চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

মালবাহী গাড়িতে বাড়তি চাকা লাগিয়ে ওজন স্কেল ফাঁকি!

২৬ এপ্রিল, ২০২২ | ১১:০০ পূর্বাহ্ণ

ইফতেখারুল ইসলাম

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওজন স্কেল ফাঁকি দিতে কিছু মালবাহী গাড়িতে অতিরিক্ত চাকা লাগিয়ে পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। এসব গাড়ি ওজন স্কেলের সামনে এলে চাকা সড়কে নামায়, স্কেল পার হয়ে গেলে লিভারের সাহায্যে তা তুলে ফেলে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের চোখের সামনে এঘটনা ঘটলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয় না। এমনকি হাইওয়ে পুলিশ কিংবা বিআরটিএ’কেও ব্যবস্থা নেয়ার কোন অনুরোধ জানায় না তারা।

মূলত পণ্যবাহী গাড়ির ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্যই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন স্কেল বসানো হয়েছে। গাড়িতে চাকার সংখ্যা যতবেশি থাকবে ওই গাড়ির ওজনসীমা তত বাড়বে। অর্থাৎ বেশি ওজনের পণ্য পরিবহন করতে পারবে। এই স্কেলের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। তাদের দাবি হল হয় দেশের সব মহাসড়কে স্কেল বসাতে হবে, নতুবা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে স্কেল তুলে দিতে হবে। এরমধ্যে অভিযোগ রয়েছে স্কেল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বরতদের যোগসাজসে কিছু গাড়ি অনুমোদিত সীমার চেয়ে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন করে। এতে কিছু সংখ্যক অসাধু পরিবহন মালিক লাভবান হচ্ছে। অপরদিকে, সৎ পরিবহন মালিক এবং ব্যবসায়ীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর প্রদত্ত মোটরযানের সর্বোচ্চ ওজন সীমার তালিকায় দেখা যায়, ২ এক্সেল ৬ চাকার গাড়ির ওজনসীমা ২২ টন। ৩ এক্সেল ১০ চাকার গাড়ির ওজনসীমা ৩০ টন, ৪ এক্সেল ১৪ চাকা গাড়ির ওজনসীমা ৪০ টন, ৫ এক্সেল ১৮ চাকার গাড়ির ওজনসীমা ৪৭ টন, ৬ এক্সেল ২২ চাকার ওজনসীমা ৪৯ টন এবং ৭ এক্সেল ২৬ চাকার ওজন সীমা ৫২ টন। প্রথম অতিরিক্ত এক টনের জন্য ৫০০০ হাজার টাকা এবং পরবর্তী টনের জন্য ১০ হাজার টাকা জরিমানা গুণতে হবে।

মিরসরাইয়ের বড় দারোগাহাট এলাকায় স্থাপিত ওজন স্কেল সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, বেশকিছু ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের নিচে চারটি অতিরিক্ত চাকা সংযোজন করা হয়েছে। এসব চাকা এমনিতে সড়ক থেকে কয়েক ইঞ্চি আলগা থাকে। গাড়ি ওজন স্কেলের সামনে এলে চাকাগুলো সড়কে নামানো হচ্ছে। স্কেল পার হয়ে গেলেই তা ফের উপরে তুলে ফেলা হচ্ছে। শুধুমাত্র ওজন স্কেল পার হওয়ার জন্যই এসব চাকা লাগানো হয়েছে। চারটি অতিরিক্ত চাকা লাগিয়ে ২২ টনের স্থলে ৩০ টন পণ্য এবং ১০ চাকার গাড়িতে চারটি চাকা লাগিয়ে ৩০ টনের স্থলে ৪০ টন পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, মূলত অতিরিক্ত চাকা লাগানো গাড়ির মালিকদের সাথে সওজের লোকজনের যোগসাজসেই এসব গাড়ি চলছে।

বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যাান ট্রাক, প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক এসোসিয়েশনের মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহমদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘কিছু গাড়ি আছে অনুমতি নিয়ে অতিরিক্ত চাকা লাগিয়েছে। বাকিগুলো অবৈধভাবে চাকা সংযোজন করেছে শুধুমাত্র ওজন স্কেল পার হওয়ার জন্য। এটা কোনভাবেই উচিত নয়। এক্ষেত্রে যারা ওজন স্কেলের দায়িত্বে আছেন তাদেরও কিছুটা সহযোগিতা আছে। কারণ তারা এই অতিরিক্ত চাকা আর কোথাও ব্যবহার করে না। শুধুমাত্র ওজন স্কেলের সামনে এলে চাকা নামিয়ে স্কেল পার হয়। এরপর আবার ওই চাকা তুলে ফেলে। টাটা কোম্পানিও চায় না এই ধরনের অবৈধ চাকা লাগিয়ে গাড়ি চলাচল করুক। মালিক সমিতির পক্ষ থেকে আমরাও চাই এসব বন্ধ হোক’।

বিআরটিএ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিন) তৌহিদুর রহমান পূর্বকোণকে জানান, যানবাহনে অতিরিক্ত চাকা লাগানোর আগে যে কোম্পানি থেকে গাড়ি কেনা হয়েছে ওই কোম্পানির অনুমোদন লাগবে। তবে বিআরটিএ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেয় কাগজপত্র দেখে। গাড়িতে যতবেশি চাকা থাকবে সড়কের জন্য ততই ভাল উল্লেখ করে বলেন, কেউ যদি শুধুমাত্র ওজন স্কেল ফাঁকি দেয়ার জন্য অতিরিক্ত চাকা সংযোজন করে তা বিআরটিএ’র দেখার সুযোগ নেই। এসব দেখার জন্য হাইওয়ে পুলিশ আছে। তারা যদি আমাদের কাছে তথ্য চায় অথবা অভিযোগ করে তখন তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে।

জানতে চাইলে কুমিল্লা হাইওয়ের পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ পূর্বকোণকে বলেন, অতিরিক্ত চাকা লাগিয়ে ওজন স্কেল পার হওয়ার বিষয়টি দেখে সওজ। তারা রাষ্ট্রের আলাদা একটি বিভাগ। সওজের উপর হাইওয়ে পুলিশের খবরদারি করার কোন সুযোগ নেই। ওজন স্কেলে সওজের দায়িত্বশীল লোক থাকে। তারাই এটা দেখবে।

মিরসরাইয়ের দারোগাহাটে ওজনস্কেলে দায়িত্বরত মো. সালাউদ্দিন যোগসাজসে বেশি ওজনের গাড়ি স্কেল পেরিয়ে যাচ্ছে এমন অভিযোগের বিষয়ে পূর্বকোণকে বলেন, এ অভিযোগ সত্য নয়। কোন গাড়ি ওভারলোডেড গেলে তাকে জরিমানা গুণেই যেতে হচ্ছে। ওজনটা অটোমেটিক আসছে। এখানে ম্যানুয়েল কোন সিস্টেম নেই।

শুধুমাত্র ওজন স্কেলে অতিরিক্ত চাকা ব্যবহার করে অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, গাড়ির চাকা বৈধ-কি অবৈধ তা তাদের দেখার সুযোগ নেই। কারণ স্কেলের উপর কোন গাড়িতে কত চাকা তা কম্পিউটারের মাধ্যমে শনাক্ত হচ্ছে। ওজনটা কম্পিউটারেই উঠে যাচ্ছে। আর গাড়ির চাকা বৈধ-না অবৈধ তা দেখার কর্তৃপক্ষ তারা নন। এজন্য বিআরটিএ এবং পুলিশ রয়েছে।

পূর্বকোণ/এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট