। জোয়ার কিংবা ভাটা উভয় পরিস্থিতিতেই যাত্রীরা হেঁটে জেটির শেষ প্রান্তে এসে সিঁড়ি বেয়ে সোজা নৌযানে উঠে বসতেন। ফলে কোনরকম কাদা তাদের স্পর্শ করতে পারেনি। কিন্তু সেই থেকে দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর আবারো সেই কাদা মাড়ানোর যুগে ফিরে এলেন সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপের যাত্রীরা। গত বৃহস্পতিবার এ রুটের বহু কাক্সিক্ষত সেই জেটিটির শেষ প্রান্তে সিঁড়ি সাগড়ে ভেঙে পড়ায় জেটির উপর থেকে আর সিঁড়ি বেয়ে নামা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে জেটির অনেক আগে অবস্থিত ঘাট থেকে ফের প্যান্ট গুটিয়ে কাদা মাড়িয়ে সমুদ্রের জলসীমায় এসে অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। সেখানে নৌযান এসে পৌঁছানোর পর পানি ও কাদা মাড়িয়েই তাদেরকে উঠতে হচ্ছে নৌযানে। ফলে আবারো ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে যাত্রীদের মাঝে। সরেজমিনে গত শুক্রবার সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ রুটের সবচেয়ে ব্যস্ত যাত্রী পারাপারের রুট কুমিরা গুপ্তছরা ঘাটে গিয়ে সংশ্লিষ্ট যাত্রীদের সাথে কথা বলে এসব ক্ষোভের কথা জানা গেছে।

পরিদর্শনকালে দেখা যায়, মাত্র কয়েকদিন আগেও সুদৃশ্য যে জেটি হয়ে প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী আসা যাওয়া করত সেই জেটিটি এখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর শুধু যাত্রী পারাপারই নয়, জেটিটি সাগরের বুক চিরে বহুদূর গিয়ে পানির সাথে মেশায় পড়ন্ত বিকালে এই জেটির উপর দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড় দেখা যেত, এখন সেসব যাত্রীরাও হতাশ।

শুক্রবার বিকাল ৪টায় কুমিরা-গুপ্তছরা ঘাটে কথা হয় সন্দ্বীপের সারিকাইত এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক মো. আলাউদ্দিনের সাথে। জেটির সিঁড়ি ভেঙে পড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা সেই এক যুগ আগে ফিরে গেছি! তিনি বলেন, প্রায় ১০ কোটি টাকায় এই জেটিটি তৈরি করেছিলো সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটি এ। দেখতে সুদৃশ্য হলেও এই জেটির ভেতরের অবস্থা যে ভালো ছিলো না মোটেও তা বোঝা গেল এতদিনে। নইলে এত অল্প সময়ে জেটিটির সিঁড়ি ভেঙে পড়ল কেন ?
এখন কুমিরা গুপ্তছরা ঘাটের জেটির সিঁড়ি ভেঙে অকেজো হয়ে সেই আগের চিত্র ফিরে এসেছে। হাজার হাজার যাত্রীকে আবারো চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। একই কথা বলেন, সন্দ্বীপের হারামিয়ার বাসিন্দা জানে আলমও। তিনি বলেন, আমরা অনতিবিলম্বে জেটিটি সংস্কার করে দুর্ভোগ থেকে সন্দ্বীপবাসীকে মুক্ত করার জোরালো দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে জেটির সিঁড়ি ভেঙে পড়া প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটি এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী শরীফুল ইসলাম বলেন, জেটিটি নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় আমরা ঈদের আগেই যাত্রীদের উদ্দেশ্যে সতর্কীকরণ নোটিশ দিই। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার এটির সিঁড়ি ভেঙে যাওয়ায় চলাচল পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জেটির ৩৬টি পিলারের নিচের মাটি সরে গিয়ে পাইলিং নষ্ট হয়ে গেছে। তবুও যাত্রীদের অসুবিধা দূর করতে আপাতত লোহার পাইপ ও কাঠ দিয়ে সিঁড়ি নির্মাণের চেষ্টা চলছে।

পূর্বকোণ/এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট